বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত মাগুরা জেলা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা শহীদ মেহেদী হাসান রাব্বির স্ত্রী রুমি খাতুন কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) রাত পৌনে এগারোটার দিকে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি কন্যা শিশুর জন্ম দেন। নবজাতকের আগমনে শহীদ পরিবারে আনন্দের পরিবর্তে বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে। কারণ রাব্বি যখন শহীদ হন তখন তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। রাব্বি দেখে যেতে পারেননি তাঁর সন্তানকে।
গত ৪ আগস্ট মাগুরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গুলিতে মেহেদী হাসান রাব্বি (৩৪) নিহত হন। তিনি জেলা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার বাবার নাম ময়েন উদ্দিন। মাগুরা পৌরসভার বরুণাতৈল গ্রামে তিনি বাস করতেন।
নিহত রাব্বির ভাই ইউনুস আলী জানান, রাব্বির স্ত্রী রুমি খাতুন সন্তানসম্ভবা ছিল। বুধবার রাতে ঘর আলো করে কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছেন রুমি। কিন্তু আফসোস ভাই তার মেয়েকে দেখে যেতে পারল না। তার সন্তানও কোনোদিন বাবাকে দেখতে পারবে না। নবজাতক ও তার মা সুস্থ রয়েছে।
সবার কাছে শহীদ রাব্বির সন্তান, তার মা ও পরিবারের জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন ইউনুস আলী।
৪ আগস্ট মাগুরা-ঢাকা মহাসড়কের পারনান্দুয়ালী ব্যাপারীপাড়া জামে মসজিদ এলাকায় অবস্থান নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা। পাশে ঢাকা রোড বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান নেন পুলিশের সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুলিবিদ্ধ হন মেহেদী হাসান রাব্বি। তাকে উদ্ধার করে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি মারা যান। পরে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার লাশ দাফন করা হয়।
হাসপাতালের পরিচালক মহসিন উদ্দিন বলেন, “ওই দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আহত অবস্থায় ২৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেহেদী হাসান ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন মারা যান। মেহেদীর বুকে ও ফরহাদ হোসেনের মাথায় গুলির আঘাতের চিহ্ন ছিল। দুজনই একই এলাকায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।”
এ ঘটনায় ইউনুস আলী বাদী হয়ে মাগুরার আওয়ামী লীগের সাবেক দুই সংসদ সদস্য (এমপি) সাইফুজ্জামান শিখর, বীরেন শিকদারসহ ১৩ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে রাব্বির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।
মেহেদী হাসান রাব্বির পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমান। ১০ নভেম্বর বিকেলে রাব্বির বাসায় গিয়ে তার শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রতিনিধি দল। এ সময় রাব্বির পরিবারসহ মোট ১০টি শহীদ এবং ১টি আহত পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।
মাগুরা বিএনপির নেতা মিথুন রায় চৌধুরী বলেন, “চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন চলাকালে মাগুরায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে নিহত হন মেহেদী হাসান রাব্বি। ঘাতকের বুলেট সন্তানের কাছ থেকে তার বাবাকে চিরতরে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। রাব্বির পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমান।”