ফেনীর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ফলেশ্বর এলাকা থেকে মাসুদা বেগম নামে ষাটোর্ধ এক বৃদ্ধা নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ওই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বিএনপি নেতা গোলাম ফারুকের ভাই গোলাম কিবরিয়া বকুলের বাসার সোফার নিচ থেকে বৃদ্ধার গলাকাটা মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত মাসুদা বেগম ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পিঠাপাশারী এলাকার মোস্তফা ভূঁঞা বাড়ির সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী। তিনি গত ৮ বছর ফারুক কমিশনার বাড়িতে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করছিলেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, গোলাম কিবরিয়া বকুলের ঘরে কাজ করার জন্য গত সোমবার মাসুদা বেগমকে ডেকে আনা হয়। গত ৪ দিন তিনি সে ঘরেই ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক পৌনে ৯ টার দিকে বাড়ির লোকজন বকুলের ঘরের সোফার নিচে গলাকাটা অবস্থায় ওই নারীর মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার করলে আশেপাশের বাসিন্দারা ছুটে আসেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ও ঘটনার তদন্তে নামে।
ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ৯ টা ১৩ মিনিটে কালো প্যান্ট ও সাদা চেক শার্ট পরিহিত অজ্ঞাত এক যুবক ওই ভবনে প্রবেশ করছে। আবার ৯ টা ১৭ মিনিটে ভবন থেকে দৌড়ে বের হতে দেখা যায় ওই যুবককে। নিহতের পরিবারের দাবি এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। অজ্ঞাত যুবককে আইনের আওতায় আনা গেলে হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
নিহত মাসুদার পুত্রবধূ রাহেনা আক্তার বলেন, “রাত আনুমানিক সাড়ে ৯ টার দিকে ফারুক কমিশনারের স্ত্রী আরজু আমাকে মোবাইল করে ১০ মিনিটের মধ্যে তাদের বাড়িতে যেতে বলেন। বার বার কারণ জিজ্ঞেস করলেও তারা আমাদের কিছু বলেননি। পরে এখানে এসে দেখি গোলাম কিবরিয়া বকুলের ঘরের সোফার নিচে তার রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে আছে।”
রাহেনা আরও বলেন, “আমার শাশুড়ি গত ১৭ বছর এই এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করে আসছেন। গত ৮ বছর ধরে তিনি ফারুক কমিশনার বাড়িতে কাজ করেন। গত সোমবার ফারুক কমিশনারের ভাই ঝন্টু আমার শাশুড়িকে ডেকে আনেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকেও ওই বাড়ির সামনে তার সাথে আমার শেষ কথা হয়। তিনি শুক্রবার বাড়িতে যাবেন বলেছিলেন। কিন্তু রাতেই এ ঘটনা ঘটে।”
কান্নারত নিহতের মেয়ে শাহেনা আক্তার রুনা বলেন, “আমার মাকে আমার কাছে আনি দেন। এটা পরিকল্পিতভাবে হত্যা। বাড়ির সকল লোকজন থাকা অবস্থায় আমার মাকে কিভাবে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।”
নিহতের নাতি ইউসুফ বলেন, “বাড়ির মালিকরা বলছে বাসায় চুরি করতে এসে এক লোক আমার নানীকে জবাই করে ফেলে রেখে গেছে। আমি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করছি।”
ফেনী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম ফারুক বলেন, “রাত সাড়ে ৯ টার দিকে আমার ছোট ভাইর বউ আমাকে কল করে বলে, ভাইয়া তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসেন, বাড়িতে চোর-ডাকাত ঢুকেছে। তখন আমি ও আরও কয়েকজন দৌড়ে বাড়িতে এসে দোতলার ঘরের দরজা খুলে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় লাশ পড়ে আছে। এরপর পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে আলামত সংগ্রহ করে ঘটনার রহস্য উদঘাটন কাজ শুরু করে।”
ফারুকের ছোট ভাই ঝন্টুর স্ত্রী সোনিয়া আক্তার বলেন, “আমরা ভবনের তৃতীয় তলার বাসায় ছিলাম। হঠাৎ আওয়াজ শুনে নিচে এসে দেখি দোতলার বাসার দরজা বন্ধ। মাসুদা বুয়া মাসুদা বুয়া বলে ডাকাডাকি করেও কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে চোর বা ডাকাত সন্দেহ করে বাড়ির বড়দের জানানোর জন্য উপরে উঠতেই পিছন থেকে দরজা খুলে দৌড়ে একজন লোককে চলে যেতে দেখি। এরপর নিচে এসে দেখি আমাদের কাজের বুয়া মাসুদার রক্তাক্ত মরদেহ। দেখে ভয়ে উপরের তলায় এসে বাড়ির মুরব্বীদের ফোন করে বাড়িতে আসতে বলি।”
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্ম সিংহ ত্রিপুরা বলেন, “রাত সাড়ে ৯ টার দিকে প্রথমে সংবাদ পাই এ বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। এরপর শুনি এক মহিলার গলাকাটা লাশ পড়ে আছে। তাৎক্ষণিক আমরা ঘটনাস্থলে এসে ভবনের দোতলার সামনের কক্ষে মরদেহ দেখে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবগত করেছি। পিবিআই ও সিআইডি টিম ঘটনার বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ ও তদন্তের কাজ শুরু করে। সিসিটিভি ফুটেজের অজ্ঞাত যুবককে শনাক্তের কাজ চলছে।”