সারা বাংলা

রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুতে জেটি না থাকায় দুর্ভোগে দর্শনার্থীরা

রাঙামাটির পর্যটন শিল্পের আইকন ঝুলন্ত সেতু। যেখানে প্রতিবছর ঘুরতে আসেন লক্ষাধিক পর্যটক। সেতুটির লাগোয়া কোনো জেটি না থাকায় নৌ-বিহারে ঘুরতে আসা পর্যটকদের পড়তে হচ্ছে দুর্ভোগে। এছাড়াও নৌযানে ওঠা-নামা করতে গিয়ে দুর্ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছেন অনেকে।   

১৯৮০ সালে ২৮ একর জায়গা নিয়ে পর্যটন কমপ্লেক্সের যাত্রা শুরু হয়। তবে প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছর কেটে গেলেও এখনো পর্যটক ভোগান্তি কমেনি এই স্থাপনায়। জেটি না থাকায় পাহাড়ের ঢালে নোঙ্গর করতে হয় নৌযান। ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে সেতুতে আসেন পর্যটকরা। এতে প্রায় সময় আহত হন তারা। রাঙামাটির পর্যটনের আইকনের এমন দুরবস্থায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন পর্যটকরা। 

ঝুলন্ত সেতুতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতু এলাকায় বোট ভেড়ানোর কোনো জেটি না থাকায় পাহাড়ের ঢালেই করতে হয় নোঙ্গর। সেখানে চলাচলে নেই কোনো রাস্তা। সামান্য কিছু অংশে বালুর বস্তা ফেলে রাস্তা করা হয়েছে। বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নিয়ে ঢালু পাহাড়ের গা বেয়ে এসে উঠতে হয় ঝুলন্ত সেতুতে। এতে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নারী, বৃদ্ধ ও শিশুদের। প্রায়ই পা ফসকে আহত হন পর্যটকরা। অথচ এই স্থানে নোঙ্গর করার জন্য বোট প্রতি ১০০ ও পর্যটক প্রতি ২০ টাকা করে ফি আদায় করে পর্যটন করপোরেশন। ঘাটের এমন বেহাল দশায় ক্ষুব্ধ পর্যটকরা। 

ঢাকা থেকে ঘুতে আসা শহিদুল ইসলাম বলেন, “বোট থেকে নেমে আমার সন্তানকে কোলে নিয়ে ঝুলন্ত সেতুতে গেলাম। যাওয়ার রাস্তাটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। একে তো ঢালু, তার ওপরে প্রচুর বালু থাকায় বেশ কয়েক বার পড়ে যাবার উপক্রম হয়েছিল। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। রাঙামাটি মূল আকর্ষণের স্থানটির এমন বেহাল দশা দেখে হতাশ হলাম। এটি সংস্কারে জোর দাবি জানাচ্ছি।”

 

শরীফ হোসন নামে এক ব্যক্তি বলেন, “রাঙামাটির ৫-৭টি স্পট ঘুরে এখানে এলাম। সব স্থানই মোটামুটি ভাল। কিন্তু এখানে এসে বোট থেকে নামার যে স্থান দেখলাম তাতে হতাশাই বাড়লো। এটা কোনো ঘাট হতে পারে না। একটা জেটি ও সিঁড়ি পর্যন্ত করেনি পর্যটন করপোরেশন। অথচ আমারা জনপ্রতি ২০ টাকা দিয়ে টিকেট কাটতে হচ্ছে। এতো ঝুঁকি নিয়ে আমরা কেন আসবো এখানে।” 

বোট চালক ইদ্রিস মিয়া বলেন, “আমরা পর্যটক নিয়ে এই ঘাটে আসি। যেখানে পর্যটক নামার কোনো জেটি নেই। তারপরও বোট ভেড়ালেই ছোট বোটের জন্য ৫০ ও বড় বোটের জন্য ১০০ টাকা টোল পরিশোধ করতে হয়। হেঁটে যাবার সময় অনেক সময় পর্যটকরা স্লিপ কেটে পড়ে যান। এগুলো দেখার কেউ নেই। কর্তৃপক্ষ তো আমাদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন।” 

এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, “ঘাটের সংস্কারের জন্য আমাদের উর্ধ্বতন পর্যায়ে জানানো হয়েছিল। সেখান থেকে জানানো হয়েছে এটি সংস্কারের জন্য কোনো বরাদ্দ দেয়নি। তাই আমি স্থানীয় সংস্থা রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে আবেদন পাঠিয়েছি। আশা করছি যে কোনো একটি প্রতিষ্ঠান এই বিষয়ে উদ্যোগ নিবে।” 

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার বলেন, “আমাদের পরিষদ নতুন দায়িত্ব নিয়েছে। আমরা চাই না এখানে বেড়াতে এসে কোনো পর্যটক বিপাকে পড়ুক। তাই বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।” 

তিনি আরো বলেন, “এখানে কোনো শেড নেই, ওয়াশ রুম নেই, সেগুলোও আমরা বিবেচনায় রেখেছি। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই দ্রুতই এসব কাজে হাত দেওয়া হবে।”