সারা বাংলা

শৈশবের হারিয়ে যাওয়া খেলনা টমটম গাড়ি

আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য মাটি আর বাঁশের কাঠি দিয়ে তৈরি টমটম গাড়ি। যদিও এখনো গ্রাম-বাংলার মেলায় শিশুদের খেলনা রং-বেরঙের টমটম গাড়ি বা টরটরি গাড়ি দেখা যায়। কালের বিবর্তনে আধুনিক যুগে প্লাস্টিকের তৈরির বিভিন্ন খেলনার আবিষ্কারে মাটির তৈরি খেলনা আজ বিলুপ্তের পথে। 

এক সময় চৈত্র-বৈশাখ মাসের দিকে গ্রামে বসত বিভিন্ন মেলা। আর সেসব মেলায় রং-বেরঙের নানান রকমের মাটির তৈরি খেলনার দোকান বসত। আর এরমধ্যে টমটম গাড়ি ছিলো শিশু-কিশোরদের পছন্দের। 

ছোট ঠেলাগাড়ির আদলে তৈরি এই টমটম খেলনা। গাড়ির ওপরে মাটির একটি বাটি শক্ত কাগজে মোড়া। এতে দুটো কাঠি বসানো থাকে। গাড়ির আগা সুতো দিয়ে বাঁধা। ছোট ছেলে-মেয়েরা গাড়িটি টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় কাঠি দুটি মাটির বাটিতে বাড়ি খায়। আর টমটম করে শব্দ হয়। এ জন্যই নাম টমটম গাড়ি।

এদিকে দিনাজপুরের হিলিতে টমটম গাড়ি ফেরি করে বিক্রি করতে দেখা গেলো জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের বাসিন্দা সাগর মিয়াকে। কথা হয় তার সাথে। এ সময় তিনি জানান, বর্তমানে বিভিন্ন রকম প্লাস্টিকের তৈরি খেলনার কারণে সেকালের খেলনা দিয়ে কেউ আর খেলতে চায় না। তবুও জীবিকার তাগিদে এবং পুরনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে টমটম গাড়ি ফেরি করে বিক্রি করছি। মেলার মৌসুমে কিছুটা ভালো বেচা-বিক্রি হলেও সারা বছর তেমন হয় না। তাই জীবিকার তাগিদে ফেরি করে বিভিন্ন জেলায় টমটম গাড়ি বিক্রি করছি।

তিনি আরো জানান, একটি গাড়ি বিক্রি করছেন ২০ টাকা করে। একটি টমটম গাড়ি তৈরি করতে তার খরচ হয় ৮ থেকে ১০ টাকা। দিনে প্রায় ৭০ থেকে ৮০টি গাড়ি বিক্রি করেন তিনি। এতে তার লাভ হয় দিনে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। ফেরি করে বিক্রি করায় অনেকের চোখে পড়ে। অনেকের পুরনো স্মৃতি মনে করে বাড়িতে ছেলে-মেয়েদের জন্য কিনে নিয়ে যান। 

হিলি গোডাউন মোড়ে টমটম গাড়ি কিনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন রেজাউল করিম নামে এক ব্যক্তি। এ সময় কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, “অনেক দিন পর মাটির তৈরি টমটম গাড়ি চোখে পড়লো। মনে পড়ে গেলো শৈশবের অনেক স্মৃতি। তাই বাড়ির বাচ্চাদের জন্য দুইটা গাড়ি কিনলাম। বর্তমান যুগের ছেলে-মেয়েরা এসব গাড়ির কদর বুঝবে না। এই গাড়ির সাথে আমার অনেক স্মৃতি লুকিয়ে আছে।”

 

স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, “আমরা ছোট বেলায় বাবার সাথে মেলায় গিয়ে নানা রকম খেলনা কিনতাম। সে সময় টমটম গাড়িই ছিলো আমাদের প্রথম পছন্দের। আজ অনেক দিন পর টমটম গাড়ি দেখে হারিয়ে যাওয়া দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেলো। তাই আমার ছেলের জন্য একটা গাড়ি কিনলাম।” 

এ সময় টমটম গাড়ি ব্যবসায়ী সাগর মিয়া বলেন, “আমার বাড়ি আক্কেলপুরে, আমি প্রায় ৩০ বছর ধরে এই টমটম গাড়ি বিক্রি করে আসছি। আগের দিনে বিভিন্ন মেলায় এই গাড়ি চাহিদা ছিলো আলাদা। এখন মেলাতে তেমন আর বিক্রি হয় না। প্লাস্টিকের খেলনার কাছে এই মাটির তৈরি টমটম গাড়ির চাহিদা ফুরিয়ে গেছে। কিন্তু কি করবো, পুরনো ব্যবসা ছাড়তে পারি না। তাই জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন স্থানে ফেরি করে আজও এই গাড়ি বিক্রি করে বেড়াচ্ছি।”