যশোরের অভয়নগর উপজেলার মাঠ জুড়ে যেন হলুদগালিচা বিছানো। যে দিকে চোখ যায়, মনে হয় হলুদ সাজে সেজেছে ফসলের মাঠ। এ যেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলা ভূমি। যেখানে সরিষার ফুলে বাতাসের দোলায় দোল খাচ্ছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ উপজেলায় ভালো ফলন হয়েছে বলে জানান কৃষি অফিস। ভোজ্য তেলের আমদানি কমাতে চাষিদের সরিষার আবাদে উৎসাহী করা হয়েছে বলেও জানানো হয়।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ১ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমি চাষযোগ্য থাকলেও সরিষার আবাদ করা হয়েছে ১ হাজার ৩৪০ হেক্টরে।
জানা গেছে, উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের কোদলা, বাহিরঘাট, পালপাড়া, পাকেরগাতি, দেয়াপাড়া, মথুরাপুর, ফকির বাগান, মরিচা, চাকই, পাইকপাড়া, সিঙ্গেড়ী, ভাটপাড়া, বাঘুটিয়া, এক্তারপুর ও ফকিরহাট এলাকার মাঠগুলোতে সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে। অন্যদিতে ভবদহের সুন্দলী, পায়রা, চলশিয়া ও প্রেমবাক ইউনিয়ন এলাকায় জলাবদ্ধতা থাকার কারণে সরিষার আবাদ তেমন হয়নি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন ধরনের তেলবীজের মধ্যে কৃষকরা প্রধানত সরিষা চাষ করেন। এবার ধানের দাম কম পাওয়ায় কৃষকরা বোরোর বদলে সরিষা আবাদে জোর দিয়েছেন। শীত বেশি পড়ায় এবার উপজেলায় সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে ফলন বাড়ানোর জন্য এবার বিএডিসি উন্নত মানের উচ্চফলনশীল জাতের সরিষা বীজ কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করেছে। এসব বীজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে বারি-১৪, ১৫, ১৭, বিনা-৯ ও সম্পদ জাত। এছাড়া কৃষি প্রণোদনার আওতায় কৃষকদের সারও বিতরণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেশির ভাগ সরিষা খেতে ফুল এসেছে, ফলও আসছে। চাষিরা বলছে বিঘা প্রতি ৪-৭ মন সরিষা উৎপাদন হলে লাভবান হবেন তারা।
অন্যদিকে সরিষার ভাল ফুল আসায় সেখানে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মৌয়ালদের আসতে দেখা যায়, তারা সেখানে খাঁচায় মৌ-চাষ করে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে।
ফসলি খেতের পাশে মৌমাছির শত শত বাক্স সারি করে বসিয়েছেন মৌয়ালরা। ওই সব বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি উড়ে গিয়ে সরিষা ফুলের মাঠ থেকে মধু সংগ্রহ করছে। অন্যদিকে দেখা যায়, মৌয়ালরা মৌ বাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, “চাষ সফল করতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি গ্রহণের পাশাপাশি সরিষা সংরক্ষণে ব্যাগ বিতরণ করা হয়েছে। কৃষি প্রণোদনার আওতায় কৃষকদের সরিষা বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। সরেজমিন চাষিদের কাছে গিয়েছি এবং বিভিন্ন এলাকার সরিষার খেত দেখেছি। পরিদর্শন শেষে রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন দপ্তরে পাঠিয়েছি। আশা করছি সরিষার ফলন ভালো হবে।”
তিনি আরো বলেন, সরিষা খেতে মৌমাছির বিচরণ থাকায় ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হয়, ফলে সরিষার ফলনও হয় বেশি। এবার মৌয়ালরা নির্বিঘ্নে মধু সংগ্রহ করছে। এখন সরিষা চাষিরা মৌয়ালদের বাঁধা না দিয়ে সহযোগিতা করে। সরিষা চাষিদের ও মৌ বাক্স স্থাপনকারীদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এক একটি মৌমাছির খাঁচা থেকে বছরে প্রায় ৫০ কেজি মধু আহরণ করা সম্ভব হবে এবং তাদের মধু সংগ্রহে সকল প্রকার সহযোগীতা আমরা প্রদান করবো।