সারা বাংলা

তানোরের বিএনপি নেতা মিজানের বহিষ্কার চান নেতাকর্মীরা

রাজশাহীর তানোরের বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিজানের বহিষ্কার দাবি করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফার লিফলেট বিতরণের সময় দলের নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়া এবং তাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করে তারা মিজানের বহিষ্কার দাবি করেন।

মিজান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তানোর পৌরসভার সাবেক এই মেয়র রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল শরিফ উদ্দিনের অনুসারী। 

যারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন তারা অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সুলতানুল ইসলাম তারেকের অনুসারী।

গত রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষণা করা ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ করতে গিয়ে তানোরে ‘হামলার’ শিকার হন তারেক। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে রাজশাহী নগরের অলোকার মোড়ের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তানোরের বাঁধাইড় ইউনিয়ন বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি হুমায়ুন কবির বকুল। এ সময় উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব শামসুল আলম, উপজেলা তাঁতীদলের নেতা বদর উদ্দিন, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহফিজুর রহমান, গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম, চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ৩১ দফার বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যে দেশজুড়ে কর্মসূচি চলমান রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে লিফলেট বিতরণের জন্য সুলতানুল ইসলাম তারেক নেতাকর্মীদের নিয়ে তানোর উপজেলায় যান। তখন সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিজানের নির্দেশনায় তার ভগ্নিপতি তানোর পৌর কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, পৌর বিএনপির সাবেক সংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন তোফা, যুবনেতা জুবাসহ ৮-১০ জন হামলা চালান এবং লিফলেট বিতরণে বাধা দেন। এতে তারেক আঘাতপ্রাপ্ত হন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, হামলার সময় চারটি মাইক্রোবাসের সামনের দিকের কাঁচ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে প্রবীণ বিএনপি সমর্থক ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি বজলুর রহমানের বাবা চোখ ও মাথায় বাঁশের আঘাত পেয়েছেন। হামলাকারীরা সন্ত্রাসী কায়দায় ইট নিক্ষেপ করে নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

হুমায়ুন কবির বকুল বলেন, ‍“তারা এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে শান্ত হয়নি, পুনরায় সাবেক মেয়র মিজানের নির্দেশে লিফলেট বিতরণে যারা অংশগ্রহণ করেছিল তাদের তালিকা করেছেন এবং রাস্তায় কাউকে একা পেলে মারধর করা হচ্ছে। গত সোমবার সকালে আজিজুর রহমান অন্তরকে একা পেলে মারধর করা হয়। হামলায় আহত হয়ে এক ঘণ্টা তিনি অচেতন ছিলেন। বিকেলে ফয়সাল মন্ডল মিঠুন নামের আরেকজনকে মারধরা করা হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, ‘হামলাকারী কৃষক লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব আওয়ামী লীগের সময় বিএনপির বিভিন্ন নেতাকর্মীকে নির্যাতন করেছেন। তিনি বিএনপি নেতা মিজানের ভগ্নিপতি। তাই মিজান তাকে উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক করেছেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে মিজান এলাকায় সরকারি পুকুর ও গভীর নলকূপ  দখলসহ বিভিন্ন অপকর্ম করছেন। তিনি তানোরে আওয়ামী লীগ কাদায় মিজানতন্ত্র কায়েম করার চেষ্টা করছেন।”

সংবাদ সম্মেললে বলা হয়, হামলার ঘটনায় পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তারা এখন জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটির কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দেবেন। তারা সাবেক মেয়র মিজানুর রহমানসহ হামলাকারী অন্যদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিজান বলেন, “হামলার দিন আমি ঢাকায় ছিলাম। কারা হামলা করেছে সেটা আমি জানতামই না। রাজনৈতিক কারণে আমাকে জড়িয়ে তারা এ ধরনের সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সব অভিযোগ ভিত্তিহীন।’ 

তিনি দাবি করেন, তাঁর ভগ্নিপতি হাবিবুর রহমান হাবিব কোনোদিন কৃষক লীগ করেননি। তিনি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। তিনিও কোন হামলায় অংশ নেননি।