সারা বাংলা

উন্নয়ন প্রকল্পে পিআইওর লুটপাট, নীরব প্রশাসন

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা সবজি চাষে বিখ্যাত। এ উপজেলার বায়রা ইউনিয়নের সবজি চাষি ফজর আলী। সারা বছর চাষ করেন বিভিন্ন ধরনের সবজি। তার উৎপাদিত সবজি গ্রাম পেরিয়ে চলে যায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। দাম ভালো পাওয়ার পরেও প্রায়ই তাকে লোকসান গুণতে হয়। শুধুমাত্র গ্রামের রাস্তাগুলোর উন্নয়ন না হওয়ায় তার পরিবহন খরচ হয় কয়েকগুণ। নিজ খরচে চাষিরা চাঁদা তুলে রাস্তা মেরামত করেও এ লোকসান পোষাতে পারছেন না। 

বায়রা ইউনিয়নের চরভাঙ্গা এলাকার চাষিরা এভাবেই সবজি চাষে লোকসানে পড়েছেন। স্থানীয়দের ভাষ্য, এমন তো হওয়ার কথা নয়। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস কোটি কোটি টাকা খরচ করে। তাহলে কেন বায়রা ইউনিয়নের চরভাঙ্গা এলাকায় এমন বেহাল দশা? সাধারণ মানুষের এমন প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি।

রাইজিংবিডির অনুসন্ধানে মিলেছে, সিংগাইর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইউজিপিপি প্রকল্পের আওতায় চারাভাঙ্গা এলাকায় আফাজ উদ্দিনের দোকান হতে জয়নালের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ কাজে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। 

প্রকল্পের নিয়মানুযায়ী, দৈনিক ৪০০ টাকা মজুরিতে ২০ জন শ্রমিক কাজ করবেন। এতে একদিকে গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের আয়ও হবে, অন্যদিকে রাস্তা নির্মাণে এলাকাবাসীর সুফল মিলবে। কিন্তু, অভিযোগ উঠেছে- নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ইউজিপিপি), প্রকল্প সভাপতি ভেকু মেশিন দিয়ে কোনোরকম মাটি ফেলে বিল তুলে নিয়েছেন।

অনিয়ম আর দুর্নীতির মাত্রা এ পর্যন্ত থাকলেও কিছুটা ভাগ্যের চাকা সচল হতো ফজর আলীর মতো চাষিদের। কিন্তু, সিংগাইর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আহাদী হোসেন এ রাস্তায় আবারো ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রকল্প বরাদ্দ দেন। ভিন্ন প্রকল্প থেকে একই রাস্তায় ভিন্ন নামে প্রকল্প বরাদ্দ দিয়ে পুরোটাই লুটপাট করেন বলে অভিযোগ।

প্রকল্পের নামে আফাজ উদ্দিনের দোকান হতে জয়নালের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের জায়গায় চারাভাঙ্গা নতুন মসজিদ হতে চরচারাভাঙ্গা হক মাস্টারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ দেখিয়ে তুলে নেওয়া হয়েছে এক লাখ টাকা।

চাষিদের ভাষ্য, প্রথম প্রকল্পে ভেকু দিয়ে ২-৩ দিন কাজ করলেও পরেরবার একদিন কোনোরকম খোয়া-বালু ফেলা হয়েছে। ওই খোয়া-বালু ফেলতে চাষিদের কাছ থেকেও চাঁদা নেওয়া হয়েছে।

ওই এলাকার চাষি হুমায়ুন মিয়া বলেন, “প্রায় ৩০ বছর ধরে চরচারাভাঙ্গা এলাকাটি অবহেলিত। জনপ্রতিনিধিদের কাছে গিয়েও রাস্তা সংস্কার করা যায়নি। যা বরাদ্দ আসে তার সিকিভাগ কাজও হয় না। নিজেরাই চাঁদা তুলে রাস্তা মেরামত করি।”

অপর চাষি মোতালেব মিয়া বলেন, “বছর খানেক আগে ভেকু নামাইলো। কোনো রকমে মাটি দিয়া চইলা গেলো। তহনি বুঝছি ঠিকমতো কাম করে নাই। আমরা চাষি মানুষ। আমাগো তো কাউরে কউনের কিছু নাই। এই বছর আমাগো কাছ থাইক্যা ট্যাহা নিয়া রাস্তা করা অয়ছে। এই বছরেও সরকারি ট্যাহার কাম করে নাই।”

এমন ঘটনা শুধু বায়রা ইউনিয়নের চারাভাঙ্গা এলাকায় ঘটেনি- সিংগাইর উপজেলার প্রতিটি এলাকায় টিআর, কাবিখা, কাবিটা, ইউজিপিপিসহ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের প্রতিটি প্রকল্পেই এমন অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। এসব প্রকল্প যার তদারকি করার কথা- সেই পিআইও আহাদী হোসেন ঘুষ নিয়ে এসব প্রকল্পের বিল দিয়েছেন বলে অভিযোগ। ফলে প্রকল্পগুলোতে আংশিক বা কোনোরকমে কাজ করে বিল তুলে নিয়েছেন প্রকল্প সভাপতিরা।

চান্দহর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য ও প্রকল্প সভাপতি দিন ইসলাম বলেন, “কত টাকা বরাদ্দ থাকে সেটিও জিজ্ঞেস করি না। যে টাকা আমাকে দেয় তাই দিয়ে অন্তত আমার ওয়ার্ডে সঠিকভাবে কাজ করার চেষ্টা করি। আমরা যারা জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়া মেম্বার-চেয়ারম্যানই করতে আসছি, পিআইও অফিসের অতিরিক্ত ঘুষ বাণিজ্যের কারণে আমরা কীভাবে কাজটা বাস্তবায়ন করব তা নিয়া বিপাকে থাকি। প্রকল্প সভাপতিদের ওপর থেকে পিআইও অফিসের ঘুষের মাত্রা কমানো উচিত।”

সিংগাইর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসূচির (ইউজিপিপি) প্রথম পর্যায়ে ৩৮টি প্রকল্পে এক হাজার ছয় জন শ্রমিক নিয়ে রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কারের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পরে দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩৯টি প্রকল্পে এক হাজার ছয় জন শ্রমিক নিয়ে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।

অনুসন্ধান বলছে, বেশির ভাগ প্রকল্পে শ্রমিকদের দিয়ে কাজ না করিয়ে কোনোরকমে ভেকু দিয়ে কাজ করে বিল তুলে নেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো প্রকল্পে শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হলেও শ্রমিকের সংখ্যা বেশি দেখিয়ে বিল তোলা হয়েছে। 

জামশা ইউনিয়নের মাটিকাটা মুকলেছের বাড়ি হতে মতি মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ, সায়েস্তা ইউনিয়নের শ্রীপুর ইসরাফিলের জমি হতে মাজেদের জমি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ, ধল্লা ইউনিয়নের দক্ষিণ ধল্লা ইনদার বাড়ি হতে চরপাড়া যাওয়ার রাস্তা পুনর্নির্মাণ, চান্দহর ইউনিয়নের চর মূলবর্গ নতুন ব্রিজের নিকট হতে তাছের সরদারের বাড়ির নিকট পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ, তালেবপুর ইউনিয়নের কাংশা রহেজ উদ্দিনের বাড়ি হতে কলাবাগান পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণসহ একাধিক প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে।

জামসা ইউনিয়নের বালুরচর এলাকার শ্রমিক সাইদুর মিয়া বলেন, “আমার একটু শারীরিক সমস্যা আছে। এলাকার সরকারি কামে মাটি কাইট্যা সংসার চালাই। কামের সময় মেম্বাররা প্রতি শনিবার আর মঙ্গলবারে ট্যাহা হাতে দেয়। একটা সিম আছে। ওইড্যা চালাই না। ওই সিমে ট্যাহা আইলে মেম্বারগো তুইলা দিয়া দেই। কয়দিনের ট্যাহা সরকার দেয়, কয়দিনের লিগ্যা দেয় তা তো জানি না। হুনছি অফিসাররা আমাগো সব ট্যাহা দেয় না। আর অনেক জায়গায় ভেকু দিয়া কাম করনে কাম কইম্যা গেছে।”

অপর শ্রমিক আমেলা বেগম বলেন, “বয়স তো ষাইটের উপরে হইয়া গেছে। স্বামীডাও বাঁইচা নাই। গাও গেরামে মাটি কাইটা চলি। মেম্বারগো মাটি কাটলে দিনে ৩৫০ ট্যাহা কইরা দেয়। সব মিলাইয়া বছরে পনের বিশ দিন কাম করি। এখন আর আগের মতোন কাম নাই। হগলেই ভেকু দিয়া কাম করে।”

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আহাদী হোসেনের সাথে এসব প্রকল্পের দেখভালের দায়িত্বপালন করেছেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ইউজিপিপি) মো. নুরুজ্জামান। ইউজিপিপি প্রকল্পগুলোর দেখভালের নামে পিআইওর সঙ্গে যোগসাজশ করে তিনিও ঘুষ বাণিজ্যে লিপ্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ।

অভিযোগ রয়েছে, শুধুমাত্র ইউজিপিপি প্রকল্পে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ থাকলেও উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ইউজিপিপি) মো. নুরুজ্জামান অন্যান্য প্রকল্পও তদারকি করেন। পিআইও আহাদী হোসেনের আস্থাভাজন হওয়ায় প্রায় সকল প্রকল্প থেকে ঘুষ গ্রহণ করেন তিনি।

ইউজিপিপি প্রকল্পের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান বলেন, “যেসব প্রকল্পে ভেকু দিয়ে কাজ করা হয়েছে সেগুলোর বিল দেওয়া হয়নি।” 

ভেকু দিয়ে কাজ করার পরও বিল দেওয়া হয়েছে মাঠ পর্যায়ের প্রমাণাদি আছে জানালে তিনি বলেন, “ভেকু দিয়ে কাজ করার কথা না।”

শ্রমিকদের ভুয়া নাম, নম্বর ব্যবহার করে টাকা উত্তোলন ও প্রকল্প সভাপতিদের কাছ থেকে ঘুষ আপনি নিয়ে থাকেন এমন অভিযোগ রয়েছে জানালে তিনি বলেন, “এসব অভিযোগ সত্য নয়।” 

এছাড়া টিআর, কাবিখা, কাবিটাসহ সকল প্রকল্প থেকে উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগের বিষয়টি তিনি ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেন।

বায়রা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য দেওয়ান তছলিম উদ্দিন আক্ষেপের সুরে বলেন, “ইউজিপিপি প্রকল্পগুলো না থাকাই ভালো। সরকার মনে হয় এসব প্রকল্প বন্ধ করে দিবে। শ্রমিকদের বিল আমরা জমা দিলেও পিআইও অফিস থেকে বিল পাওয়া যায় না। কিছু বিল পাওয়া গেলেও প্রায় অর্ধেক বিল পাওয়া যায় না। এসব বিল সিন্ডিকেট মিলে লুটপাট করে ফেলে।”

বলধারা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আক্কাস আলী বলেন, ‘‘পিআইও আহাদী রাস্তাঘাটের প্রকল্প থেকে ঘুষের টাকা ঠিকমতো নিলেও মসজিদ-মাদ্রাসার প্রকল্প থেকে ঘুষের টাকার জন্য তেমন জুলুম করেন না।’’

সিংগাইরে সরকারিভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীরনিবাস নির্মাণে ঠিকাদার শ্রমিক লীগ নেতা নাজিমুল ইসলাম জামালের বিরুদ্ধে পরিবহন, মাটি ভরাট ও ইট বাবদ টাকা দাবির অভিযোগ করেন এক মুক্তিযোদ্ধা। ২০২৩ সালে উপজেলার বাস্তা এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ছফর উদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। 

মুক্তিযোদ্ধা ছফর উদ্দিন বলেন, “বীর নিবাসের বিষয়ে ইউএনওর কাছে অভিযোগ করে দুর্গতি বেড়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি, তারা হুমকি ধামকি দেয়। অভিযোগের পর বীরনিবাসের কাজ টুকটাক করে দিলেও তা সম্পন্ন হয়নি। এখনো বীরনিবাসেন ঘরে উঠতে পারিনি। যাদের কারণে আমার এই সমস্যা তাদের কোনো বিচার হয়নি, অভিযোগ করে কোনো লাভ হয়নি।”

অভিযোগ রয়েছে, পিআইও আহাদী হোসেনের সঙ্গে ঠিকাদারের সখ্যতা থাকায় ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি প্রশাসন। এছাড়া ওই বছরের আগস্ট মাসে আশ্রয়ণ ২ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণস্থলে মাটি ভরাট প্রকল্পে ৭৯ মেট্রিকটন খাদ্যশস্য (গম) আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। ওই সময়ে খাদ্য শস্যের বাজার মূল্য ছিল প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। এমন অভিযোগের বিষয়েও প্রশাসনের দৃশ্যমান কার্যক্রম দেখা যায়নি।

জেলা প্রশাসক ড. মো. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, “সিংগাইর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া, ৭৯ মেট্রিকটন শস্যের অনিয়ম বা বীরনিবাস প্রকল্পে অনিয়ম হয়ে থাকলে সে বিষয়েও খোঁজ খবর নেওয়া হবে। যদিও আমার দায়িত্ব গ্রহণের আগে বিষয়টি ঘটেছে। তারপরও এমন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

চলতি বছরের ৯ নভেম্বর রাইজিংবিডিতে ‘প্রকল্প তদারকির আড়ালে ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ পিআইও আহাদীর বিরুদ্ধে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাথী দাসের নজরে আনা হয়। তবে, প্রতিবেদন প্রকাশের পরও কার্যত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি তিনি। তার ভাষ্যমতে, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিলে তিনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন।” 

বিষয়টি সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মো. কামরুল হাসান সোহাগের নজরে আনা হলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

এ বিষয়ে ইউএনও মো. কামরুল হাসান সোহাগ বলেন, ‘‘মুক্তিযোদ্ধা সফরের বীরনিবাস ও গম আত্মসাতের বিষয়টি আমার কর্মকালীন সময়ের না। তারপরও এ বিষয়টিসহ সকল বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব।”

পিআইওদের অনিয়ম ও দুর্নীতির খোঁজ রাখা হয় কি না বা অভিযোগ উঠলে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয় এমন বিষয় জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম বলেন, “প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অনিয়ম করে থাকলে তার দেখভাল করবেন সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউএনও ও জেলা প্রশাসন। এছাড়া অধিদপ্তরের মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষণ অনুবিভাগও বিষয়গুলো দেখে থাকেন।”

এ ব্যাপারে পরিবীক্ষণ অনুবিভাগের সহকারী পরিচালক রমজান আলীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ‘বিষয়টি প্রশাসনিক’ বলে এড়িয়ে গিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। পরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজাওয়ানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সিংগাইর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের ইউজিপিপি প্রকল্পের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান বলেন, “সিংগাইর উপজেলার ইউজিপিপি প্রকল্পগুলো তিন বছর ধরে দায়িত্বে আছি।” 

তবে ইউজিপিপি প্রকল্পগুলোতে শ্রমিকদের না নিয়ে ভেকু দিয়ে কোনোরকমে মাটি ফেলে বিল তোলা ও প্রকল্পগুলোতে অনিয়ম করা হয়েছে এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকেন। পরে একাধিকবার তাকে ফোন করলেও তিনি আর ফোন ধরেননি।

সিংগাইর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আহাদী হোসেন এ বিষয়ে বলেন, “প্রকল্প সভাপতিরা নিজেরা সুবিধা নিতে না পারায় এমন কথা বলে বেড়ান। কোনো প্রকল্প থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। সকল প্রকল্প পরিদর্শন করে ঠিকঠাক পাওয়ার পর বিল দেওয়া হয়েছে।”

মানিকগঞ্জ জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর মো. ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, “প্রশাসনের নীরবতায় পিআইও আহাদীর দুর্নীতি ও অনিয়মের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রকল্পগুলোর আংশিক বাস্তবায়ন হওয়ায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তাদের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এমন বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পরও তদন্ত না হওয়া দুঃখজনক। ওই পিআইওর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।”

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সিনিয়র সহ-সভপাতি ইকবাল হোসেন কচি বলেন, “পিআইও নিজেই অনিয়ম করেন। তার এমন কর্মকাণ্ডে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরাও অনিয়ম করেন। কেউ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। ফলে পিআইও’র জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয় না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশকারায় এমন দুর্নীতির ঘটনা ঘটছে। জনগণ এমন দুর্নীতির প্রতিকার চান।”

মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, “এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তিনি আরো বলেন, “উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের নজরদারিতে রাখা জেলা ও ত্রাণ পুনর্বাসন কর্মকর্তার রুটিন ওয়ার্ক। তবে ওই কর্মকর্তা অসুস্থতার কারণে দেশের বাইরে থাকায় দায়িত্বে অন্য একজন কর্মকর্তা আছেন।”