ক্যাম্পাস

এক রূপকথার নাম সুপ্তি

মির্জা ওবায়দুর রহমানের ‘চঞ্চলতা’ কবিতায় বলা হয়েছে ‘দুরন্ত দুর্বার চঞ্চল মন/ফুটন্ত উড়ন্ত চলন্ত সারাক্ষণ’। কবি বুঝি সুপ্তিকে দেখেই লিখেছিলেন লাইন দুটি। কথা হচ্ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী সেই সুপ্তি দাস চৈতির সাথে। জানালেন তার সাফল্য, স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা।

মায়ের হাত ধরেই মূলত কবিতা আবৃত্তি শেখা সুপ্তির। এরপর নিয়মিত অনুশীলন করে কবিতা আবৃত্তিতে নিজেকে করেছেন প্রস্তুত। এতে তার দক্ষতার ঝুলি ভারী হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে স্বীকৃতিও পেয়েছেন। দ্বিতীয় শ্রেণিতে আবৃত্তির জন্য প্রথম পুরস্কার পান। সেই শুরু। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এখন পর্যন্ত শতাধিক পুরস্কার পেয়েছেন আবৃত্তি ও উপস্থিত বক্তৃতায়।

কবিতার সাথে জীবনের অনেকগুলো বসন্ত পার করা অভিজ্ঞ সুপ্তির জীবনের অনেকটা জুড়েই বসবাস করেছে ছন্দের জাদু। সেই জাদু ছড়িয়ে দিতেই ত্রিলোক বাচিক পাঠশালা-সহ বিভিন্ন আবৃত্তি সংগঠনগুলোতে বিচারকের আসন অলংকৃত করেন সুপ্তি। তিনি জানান, আবৃত্তি নিয়েই তার থাকার ইচ্ছা। ত্রিলোক বাচিক পাঠশালার মাধ্যমে মানুষের কাছে আবৃত্তি শিল্পটি পোঁছানোই তার মূল লক্ষ্য।

বই পড়তেও অসম্ভব ভালোবাসেন সুহাসিনী এই মেয়েটি। ছোটবেলায় মামার উপহার দেয়া পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের ‘বাঙালির হাসির গল্প’ বইটির মাধ্যমেই তার বই পড়ার হাতেখড়ি। এরপরে বইয়ের নেশা আর ছাড়তে পারেননি। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সদস্য হয়ে, এমনকি বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করেও বই পড়ার তৃষ্ণা মিটিয়েছেন কখনো কখনো। বিভিন্ন ঘরানার লেখা পড়লেও সুপ্তির পছন্দ হুমাইয়ুন আজাদ এবং আহমেদ ছফার বই। এই বই কেনার নেশা তাকে পেয়ে বসেছিল। সুযোগ পেলেই বই কেনেন। প্রিয়জনদের বই উপহার দিতেও সুপ্তির সুনাম আছে।

বই পড়া ও আবৃত্তির পাশাপাশি মঞ্চ নাটকের প্রতিও রয়েছে তার আগ্রহ। কবিতা ও মঞ্চ নাটকের যৌথ সমন্বয়ে নতুন ধরনের প্রযোজনা নিয়ে কাজ করতে চান সুপ্তি।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী সুপ্তির ইচ্ছা সমাজের উন্নয়নশীল খাতগুলোতে কাজ করে দেশকে এক সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যাওয়া। সেই লক্ষ্যে এখন থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করছেন তিনি। বর্তমানে আছেন গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের একজন সক্রিয় সেচ্ছাসেবক হিসেবে।

সুপ্তি দাস চৈতীর খুব প্রিয় একটি গুণ রয়েছে। সেটি ভালোবাসা। তার সমবয়সী থেকে শুরু করে বড় বা ছোট সকলকেই তিনি এক অপরিসীম ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছেন। তাই পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে সুপ্তি এক রূপকথার নাম, ভালবাসার প্রতীক।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

ঢাবি/হাকিম মাহি