সারা বাংলা

কুয়াশা মোড়ানো শীতের সকালে খেজুর রসের স্বাদ

দিনাজপুরে এখন ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীত। সময়টা এখন খেজুর রসের। গাছিরা খেজুর গাছ থেকে নামাচ্ছে  সুস্বাদু মিষ্টি রস। টাটকা রসের স্বাদ পেতে প্রচণ্ড শীত আর কুয়াশা উপেক্ষা করে ভোরবেলা খেজুর রস খাওয়ার জন্য শহরের বিভিন্ন মহল্লায় প্রতিদিনই ভিড় করছে মানুষ।

গ্রামীণ রাস্তার দুই পাশে সারি সারি খেজুর গাছ। প্রতিদিন ভোর থেকে গাছে ঝুলে থাকা রসের হাঁড়িগুলো নামিয়ে আনেন গাছিরা। এ সময় নিচে অপেক্ষা করেন টাটকা রসের স্বাদ নিতে আসা নানা বয়সী লোকজন। খেজুরের রস শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভিড় লেগেই থাকে।

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে হিলি শহরের বিভিন্ন মহল্লায় দেখা যায়, একজন গাছি খেজুর রসের হাঁড়ি কাঁধে ঝুলিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। আর লোকজন গ্লাসে গ্লাসে টাটকা মিষ্টি রস পান করছেন। প্রতি গ্লাস রস ১০ টাকা, আবার এক কেজি রসের দাম ৪০ টাকা। অনেকেই নিজে খেয়ে পরিবারের জন্যও নিয়ে যাচ্ছেন।

খেজুরের রস ও রস পিঠাসহ খেজুরের গুড় বাঙালির পুরনো ঐতিহ্যবাহী খাবার। শীতের আগমনের পর টাটকা মিষ্টি রসের স্বাদ নিতে আসেন নানা বয়সী লোকজন। অন্যদিকে গাছিরা ভোর থেকে গাছ থেকে রস নামানো শেষ হলে ছুটেন বাজারের দিকে। কারন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রসের স্বাদও কমে যায়। 

কথা হয় রসের স্বাদ নিতে আসা নাহিদা আক্তারের সাথে। তিনি বলেন, “শীতের সকাল, টাটকা খেজুরের রস খেতে ভারি মজা। রসের নেশা আমার পিছু ছাড়ে না। তাই শীত আসলেই রস খুঁজে বেড়াই। ছোট বেলা থেকেই খেজুরের রস খেতে আমার অনেক ভালো লাগে। খেজুর রসের স্বাদই আলাদা। এই রসের যে একটি মিষ্টি গন্ধ আছে, যেটি অন্য কোনো রসে নেই। ১০ টাকা করে ২ গ্লাস খেলাম।”

রস কিনছিলেন ইয়াসিন আলী নামে আরেক ব্যক্তি। তিনি বলেন, “শীতের সকালে ছোট বেলায় নিজেদের গাছের রস বড় গ্লাসে করে নিয়ে মুড়ি দিয়ে ভিজিয়ে খেতাম। এখন কিনে খেতে হচ্ছে। ৪০ টাকা কেজি দরে বাড়ির জন্য ৫ কেজি রস নিলাম।”

 

এ সময় কথা হয় গাছ থেকে রস নামানো আবু বক্কর সিদ্দিকের সাথে। তিনি বলেন, “আমার বাড়ি আক্কেলপুরে। শীত আসলেই হিলির রেললাইনে খেজুরের গাছ থেকে রস নামাই। এটা আমার বাপ-দাদার ব্যবসা। বছরে ছয় মাস এই ব্যবসা করে পুরো বছর চলি।” 

তিনি আরো বলেন, “এই শীত মৌসুমে আমি ৩০টি খেজুর গাছ থেকে রস পাচ্ছি। প্রতিদিন এসব গাছ থেকে ৬০ থেকে ৭০ কেজি রস নামাই। ভোর বেলা থেকে রস নামাতে থাকি, তা আবার বেলা বাড়ার আগে বিক্রি করে শেষ করি। এ থেকে দিনে ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকার রস বিক্রি করি। এ আয় দিয়ে আমার সংসার চলে।”