টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে ট্রলার চলাচল শুরু হয়েছে। দুদিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে জরুরি খাদ্যপণ্য ও সেন্টমার্টিনের কিছু বাসিন্দাকে নিয়ে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় দুটি ট্রলার। এতে স্বস্তি ফিরেছে দ্বীপের বাসিন্দাদের মাঝে।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে তিনটি ট্রলার। এসব ট্রলারে খাদ্যসামগ্রী, গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং বেশ কয়েকজন যাত্রী দ্বীপে ফেরেন। একই সময়ে একটি ট্রলার সেন্টমার্টিন থেকে শুঁটকি ও ১৫ জন যাত্রী নিয়ে শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে পৌঁছায়।
ট্রলার মালিক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘‘সেন্টমার্টিন থেকে শুঁটকি ও ১৫ জন যাত্রী নিয়ে শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে এসেছি। তবে, নাফ নদীর নাইক্ষ্যং দিয়ে আসতে পারিনি। বঙ্গোপসাগরের ঘোলারচর দিয়ে আসতে হয়েছে। এতে সময় একটু বেশি লেগেছে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘ট্রলার চলাচল করলে আমরা যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করি। তবে, কিছু সমস্যা এবং বৈরী আবহাওয়ার কারণে ট্রলার চলাচল বন্ধ ছিল। সব স্বাভাবিক থাকায় পুনরায় ট্রলার চলাচল করছে।’’
সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা জানান, টানা দুদিন ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকায় দ্বীপে খাদ্য সংকটের শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। বিশেষ করে শুকনো খাবার, সবজি, ওষুধসহ নিত্যপণ্যের সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় তাদের ভোগান্তি বেড়েছিল।
ট্রলার চলাচল শুরু হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করে সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা মোহাম্মদ আমিন বলেন, ‘‘এক ঘণ্টায় সেন্টমার্টিন থেকে শাহপরীর দ্বীপ জেটিতে পৌঁছলাম। নাফ নদীর পরিবেশ শান্ত থাকলে আরো কম সময় লাগত। তারপরও ট্রলার চলাচল শুরু হওয়ায় ভালো লাগছে। ট্রলার চলাচল না করলে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকে।’’
শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা আবদুর রহমান ইবনে আমিন বলেন, ‘‘জুমার নামাজের পর থেকে জেটিঘাটে অবস্থান করছি। বিকেলে জেটিঘাট থেকে তিনটি ট্রলার পণ্য ও যাত্রী নিয়ে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। সে সময় সেন্টমার্টিন থেকে আরেকটি ট্রলার মাছ ও যাত্রী নিয়ে এই জেটিতে এসেছে।’’
স্থানীয় ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘‘দুই দ্বীপের অন্যতম অর্থনৈতিক ভিত্তি হলো শুঁটকি মাছ। সেন্টমার্টিন থেকে শুঁটকি পরিবহন বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল।’’
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘‘দুদিন বন্ধ থাকার পর গত বৃহস্পতিবার থেকে পণ্য ও যাত্রী নিয়ে ট্রলার চলাচল করছে। এই দ্বীপের বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা সম্পূর্ণ নৌপথের ওপর নির্ভরশীল। তাই নিয়মিত ট্রলার ও যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল নিশ্চিতে কর্তৃপক্ষের আরো মনোযোগ দেওয়া দরকার।’’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘‘নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে ট্রলার চলাচল বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছিল। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ট্রলার চলাচল করছে। তবে, জোয়ারের সময় বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের তত্ত্বাবধানে তারা চলাচল করবে।’’
টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুট দ্বীপের বাসিন্দাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাত ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এই রুটে প্রায়ই নৌযান চলাচল বন্ধ থাকে। যা দ্বীপবাসীর জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
সম্প্রতি মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপ পুরোপুরি দখল নিয়েছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর প্রচার হয়। এমন পরিস্থিতিতে নাফ নদীর সীমান্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় গত ৮ ডিসেম্বর সকাল থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে ট্রলার চলাচল বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।