চীনের রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা ও সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে বেইজিং বিশ্ব খ্যাত। এ শহরে দেশের শ্রেষ্ঠ মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রয়েছে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় বাছাইয়ের সময় বেইজিংয়ের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রথম পছন্দ করেন। আর বিদেশি শিক্ষার্থীরাও চীনে লেখাপড়া করতে চাইলে বেইজিং থাকে তাদের প্রথম পছন্দ।
বেইজিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন র্যাংকিংয়ের ভিত্তিতে সর্বশেষ শীর্ষ দশটি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে- পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়, ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়, চীন রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়, বেইজিং নরমাল বিশ্ববিদ্যালয়, পেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়, চীনের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বেইজিং ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, বেইজিং চিয়াওথোং বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বেইজিং, বেইজিং ইউনিয়ন মেডিক্যাল কলেজ।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চীনের ‘২১১ প্রকল্প’ ও ‘৯৮৬ প্রকল্পের’ আওতায় চালু হয়। ‘২১১ প্রকল্প’ হলো ২১ শতাব্দীতে প্রধান ১০০টি গুরুত্বপূর্ণ উচ্চ বিদ্যালয় ও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাদানবিষয়ক প্রকল্প। পাশাপাশি, ‘৯৮৬ প্রকল্প’ হলো- ১৯৯৮ সালের ৪ মে, তৎকালীন চীনের প্রেসিডেন্ট চিয়াং চ্য মিন পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের শত বছর পূর্তির সম্মেলনে ঘোষিত প্রকল্পের অধীনে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি বলেছিলেন, আধুনিকায়নের জন্য চীনে প্রয়োজন বিশ্বমানের প্রথম শ্রেণির কিছু বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা।
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়কে সংক্ষেপে বলা হয় ‘পেই তা’। এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে চীনের প্রথম শ্রেণির একটি বিশ্ববিদ্যালয়। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান বিশ্বের প্রথম শ্রেণির একটি বিশ্ববিদ্যালয়।
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৯৮ সালে। এটি আধুনিক চীনের প্রথম রাষ্ট্রীয় বহুমুখী বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এটি চীনের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯১২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৩৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টির মূল ক্যাম্পাস বেইজিংয়ের বাইরে চলে যায়। এরপর ১৯৪৬ সালে আবারও তা মহানগরী বেইজিংয়ে স্থানান্তরিত হয়।
১৯৫২ সালে চীনের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা সুবিন্যাসের পর বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি বহুমুখী বিদ্যাপীঠ হিসেবে ঘোষিত হয়। ২০০০ সালে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় ও আগের বেইজিং স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় সংযুক্ত হয়ে বর্তমানের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
বেইজিং নরমাল বিশ্ববিদ্যালয়
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে চীনের উচ্চ গুণগতমান এবং উদ্ভাবনশীল মানবসম্পদ লালনের ক্ষেত্র, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উদ্ভাবনী জ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি এবং আন্তর্জাতিক বিনিময়ের গুরুত্বপূর্ণ সেতু। বিশ্ববিদ্যালয়টি বেইজিংয়ের হাইতিয়েন জেলার ই হ্য ইউয়ান সড়কে অবস্থিত।
সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়
সংক্ষেপে ‘সিংহুয়া’ নামে পরিচিত। চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশের প্রথম শ্রেণির বিশ্ববিদ্যালয় এটি। প্রথমে এটি ছিল ‘সিংহুয়া স্কুল’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯১১ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত ‘সিংহুয়া উদ্যান’ থেকে এসেছে। ছিং রাজবংশের সময় যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নে যাওয়ার আগে সরকারি লোকদের প্রস্তুতি নেওয়ার স্কুল ছিল সিংহুয়া। ১৯২৮ সালে সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে পরিবর্তিত হয়। ১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়।
২০১৯ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান গবেষণাগারের সংখ্যা ৪২১টি। এর মধ্যে সরকারি অনুমোদনে স্থাপিত বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থা ১৬০টি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থার সংখ্যা ১৩১টি। বাইরের সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে স্থাপিত গবেষণা সংস্থার সংখ্যা ১৩০টি।
সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন ৩৪৮৫ জন। তাদের মধ্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এক শিক্ষকও আছেন। তুরিং অ্যাওয়ার্ড (Turing Award) বিজয়ী রয়েছেন একজন, বিজ্ঞান একাডেমির একাডেমিশিয়ান ৫১ জন। প্রকৌশল একাডেমির একাডেমিশিয়ান ৩৯জন। ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৮৭৩৯ জন।
চায়না রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়
চায়না রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়কে সংক্ষেপে ‘রেনতা’ বলা হয়। চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ দেশের প্রথম শ্রেণির একটি বিশ্ববিদ্যালয়। রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানত মানুষ, সমাজ, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানভিত্তিক একটি বহুমুখী গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয়।
১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত শানপেই স্কুল, এরপর হুয়াপেই যৌথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং হুয়াপেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজকের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয় আত্মপ্রকাশ করেছে। ১৯৪৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর, চীন সরকার ‘চীনের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের সিদ্ধান্ত’ নেয়। ১৯৫০ সালের ৩ অক্টোবর, হুয়াপেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিতে রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর প্রথম নতুন ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় এটি। ১৯৫৪ সালে রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়কে সমাজ ও বিজ্ঞানভিত্তিক একটি বহুমুখী বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন ২৩ লাখ বর্গমিটারেরও বেশি। এর চুংকুয়ানছুন শাখা, থুংচৌ শাখা, সুচৌ শাখা, শেনচেন গবেষণাগার এবং শেনচেন শাখা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩২টি ইনস্টিটিউট আছে। এ ছাড়া, ক্রীড়া বিভাগ, অব্যাহত শিক্ষা ইনস্টিটিউট এবং শেনচেন গবেষণাগার আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮২টি বিভাগ থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি নেওয়া যায়।
২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত, রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সংখ্যা ছিল ১৮৮২ জন। তাদের মধ্যে অধ্যাপক ৬৭৪ জন, সহকারী অধ্যাপক ৭৮৩জন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬৭৫৭ জন। তাদের মধ্যে আন্ডার-গ্র্যাজুয়েট ১১২৬৯ জন। পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী ১০১৫৮ জন, ডক্টরাল শিক্ষার্থী ৩৮৪০ জন। বিদেশি ছাত্রছাত্রী ১৫৫২ জন। রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় সর্বোচ্চ।
বেইজিং নরমাল বিশ্ববিদ্যালয়
বেইজিং নরমাল বিশ্ববিদ্যালয় একটি উচ্চ মানের বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রধানত শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা বিজ্ঞানকেন্দ্রিক একটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়।
১৯০২ সালে প্রতিষ্ঠিত দ্য ইম্পেরিয়াল ইউনিভার্সিটি অব পিকিংয়ের (the imperial university of peking) শিক্ষা বিভাগের ওপর ভিত্তি করে বেইজিং নরমাল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠে। ১৯০৮ সালে এটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। এরপর ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বেইজিং নরমাল বিশ্ববিদ্যালয়ের’ নামকরণ করা হয়। চীনের বিভিন্ন প্রদেশে নরমাল বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও এটিই চীনের ইতিহাসের প্রথম নরমাল বিশ্ববিদ্যালয়।
বেইজিং নরমাল বিশ্ববিদ্যালয় গোটা চীনের শীর্ষ দশ গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম। এটি চীনের ‘২১১ প্রকল্প’ এবং ‘৯৮৫ প্রকল্পের’ অংশ। বেইজিং নরমাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন ৭৯.৪ হেক্টর। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৪ হাজারেরও বেশি। এদের মধ্যে আন্ডার-গ্র্যাজুয়েট ১০১০৫ জন। পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ১২৭৫৬ জন। বিদেশি শিক্ষার্থী ১৬০০ জনেরও বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩টি ইনস্টিটিউট আছে। গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা ৪৭ লাখ ও ই-বুকের সংখ্যা ৮৩ লাখেরও বেশি।
সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়
বেইজিং নরমাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ৪টি গবেষণাগার রয়েছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের উদ্ভাবনীকেন্দ্র, রাষ্ট্রীয় পরীক্ষাগার ও উচ্চ পর্যায়ের থিংকট্যাংক রয়েছে ১টি করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ৯টি প্রধান গবেষণাগার রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বেইজিং নরমাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন ৩১২০ জন। তাদের মধ্যে ৯২ শতাংশই ডক্টরেট ডিগ্রিধারী। ১৬ শতাংশ শিক্ষকের বিদেশি ডিগ্রিও আছে। বেইজিং নরমাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বিনিময় খাত বেশ সমৃদ্ধ। বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের ৫শ’ বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেন, জার্মানি, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের ২ শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষার্থী বিনিময় প্রকল্প চালু আছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩০টি দেশ ও অঞ্চলের ৪১০০ বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছে।
পেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়
পেইহাং বিশ্ববিদ্যালয় হলো চীনের শিল্প ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর প্রথম মহাকাশ ও বিমান চলাচলবিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয় এটি।
পেইহাং বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৫২ সালে বেইজিং মহাকাশ ইনস্টিটিউট নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পেইইয়াং বিশ্ববিদ্যালয়, সিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয় ও সিছুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশ বিভাগ নিয়ে একসাথে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৮ সালের এপ্রিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে বেইজিং মহাকাশ ও বিমান চলাচল বিশ্ববিদ্যালয় রাখা হয়। ১৯৮৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় স্থান পায়।
পেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়ের সুয়ে ইউয়ান লু শাখা এবং সা হ্য শাখা রয়েছে। এর ৩০টি ইন্সটিটিউট আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০টি আন্ডার-গ্র্যাজুয়েট কোর্স আছে, দেশের প্রথম শ্রেণির ৮টি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাদানের বিষয় আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মী সংখ্যা ৪ হাজার, শিক্ষার্থী ৩০ হাজারেরও বেশি এবং বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩০০ জনেরও বেশি।
পেইহাং বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক বিনিময় ও সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তৃত করেছে এবং বহুমুখী এবং বিভিন্ন পর্যায়ের উন্মুক্তকরণের কাঠামো স্থাপন করেছে। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক প্রভাব ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়েছে। পেইহাং বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের প্রায় দুইশ’ বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়, প্রথম শ্রেণির গবেষণা সংস্থা ও বিখ্যাত আন্তর্জাতিক কোম্পানির সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীল সহযোগিতা সম্পর্ক স্থাপন করেছে। পেইহাং বিশ্ববিদ্যালয় ‘বিশ্ব ক্যাম্পাস পরিকল্পনা’ চালু করেছে। এর মাধ্যমে উচ্চ মানের এবং বৈশিষ্ট্যময় শিক্ষার্থী বিনিময়, যৌথ শিক্ষাদান এবং আন্তর্জাতিক গ্রীষ্মকালীন প্রকল্প স্থাপন করেছে।
চীনের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
বেইজিংয়ে অবস্থিত চীনের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়টি চীনের জলসেচ মন্ত্রণালয়, কৃষি ও গ্রাম মন্ত্রণালয় এবং বেইজিং প্রশাসন যৌথভাবে পরিচালনা করে।
এই বিশ্ববিদ্যালয় চীনের আধুনিক কৃষিবিষয়ক উচ্চ শিক্ষার কেন্দ্র। ইম্পেরিয়াল ইউনিভার্সিটি অফ পিকিং-এর ‘কৃষি ও বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের’ বর্তমান রূপ চীনের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৮৪ সালে চীন সরকার বিশ্ববিদ্যালয়টিকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ দশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। ১৯৯৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘বেইজিং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’ ও ‘বেইজিং কৃষি প্রকল্প বিশ্ববিদ্যালয়’ নিয়ে বর্তমানের ‘চীনের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’ গঠন করা হয়।
প্রায় একশ বছর উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় চীনের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একটি গবেষণামূলক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলো- জীববিজ্ঞান ও কৃষি, সম্পদ ও পরিবেশ বিজ্ঞান, তথ্য ও কম্পিউটার বিজ্ঞান, কৃষি প্রকল্প ও স্বয়ংক্রিয়তা বিজ্ঞান, অর্থনীতি পরিচালনা ও সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদি। বিশেষ করে, জীববিজ্ঞান, কৃষিবিজ্ঞান এবং পরিবেশ ও প্রকৃতি বিদ্যার ক্ষেত্রে চীনের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম রয়েছে। চীনের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডার-গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১৫০৩ জন, পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৭৮০ জন এবং শিক্ষক ১৬৭৯ জন।
বেইজিং ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি
চীনের প্রথম প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হলো-বেইজিং ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি। চীনের শিল্প ও তথ্য মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালনা করে। ১৯৪০ সালে ইয়ান আন শহরে প্রতিষ্ঠিত প্রকৃতি বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের বর্তমান রূপ বেইজিং ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি। ১৯৪৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি বেইজিংয়ে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৫২ সালে বেইজিং শিল্প ইন্সটিটিউট ও পরবর্তী ১৯৮৮ সালে কাঠামো পরিবর্তন করে বেইজিং ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি নাম রাখা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন ১৮৮ হেক্টর। গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা ২৭ লাখেরও বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৬.৫ বিলিয়ন ইউয়ান। বেইজিং ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির ১৮টি শাখা ইন্সটিটিউট আছে। এতে ৬৭টি আন্ডার-গ্র্যাজুয়েট কোর্স আছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৭ হাজারেরও বেশি এবং শিক্ষক রয়েছেন ৩৩০০ জন।
গত পাঁচ বছর ধরে বেইজিং ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি থেকে স্নাতক পাস করা শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের হার ৯৭ শতাংশ। এই ইন্সটিটিউট বিশ্বের ৭১টি দেশ ও অঞ্চলের ২৭০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। জার্মানি, রাশিয়া, জাপান, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এই ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী বিনিময় প্রকল্প আছে।
বেইজিং চিয়াওথোং বিশ্ববিদ্যালয়
বেইজিং চিয়াওথোং বিশ্ববিদ্যালয়টি চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘২০১১ পরিকল্পনা’ ও ‘রেল যোগাযোগ নিরাপত্তা সহযোগিতা উদ্ভাবনীকেন্দ্র’ হলো দেশের প্রথম দফা গঠিত ১৪টি সহযোগিতামূলক প্রকল্পের অংশ।
দেশের যোগাযোগ খাতে বেইজিং চিয়াওথোং বিশ্ববিদ্যালয় বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ১৮৯৬ সালে ছিং রাজবংশ আমলে স্থাপিত বেইজিং রেলপথ পরিচালনা স্কুলের বর্তমান রূপ চিয়াওথোং বিশ্ববিদ্যালয়। এটি চীনের প্রথম ব্যক্তি প্রশিক্ষণমূলক উচ্চ বিদ্যালয়। আধুনিক চীনের রেলপথ পরিচালনা কৌশল ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার কেন্দ্র এই প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন নাম ধারণ করলেও ২০০৩ সালে ‘বেইজিং চিয়াওথোং বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে নবযাত্রা শুরু হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়টি সবসময় বৈজ্ঞানিক উন্নয়ন ও দেশের কৌশলগত চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্য, পরিচালনা, যোগাযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এসব গবেষণা ও প্রশিক্ষণের ওপর ভিত্তি করে চীনের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ নির্মাণ, দ্রুতগতির রেলপথ স্থাপন এবং শহরের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। ফলে চীনের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশ্বমানে উন্নীত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব মেধাস্বত্ব ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য দেশের যোগাযোগ, লজিস্টিকস, তথ্য, নতুন জ্বালানি সর্বোপরি বেইজিংয়ের অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক অবদান রেখেছে। বেইজিং চিয়াওথোং বিশ্ববিদ্যালয় দেশের শিল্প ও আঞ্চলিক বৈজ্ঞানিক উন্নয়ন ও উদ্ভাবন জোরদারের গুরুত্বপূর্ণ শক্তি।
বেইজিংয়ের হাইতিয়ান জেলায় চিয়াওথোং বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শাখা ক্যাম্পাস রয়েছে। এর মোট আয়তন প্রায় ৬৭ হেক্টর। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে শানতুং প্রদেশের উইহাই শহরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উইহাই ক্যাম্পাস আনুষ্ঠানিকভাবে চালু রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মীর সংখ্যা ২৯২৭ জন। বেইজিং চিয়াওথোং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেয়। বর্তমানে বেইজিং চিয়াওথোং বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডার-গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫৫৩৪ জন, পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮১৬৯ জন, ডক্টরাল শিক্ষার্থী ২৮৬১ জন এবং বিদেশি শিক্ষার্থী ২২১৭ জন।
ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বেইজিং
ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বেইজিং বা বেইজিং বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৫২ সালে থিয়েনচিন বিশ্ববিদ্যালয়, সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ৬টি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের খনিজ বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা, অর্থনীতি ও আইনসহ বিভিন্ন বিষয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টি বেইজিং শহরের হাইতিয়ান জেলার সুয়েইউয়ান সড়কে অবস্থিত। এর আয়তন ৮ লাখ বর্গমিটার। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি রাষ্ট্রীয় বিজ্ঞানকেন্দ্র ও ‘২০১১ পরিকল্পনা’ সহযোগিতা উদ্ভাবন কেন্দ্র এবং দুটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগার, প্রকল্প গবেষণাকেন্দ্র, বিজ্ঞানমঞ্চ ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সহযোগিতা কেন্দ্র আছে। এছাড়া, ৫০টি প্রাদেশিক ও মন্ত্রণালয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগার, প্রকল্প গবেষণাকেন্দ্র, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কেন্দ্র ও উদ্ভাবনীকেন্দ্র রয়েছে।
এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৫ হাজারেরও বেশি। তাদের মধ্যে আন্ডার-গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী ১৩৬৮৩ জন, পোস্টগ্র্যাজুয়েট ৭১৬৫ জন, ডক্টরাল ৩২৭৬ জন ও বিদেশি শিক্ষার্থী ৯১২ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন ৩৩৬৮ জন।
জাতীয় গ্রন্থাগার
বিশ্ববিদ্যালয়টি গবেষণা কাজে খুব দক্ষ। ১৯৭৮ সাল থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয় ৭৮১২টি পেটেন্টের আবেদন করে। গবেষণা খাতে বিশ্ববিদ্যালয়টি ২ হাজারেরও বেশি পুরস্কার পেয়েছে। তার মধ্যে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের পুরস্কার ১৭৬টি।
বিশ্ববিদ্যালয় অব্যাহতভাবে সেবার ক্ষেত্র ও উন্নয়ন সম্প্রসারণ করছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রদেশ, শহর সরকার ও বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ১৫০টিরও বেশি সার্বিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপরও গুরুত্ব দেয়। ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিসহ বিশ্বের ১৮০টিরও বেশি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়।
বেইজিং ইউনিয়ন মেডিক্যাল কলেজ
চীনের স্বাস্থ্য কমিশনের অধীনস্থ একমাত্র চিকিৎসাবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় বেইজিং ইউনিয়ন মেডিক্যাল কলেজ। এটি চীনের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের চিকিৎসা বিজ্ঞান একাডেমির কেন্দ্র এবং বহুমুখী বৈজ্ঞানিক গবেষণা সংস্থা। এটি চীনের প্রথম দফার শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা প্রকল্প।
বেইজিং ইউনিয়ন মেডিক্যাল কলেজ ১৯১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রোকফেলার তহবিলের (Rockefeller Foundation) সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘চীনের চিকিৎসা খাতে সর্বোচ্চ বিশ্ববিদ্যালয়’ বলে গণ্য করা হয়।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেইজিং ইউনিয়ন মেডিক্যাল কলেজে ১৮টি গবেষণাগার, ৭টি হাসপাতাল, ৬ শাখা ইন্সটিটিউট ও ১টি পোস্টগ্র্যাজুয়েট ইন্সটিটিউট আছে। কলেজে শিক্ষকের সংখ্যা ১৫০০ জন ও শিক্ষার্থী ৪৭২৬ জন।
লেখক: বিদেশি বিশেষজ্ঞ, বাংলা বিভাগ, চায়না মিডিয়া গ্রুপ, বেইজিং, চীন।