সিরাজগঞ্জে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এক মাছ ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে গাজীপুরের শিরিরচালা এলাকায় আটকে রাখে প্রতিপক্ষ। ওই ঘটনায় পাঁচ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হলে সিরাজগঞ্জের সলংগা থানা পুলিশ তিন জনকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে অপহরণের সঙ্গে জড়িত অন্য এক আসামি অপহৃত মাছ ব্যবসায়ীকে গাজীপুরের জয়দেবপুর থানায় নিয়ে গিয়ে তার নামে প্রতারণা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেন। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দুই থানার কর্মকর্তরা পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন।
সিরাজগঞ্জের সলংগা থানায় দায়ের করা অপহরণ মামলার অপহৃত ব্যক্তি সিরাজগঞ্জের সলংগা থানার শ্রী রামের পাড়া এলাকার অঝিমুদ্দিনের ছেলে আব্দুল মান্নান সরকার (৫৪)। তিনি মাছের আড়ৎদার।
গত ৭ ডিসেম্বর তাকে প্রতিপক্ষের লোকজন অপহরণ করে। অপহরণের পর আব্দুল মান্নান সরকারের ভাই মাহবুব আলম বাদি হয়ে সিরাজগঞ্জের সলংগা থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে, মো. আমজাদ সরকার (৬৫), এরশাদুল ইসলাম (৩০), আবু তালেব (৪৫), আব্দুল মালেক (৪০) ও আবু সুফিয়ানের (২৫) নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৬-৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের সলংগা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনোজিত নন্দী জানান, অপহরণের ঘটনায় মামলা দায়ের হলে তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে অপহৃত ব্যবসায়ীর সন্ধান পাওয়ার পর জয়দেবপুর থানা পুলিশকে বিস্তারিত জানানো হয়। তারা বিষয়টি আমলে না দিয়ে অপহৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে তাকেই জেলে পাঠিয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সিরাজগঞ্জের সলংগা থানার মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান সরকার ব্যবসার জামানত হিসেবে আমজাদ সরকারসহ অন্যদের কাছে এক কোটি ৫০ লাখ ৫ হাজার ৬০০ টাকার চেক দেন। তবে জামানতের চেক দিয়ে তারা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেন।
টাকা ফেরত চাইলে এবং পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আব্দুল মান্নানকে বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিলেন আমজাদ সরকার ও অন্যান্য ব্যবসায়ীরা।
পূর্ব শত্রুতার জের ধরে গত ৭ ডিসেম্বর ভোর সাড়ে ৫ টার দিকে আব্দুল মান্নান সরকার ব্যবসার কাজে কুতুরের চর মাছের আড়তে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ওই সময় আমজাদ সরকারের বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছলে একটি কালো রংয়ের হায়েস গাড়িতে তাকে জোরপূর্বক তুলে নেয়।
সলংগা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মনোজিত নন্দী বলেন, “অপহরণের অভিযোগ পাওয়ার পর প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়া যায়। পরে মামলা হলে সলংগা থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে সেদিনই (৭ ডিসেম্বর) মামলার ৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করে। পরে তারা অপহরণের কথা স্বীকার করলে মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নানকে উদ্ধার এবং মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালানো হয়। এক পর্যায়ে তারা জানতে পারেন অপহৃত ব্যক্তিকে গাজীপুরের জয়দেবপুর থানাধীন শিশিরচালা এলাকায় রয়েছে। পরে বিষয়টি সলংগা থানা থেকে জয়দেবপুর থানার ওসিকে বিষয়টি জানানো হয়।”
তিনি জানান, অপহরণের পরের দিন (৮ ডিসেম্বর) সলংগা থানায় দায়ের করা অপহরণ মামলার আসামি আবু সুফিয়ান নতুন কৌশল অবলম্বন করেন। তিনি স্থানীয় কিছু লোকসহ অপহৃত মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নানকে নিয়ে গাজীপুরের জয়দেবপুর থানায় হাজির হন। অপহরণ মামলার আসামি আবু সুফিয়ান নিজেই বাদী হয়ে মাছ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে একটি প্রতারণার মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ অপহরণ মামলার আসামি আবু সুফিয়ানের মামলায় অপহরণকৃত মান্নানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তারপর থেকে মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান গাজীপুর জেলা কারাগারে আছেন।
সলংগা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মনোজিত নন্দী আরও বলেন, “অপহৃত ব্যক্তির লাস্ট লোকেশন যখন থেকে জানাতে পেরেছি, তখন থেকেই জয়দেবপুর থানার ওসির সঙ্গে হোয়াটঅ্যাপের যোগাযোগ হয়েছে। তারপরও তাকে উদ্ধার না করে কেন তার বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হলো সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।”
জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হালিম বলেন, “সলংগা থানা থেকে আমাকে কোনো বেতার বার্তা দেওয়া হয়নি। কোনো মামলার অভিযোগপত্রও দেওয়া হয়নি। বাদি তাকে (আব্দুল মান্নান) নিয়ে হাজির হয়ে এজাহার দিয়েছেন। তখন থানায় ডিজিএফআইয়ের সদস্য ছিলেন, সমন্বয়ক ছিলেন। এখন সময়টা হচ্ছে কেউ অভিযোগ নিয়ে এলে তাকে ফেরত দেওয়ার সুযোগ নাই। সেই বিষয়ে আমরা একটা মামলা নিয়েছি। তারপরও তথ্য প্রমাণে যেটা পাওয়া যায় পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”