বাংলাদেশ রেলওয়েতে কর্মরত জামায়াতে ইসলামীর কর্মী-সমর্থকদের ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে এমপ্লয়িজ লীগ’ নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন রাজশাহীর যুবদল নেতাকর্মীরা। তারা এটি আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ভেবে ব্যানার নামিয়ে ফেলেছেন। অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করে ব্যানারটি পা দিয়ে মাড়িয়েছেন। শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাত ১১টার দিকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে এমন ঘটনা ঘটেছে।
অথচ বাংলাদেশ রেলওয়ে এমপ্লয়িজ লীগ জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনভুক্ত সংগঠন। পরে অবশ্য ভুল বোঝাবুঝির অবসান হলেও যুবদলের নেতাকর্মীরা এ নাম পরিবর্তন করার ‘পরামর্শ’ দিয়েছেন। যদিও এ ট্রেড ইউনিয়নের নাম পরিবর্তনের জন্য ইতোমধ্যে আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।
রাতের ওই ঘটনা রাজশাহী মহানগর যুবদলের সদস্য আরিফুজ্জামান সোহেলের ফেসবুক থেকে লাইভ করা হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন যুবদলের নেতাকর্মীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, রেলওয়ে এমপ্লয়িজ লীগ আসলে জামায়াতের কর্মী-সমর্থকদের সংগঠন কিন্তু তারা কোনোভাবেই তা মানছেন না। ‘লীগ’ শব্দ থাকায় তারা বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
ভিডিওতে দেখা যায়, বিজয় দিবস উপলক্ষে ওই ব্যানারটি স্টেশনে টানানো হয়েছিল। সেটি নামিয়ে ফেলা হলে স্টেশন মাস্টার ময়েন উদ্দিন যুবদল নেতা আরিফুজ্জামান সোহেলসহ নেতাকর্মীদের বলছেন, ‘‘জামায়াতে ইসলামীর যারা রেলে চাকরি করেন তাদের সংগঠন এমপ্লয়িজ লীগ।’’ তখন এক যুবদলকর্মী বলেন, ‘‘তাহলে এই যে লীগ, লীগ মানে জামায়াত? তাহলে আওয়ামী লীগ মানে জামায়াত?’’ আরেকজন বলেন, ‘‘এ সংগঠন শুধু এখানেই আছে, না সব জায়গায়?’’
এ সময় আমিনুল ইসলাম নামের একজন ট্রেন চালক বলেন, ‘‘এ সংগঠন সারা দেশেই আছে। এটা ট্রেড ইউনিয়নের নাম। এ লীগ কিন্তু আওয়ামী লীগ না।’’ তখন এক যুবদলকর্মী বলেন, ‘‘জামায়াতের কোনো জায়গায় ‘লীগ’ আছে বলে আমরা জানি না। জামায়াতের হলে জামায়াতই লেখা থাকবে।’’ তখন আরেকজন বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করেন, ‘‘লীগ শব্দের অর্থ দল। এটা আওয়ামী লীগ নয়।’’ কিন্তু যুবদলকর্মীরা তা মানতে পারছিলেন না।
এক যুবদলকর্মী ওই ব্যানারের ওপর উঠে পা দিয়ে লাথি দিতে থাকেন লীগ শব্দটিকে। আমিনুল ইসলাম ও ময়েন উদ্দিন বোঝানোর চেষ্টা করলে যুবদলকর্মীরা তাদের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে যুবদল নেতা সোহেল বলেন, ‘‘এই লীগ যদি জামায়াতেরও হয়, তাহলে তাদের সংগঠনের নাম পরিবর্তন করতে হবে।’’ এরপর তারা সেখান থেকে চলে যান।
যোগাযোগ করা হলে ট্রেনচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘‘সারা জীবন জামায়াত করেও কাল আওয়ামী লীগ করার অভিযোগে মাইর খেতে লাগছিলাম। তারা যে ধরনের আচরণ করেছেন, সেটা তো ভিডিওতেই দেখা যাচ্ছে। বেইজ্জতি হয়ে যাচ্ছিলাম। তাদের তো জানতে হবে।’’
তিনি জানান, আরিফুজ্জামান সোহেলসহ যুবদলের কয়েকজন রেলওয়ে স্টেশনে থাকা হোটেল ইজারা নিয়েছেন। তারা স্টেশনে এসে এমপ্লয়িজ লীগের ব্যানার দেখে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন।
জানতে চাইলে যুবদল নেতা আরিফুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘‘একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গিয়েছিল। পরে জামায়াতের একজন নেতা আমাকে ফোন করে বলেছেন যে এটা তাদের কর্মী-সমর্থকদের সংগঠন। আমরা বলেছি, ‘লীগ’ শব্দ রাখা যাবে না। সংগঠনের নাম পরিবর্তন করতে হবে।’’
বাংলাদেশ রেলওয়ে এমপ্লয়িজ লীগের রাজশাহীর ওপেন লাইন শাখার সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘সংগঠনের নাম পরিবর্তনের জন্য ইতোমধ্যে শ্রম অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু নাম পরিবর্তন খুব সহজ কাজ নয়। এর জন্য তো সময়ের প্রয়োজন।’’
তিনি বলেন, ‘‘নাম নিয়ে তারা যেটা করেছেন, সেটা খুব খারাপ হয়েছে। না জেনে এমন আচরণ করা উচিত না। আমাদের এ সংগঠন বাংলাদেশ রেলওয়ের একমাত্র পুরনো ট্রেড ইউনিয়ন। ১৯৭৪ সালে এ সংগঠনের জন্ম। যুবদলের নেতাকর্মীরা যা করেছেন, সেটা তাদের দলের নেতাদের জানিয়েছি। পাশাপাশি আমরা আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটিকেও জানিয়েছি।’’