বাংলাদেশ মানেই নদীমাতৃক দেশ। ঢাকা মানেই বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষা, বালু নদী। এই নদীগুলোর সেই খরস্রোত এখন নেই, কিন্তু দখলকারীদের দখলস্রোত নদীগুলোকে সংকুচিত করতে করতে অনেকটা খালে পরিণত করেছে। কোনোভাবেই নদী দখল ঠেকানো যাচ্ছে না।
নদী দখল ঠেকাতে সরকারের অনন্য উদ্যোগের মুখোমুখি দখলদাররা সবসময় মুদ্রার ওপিঠের মতো আচরণ করছে। এরই মাঝে বেসরকারি সংগঠন ‘ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ’ সাহসিকতার সঙ্গে নদী নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে দখল দারিত্বের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে।
দূষণবিরোধী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়ামের অ্যাডভোকেসি প্রকল্পের আয়োজনে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজন করেছে রিভার টকি/নদী কথন। মঙ্গলবার (২২ জুন) ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকার খাগাইল দূর্গামন্দির ঘাটে নদী কথনের এই আয়োজন করা হয়েছে।
এবারের আয়োজনটি ছিল একটু ব্যতিক্রম। আলোচনার বিষয় ছিল, ‘শিল্পী, শিল্প ও সংস্কৃতিতে নদীর প্রভাব’। গাঙ্গেয় অববাহিকায় গড়ে ওঠা বাংলাদেশের যে ইতিহাস ও সংস্কৃতি বুড়িগঙ্গার তীরে গড়ে উঠেছিল শিল্প ও সাহিত্যের চোখে, তার আলোকপাত করেছেন এ অঙ্গনের ব্যক্তিরা। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক ছিলেন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক এবং ব্ল-প্ল্যানেট ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক শরীফ জামিল।
অতিথি ছিলেন অভিনেতা হাসান মাসুদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক নাজমুন নাহার কেয়া, দৈনিক ‘প্রথম আলো’র ফটোএডিটর আবির আব্দুল্লাহ মুক্তাদির ইবনে সালাম। এছাড়াও নদীদূষণ রোধে কাজ করা স্থানীয় কমিউনিটি ভিত্তিক একাধিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন। এ আয়োজনে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।
অতিথিরা বলেন, যে বুড়িগঙ্গা একদিন আমাদের ঢাকাবাসীর প্রাণ ছিল, সেই বুড়িগঙ্গাকেই গলাটিপে হত্যা করছি আমরা। এভাবেই নদীর সাথে বিলীন হয়ে যাচ্ছে আমাদের ঢাকার সংস্কৃতিও। বাউলশিল্পী শাহ আব্দুল করমি, শাহানুর তাদরে জীবন হাওরে কাটিয়ছেন। বাংলাদশ যখন পাকিস্তানের অংশ ছিল, তখন ওই সময়কার ছবিগুলো তৈরি হতো নদীকেন্দ্রিক। এখন নদীভিত্তিক কাজ কমে আসছে।
বক্তারা আরও বলেন, এখন নদীভিত্তিক কাজের মোট একশতাংশ হয় নদীকে কেন্দ্র করে। নদীকে কেন্দ্র করে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কাজের পরিধি বাড়ানোর তাগিদ দেন তারা।
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক এবং ব্ল-প্ল্যানেট ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক শরীফ জামিল বলেন, পৃথিবীর ইতিহাস মানেই নদীর ইতিহাস। প্রতিটি সভ্যতা গড়ে উঠেছে নদীকে কেন্দ্র করেই। সেই নদীকে আমরা ধ্বংস করে ফেলছি অবলীলায়। আমাদের বাঁচাতে, ঢাকা শহর বাঁচাতে, সভ্যতা বাঁচাতে বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতেই হবে আমাদের। ঢাকার নদী ঢাকার প্রাণ, ঢাকা বাঁচাতে বুড়িগঙ্গা বাঁচান।
উল্লেখ্য, দূষণবিরোধী শক্তিশালী প্রচেষ্টা তৈরি করতে ইউএসএআইডি, এফসিডিও এবং কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের সহায়তায় দূষণবিরোধী অ্যাডভোকেসি প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্ল-প্ল্যানেট ইনিশিয়েটিভের (বিপিআই) অন্তর্ভুক্ত সংগঠন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ এবং বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রকে (ক্যাপস) সাথে নিয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম গঠিত হয়েছে।