বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলালসহ তার পরিবারের চার সদস্যকে ভারতে পালাতে সহযোগিতা করেছেন যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা বলে অভিযোগ করেছেন যশোর জেলা যুবদলের সদ্য বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক এসকেন্দার আলী জনি।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) ফেসবুক লাইভে এসে ও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এমন অভিযোগ করেছেন তিনি। অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তদন্তের অনুরোধ জানান।
আরো পড়ুন: যশোরে যুবদল ও বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার
গত ১৭ ডিসেম্বর নিজ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে যশোর জেলা যুবদলের প্রচার সম্পাদক এসকেন্দার আলী জনিকে বহিষ্কার করা হয়।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এসকেন্দার আলী জনি তার ফেসবুকে লেখেন, “১৩ সেপ্টেম্বর বেলা আড়াইটার দিকে যশোর জেলা যুবদলের সেক্রেটারি আনসারুল হক রানা , মাদক সম্রাট শহীদের সহায়তায় পুটখালি ঘাট দিয়ে শেখ হেলালসহ পরিবারের ৪ সদস্যকে মোটা অংশকের টাকার বিনিময়ে পার করে দিয়েছে সেটা গোয়েন্দার কাছে তথ্য আছে।”
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে এসকেন্দার আলী জনি ফেসবুক লাইভ করেন। লাইভের শিরোনামে তিনি লিখেছেন, “সঠিক তদন্ত চাই, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জননেতা জনাব তারেক রহমানের কাছে বরাবর। আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ওবায়দুল কাদেরকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন যশোর জেলা যুবদলের সেক্রেটারি, সাংবাদিক সম্মেলন করা হবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করুন অরজিনাল অপরাধীদের শান্তি দিন।”
ফেসবুক লাইভে ২৭ মিনিটের ভিডিওতে এসকেন্দার আলী জনি অভিযোগ করেন, “যশোর ক্যান্টনমেন্টে লুকিয়ে ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ৫ তারিখের পর তাকে ভারতে পালাতে সাহায্যে করেছেন যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা। কিছু দিন আগে সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক। বেনাপোলের পুটখালির গোল্ড নাসিরের সঙ্গে (সিঙ্গাপুরে) টাকা ভাগাভাগি হয়েছে।’
তিনি বলেন, “ঘাট শহিদকে ধরলে এতথ্য পাওয়া যাবে। শুধু ওবায়দুল কাদের নয়; আওয়ামী লীগের বহু নেতাকে ভারতে যেতে সাহায্য করেছেন যশোর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা। এতথ্য সব নেতাই জানে। এখন যশোর যুবদল দেখলে মনে হবে যুবলীগ হেঁটে যাচ্ছে। যশোর জেলা যুবদলের সভাপতি তমাল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা দলকে যুবলীগে পরিণত করেছেন।”
ফেসবুক লাইভে তিনি আরো বলেন, “আমি রাজপথে মার খেয়েছি, আমার ভাই মার খেয়েছে। আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রের কারণে পরিবারসহ জেল খেটেছি। আমি ১৭ বছর ধরে নির্যাতনের শিকার ও ত্যাগী নেতা হয়েও আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমি আন্দোলন সংগ্রাম করবো; ত্যাগী নেতাদের কেন বহিষ্কার করা হচ্ছে। যুবদলের নেতাকর্মী জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে বিএনপি পার্টি অফিসের সামনে মিছিল করেছে। ভিডিওসহ নেতৃবৃন্দের জানানো হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
এসকেন্দার আলী জনি বলেন, “গোপনে যশোর জেলা যুবদলের সভাপতি তমাল আহমেদ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথের সঙ্গে মদের ব্যবসা করেন। যুবদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মিলে যুবলীগের সন্ত্রাসীদের দলে নিয়ে এসেছেন। যারা বিএনপি অফিস ভাঙচুর করেছে, দলের নেতাদের ছবি ভাঙচুর করেছে, তারা এখন যুবদলে। এখন যুবদলের সভাপতি-সম্পাদক বলছেন ৫/৭ কোটি টাকা খরচ করে কমিটি নিয়ে আসবেন।”
বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক এসকেন্দার আলী জনি নিজেই ফেসবুক লাইভের বক্তব্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে সঠিক তদন্ত ও প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি এবং তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান।
যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা বলেন, “এসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্যই এসকেন্দার আলী জনিকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি শুধু আমাকে নয়, যুবদলের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি দুই জনের নামেই দীর্ঘদিন ধরে এসব বলে আসছেন। তিনি সুস্থ নন। আপনারাও তদন্ত করে দেখেন, তিনি (ওবায়দুল কাদের) কোন দিক দিয়ে কোথায় গেছেন। একজন একটা কথা বললেই তো হবে না। এতদিন ধরে রাজনীতি করলাম, খোঁজ খবর নিয়ে দেখেন আমরা কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কি-না?”