সারা বাংলা

ময়মনসিংহে কাওয়ালী অনুষ্ঠানের পর মাজারেও ভাঙচুর

ময়মনসিংহে হযরত শাহ্সুফী সৈয়দ কালু শাহ (রাঃ)-এর মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও সামা কাওয়ালী অনুষ্ঠানে হামলা ভাঙচুরের পর মাজারেও হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। 

বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাত ১১টার দিকে নগরীর থানার ঘাট এলাকায় অনুষ্ঠান চলাকালীন হামলা-ভাঙচুর চালায় মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর রাত তিনটার দিকে মাজারে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে তারা।   পীর বাবা খলিলুর রহমান চিশতী নিজামী বলেন, “বুধবার হযরত শাহ্সুফী সৈয়দ কালু শাহ (রাঃ)—এর ১৭৯তম ওরস উপলক্ষে মাগরীবের পর মিলাদ করা হয়। মিলাদ শেষে ঠিক থানা গেটের সামনে সামিয়ানা টানিয়ে সামা গানের আয়োজন করা হয়। সেখানে অনেক ভক্ত আশেকান জড়ো হন। রাত ১১টার দিকে ওসি সাহেব সেখানে গিয়ে তাড়াহুড়া করে গান—বাজনা বন্ধ করতে বলেন। তাৎক্ষণিকভাবে সবকিছু বন্ধ করে দেয়া হয়। বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকশ’ মাদ্রাসার ছাত্র এসে সব ভেঙে চুরমার করে দেয়। পরে রাত তিনটার দিকে ছাত্ররা আবারও মাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।” 

তিনি আরও বলেন, “আমরা খুব সুখে ছিলাম। দেড়শ’ বছরের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটেনি। আমরা এখানে অন্যায় কিছু করিনি। তারা এসব না ভেঙে বললেই পারতো সবকিছু বন্ধ করে দিতাম। এখন বিচার চাওয়া ছাড়া আমাদের কিছু করণীয় নেই। সঠিক বিচার হোক এটাই আমাদের চাওয়া।”

আলম চিশতী বলেন, “দীর্ঘ বছর ধরে আমরা সামা কাওয়ালী অনুষ্ঠান করে আসছি। ওসি সাহেব যখন বললেন অনুষ্ঠান বন্ধ করার জন্য তখনি আমরা বন্ধ করে দেই। তারপরে কেন হামলা, ভাঙচুর চালিয়ে লুটপাট করা হলো? থানার সামনে আমাদের ওপর এমন ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আল্লাহর ওলী আওলিয়ারাই মানুষকে দ্বীন ও ধর্মের দাওয়াত দিয়েছেন। আমরা তো কোনো ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড করিনাই।”   শিল্পী মিজান বাউলা বলেন, “৪৫ বছর ধরে হযরত শাহ্সুফী সৈয়দ কালু শাহ (রাঃ)-এর মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও সামা কাওয়ালী অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। কোনদিন এমন হয়নি। আমি যখন ইসলামিক গান পরিবেশন করছি তখন বড় মসজিদ মাদ্রাসার একদল হুজুর এসে হামলা ও ভাঙচুর শুরু করে। আমাদের কয়েকজন আহত হয়। ভাঙচুর করা হয় প্লাস্টিকের চেয়ার, সাউণ্ড সিষ্টেম এবং মঞ্চ। এ ঘটনায় আমরা আতংকিত হয়ে পড়েছি। থানার সামনে এমন ঘটনা কখনো কাম্য ছিল না। পরে মাজারেও হামলা হয়েছে। প্রশাসন বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিলে এমন ঘটনা আরও বাড়বে।”

জামিয়া ফয়জুর রহমান রহ: মোমেনশাহী বড় মসজিদ মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক শহীদুল ইসলাম বলেন, “ছাত্ররা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে পড়াশোনায় মনযোগী। তারা রাত ১টা পর্যন্ত পড়াশোনা করে। থানার গেটের সামনে উচ্চ শব্দে গান—বাজনা ও মেয়েদের নাচ হচ্ছিলো। তা কানে আসায় শিক্ষার্থীরা মেনে নিতে পারেনি। পরে কয়েকজন শিক্ষার্থী গিয়ে তা বন্ধ করে দেয়। বন্ধ করে দিয়ে আসার সময় দুয়েকজন শিক্ষার্থীকে স্থানীয়রা মারধর করে হুমকি দিয়েছিল। পরে রাগে—ক্ষোভে শিক্ষার্থীরা মাজারেও কিছুটা ভাঙচুর করেছে। তবে সে বিষয়টি সকালে অবগত হয়েছি। আমরা শিক্ষার্থীদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। এমন ঘটনায় তারা যেন আর না জড়ায়।”

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম খান বলেন, “জামিয়া ফয়জুর রহমান রহ: মোমেনশাহী বড় মসজিদ মাদ্রাসার ছাত্ররা কাওয়ালী অনুষ্ঠান ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। চেয়ার-মঞ্চ ভাঙচুর করা হলেও কেউ আহত হয়নি।”   “পরে আবার রাত তিনটার দিকে গিয়ে ছাত্ররা মাজারে ভাঙচুর করেছে, এখনও পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি” বলেন তিনি।