সারা বাংলা

মীর মশাররফ হোসেনের ১১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বাংলা সাহিত্যের অমর দিকপাল, ঔপন্যাসিক, ঊনবিংশ শতাব্দীর বাঙালি মুসলিম সাহিত্যিকদের পথিকৃৎ, ‘বিষাদ-সিন্ধু’র’ রচয়িতা সাহিত্য সম্রাট মীর মশাররফ হোসেনের ১১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর)।

বাংলা ভাষার অন্যতম এই প্রধান গদ্যশিল্পী মীর মশাররফ হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকী ঘিরে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার পদমদীতে মীর মশাররফ হোসেনের সমাধিতে উপজেলা প্রশাসন, মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র, মীর মশারফ হোসেন কলেজ, মীর মশাররফ হোসেন সাহিত্য পরিষদ, মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি সংসদসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। এছাড়াও দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, কালজয়ী ঔপন্যাসিক সাহিত্য সম্রাট মীর মশাররফ হোসেনের আজ ১১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। মহান এই মনীষীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। এরমধ্যে বালিয়াকান্দির পদমদিতে শায়িত মীর মশাররফ হোসেনের সমাধীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। তার আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। 

কালজয়ী সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন ১৮৪৭ সালে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলা লাহিনীপাড়া গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সৈয়দ মীর মুয়াজ্জম হোসেন ও মায়ের নাম দৌলতন নেছা। তিনি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী নবাব স্টেটে বসবাস করতেন। এখানেই তিনি ১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। পরে পদমদীতে তাকে সমাহিত করা হয়। এখানে তার স্মৃতি রক্ষার্থে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে পদমদীতে মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকেই মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কমপ্লেক্সটির যাত্রা শুরু। 

তিনি ছিলেন বঙ্কিমযুগের অন্যতম প্রধান গদ্যশিল্পী ও উনিশ শতকের বাঙালি মুসলমান সাহিত্যিকদের পথিকৃৎ। তিনি তার বহুমুখী প্রতিভার মাধ্যমে উপন্যাস, নাটক, প্রহসন, কাব্য ও প্রবন্ধ রচনা করে বাংলা সাহিত্যে আধুনিক যুগে মুসলিম রচিত সমৃদ্ধ ধারার প্রবর্তন করেন।

কারবালার বিষাদময় ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘বিষাদ সিন্ধু’ তার শ্রেষ্ঠ রচনা। কারবালার করুণ ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে রচিত এই উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। তার সব গ্রন্থ বাদ দিলেও মাত্র এই একখানি গ্রন্থ রচনার জন্য তাকে বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ লেখক আখ্যায়িত করা যায়।

বঙ্কিমচন্দ্রের দুর্গেশনন্দিনী (১৮৬৫) উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার চার বছর পর মশাররফের প্রথম উপন্যাস রত্নবতী (১৮৬৯) প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি একে একে কবিতা, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, আত্মজীবনী, পাঠ্যপুস্তক ইত্যাদি বিষয়ে বহু গ্রন্থ রচনা করেন। মীর মশাররফ হোসেনের মোট ৩৬টি বইয়ের সন্ধান পাওয়া যায়।

তার রচনা হলো: গোরাই-ব্রিজ অথবা গৌরী-সেতু (১৮৭৩), বসন্তকুমারী নাটক (১৮৭৩), জমিদার দর্পণ (১৮৭৩), এর উপায় কি (১৮৭৫), বিষাদ-সিন্ধু (১৮৮৫-১৮৯১), সঙ্গীত লহরী (১৮৮৭), গো-জীবন (১৮৮৯), বেহুলা গীতাভিনয় (১৮৯৮), উদাসীন পথিকের মনের কথা (১৮৯০), তহমিনা (১৮৯৭), টালা অভিনয় (১৮৯৭), নিয়তি কি অবনতি (১৮৮৯), গাজী মিয়ার বস্তানী (১৮৯৯), মৌলুদ শরীফ  (১৯০৩), মুসলমানদের বাঙ্গালা শিক্ষা (দুই ভাগ ১৯০৩, ১৯০৮), বিবি খোদেজার বিবাহ (১৯০৫), হজরত ওমরের ধর্মজীবন লাভ (১৯০৫), মদিনার গৌরব (১৯০৬), বাজীমাৎ (১৯০৮), আমার জীবনী (১৯০৮-১৯১০), আমার জীবনীর জীবনী বিবি কুলসুম (১৯১০) ইত্যাদি।