খুলনা নগরীতে প্রায় শতাধিক ইজিবাইকে করে ‘দৈনিক সাদিকা র্যাফেল ড্র’ নামে চলছে রমরমা লটারি বাণিজ্য। ২০ টাকা দিয়ে টিকিট কিনলে পুরষ্কার হিসেবে পালসার মডেলের মোটরসাইকেল দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। এতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর খুলনায় ফের চালু হয়েছে র্যাফেল ড্র নামের জুয়ার এ লটারি। ২৩ ডিসেম্বর থেকে লটারির টিকিট বিক্রি করতে দেখা গেছে নগরীতে। স্থানীয়রা বলছেন, র্যাফেল ড্র’কে লটারি বলা হলেও এটি এক ধরনের উন্মুক্ত জুয়া।
এদিকে, লটারির আড়ালে এ ধরনের জুয়া বন্ধের দাবিতে ইতোমধ্যে খানজাহান আলী থানা ইমাম পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এমনকি ২০ ডিসেম্বর তৌহদী জনতার ব্যানারে মানববন্ধন করেছেন বিভিন্ন মসজিদের মুসল্লি ও মাদ্রাসার ছাত্ররা। কিন্তু এতে বন্ধ না হয়ে আয়োজকদের তৎপরতা আরো বেড়েছে।
এর আগেও বিভিন্ন দলের নেতাদের সাথে কথা বলে খুলনার বিভিন্ন এলাকায় র্যাফেল ড্র চালু করতেন। সাধারণ মানুষ প্রতারিত হওয়ায় প্রতিবারই এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। আর প্রতিবারই বিক্ষোভ হলে লটারির বন্ধ করে দিতো কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ ২০২৩ সালে বটিয়াঘাটায় এমন লটারির আয়োজন হয়েছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর গিলাতলা বালুর মাঠে গত ২৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী মিনি বাণিজ্য ও আনন্দ মেলা। মেলার বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে প্রতি রাতে র্যাফেল ড্রয়ের কথা প্রচার করা হচ্ছে। সেখানে সার্কাস ও বিনোদন জোন নামে পৃথক জোন চালু করা হয়েছে। সেলিম খান নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি মেলা পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন।
খানজাহান আলী থানা বিএনপির সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান বলেন, “পুরষ্কারে মোটরসাইকেলের কথা প্রচার করে এরা শহর-গ্রামেগঞ্জে লাখ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি করছে। রিকসা, ভ্যানচালক, কুলি-মজুর সারাদিন যা আয় করে, সবাই বিকাল থেকে সেখানে লাইন দিয়ে টিকিট কিনছে। এরপর নিঃস্ব হয়ে রাতে বাড়ি ফিরছে। এটা বন্ধ করতে না পারলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা র্যাফেল ড্র-বন্ধের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এর সঙ্গে জড়িত। তারা কথা শুনছে না।”
থানা জামায়াতের সভাপতি সৈয়দ হাসান মাহমুদ টিটো বলেন, “নিম্ন আয়ের মানুষকে টার্গেট করে এসব আয়োজন করা হয়েছে। আমরা মুসল্লিদের নিয়ে মিছিল করেছি, স্মারকলিপি দিয়ে এসব আয়োজন বন্ধ করতে বলেছি। তারাও আশ্বাস দিয়েছিলেন, কিন্তু কাজ হচ্ছে না।”
এ বিষয়ে মেলার আয়োজক সেলিম খানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মেলার স্থানে তিনি ছিলেন না। বার বার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
মেলার আয়োজন ও নগরজুড়ে ইজিবাইকে করে টিকিট বিক্রি সম্পর্কে জানতে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দারকে ফোন করা হলে তিনিও ধরেননি।
স্থানীয় খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন বলেন, “মেলায় জুয়ার কোনো অনুমোদন নেই। তবে র্যাফেল ড্র’র লটারির টিকিট বিক্রির বিষয়টি অবগত আছি।”
এ সময় মেলার অনুমতির বিষয়ে তিনি পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারেননি।