ক্যাম্পাস

ছাত্রীর সন্তান কোলে নিয়ে ক্লাস নিলেন নোবিপ্রবির শিক্ষক 

১০ মাসের বাচ্চাকে নিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি ল্যাব ক্লাসে হাজির হন সানজিদা আক্তার। তিনি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ছাত্রীর বাচ্চাকে কোলে নিয়ে পুরো সময় ক্লাস নেন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সঞ্জয় সাহা সনেট।

বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ভিন্নধর্মী এই চিত্র ইতোমধ্যে বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ছাত্রীর বাচ্চা কোলে নিয়ে ক্লাস নেওয়াকে গুরু-শিষ্যের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছেন শিক্ষার্থীরা। 

সানজিদা আক্তার বলেন, আমি অনেক ভয়ে ছিলাম স্যার যদি বকা দেয় যে বাচ্চা নিয়ে কেন আসলাম। অন্যদের ডিস্টার্ব হবে, স্যারের ক্লাস নিতে ডিস্টার্ব হবে। কিন্তু স্যার আমাকে বকা দেননি। বরং সুন্দর করে বলেছেন যে, মায়ের জন্য এবং এডমিশন ছাড়াই ক্লাসে আসার সৌভাগ্য হয়েছে আমার বাচ্চার। স্যারের এ আচরণে আমার চিন্তাভাবনার ওপর অনেক বেশি পজিটিভ প্রভাব ফেলেছে।

পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বাবা-মায়ের পর শিক্ষকই যে ছাত্রের কাছে দ্বিতীয় পিতা বা মাতার মর্যাদায় আসীন হন, তা আমাদের সবারই জানা। তবে এই ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক আজ কতটুকু ফুটে ওঠে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, তা আমাদের সবারই জানা৷সমাজের প্রায় মানুষের ধারণা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার্থী থেকে দূরত্ব বজায় রাখে৷কিন্তু সেই ধারণাকে পাল্টে দিলো। আমরা স্যারদের এমন ভালোবাসাই কামনা করি সবসময়। স্যারদের প্রতি শ্রদ্ধা আজ আরও বেড়ে গেলো।

ছাত্রীর বাচ্চা কোলে নিয়ে ক্লাস নেওয়া শিক্ষকের প্রশংসা করেন অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও। বাংলাদেশ অ্যান্ড মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা এমন শিক্ষক দেখতে চাই প্রতিটি বিভাগে, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় হবে প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের চারণ ভূমি।

সহকারী অধ্যাপক সঞ্জয় সাহা সনেট বলেন, আসলে এই করোনালীন সময়ে আমরা ক্লাস পরীক্ষা থেকে বহুদূরে ছিলাম। সেখানে বহুদিন পর শিক্ষার্থীদের সাথে ল্যাব ক্লাস নিতে পেরে আমারও একটা ভালো লাগা কাজ করে। আর আমি যেটা করেছি, সেটা আমার দায়িত্বের কাছ থেকে, ভালো লাগা থেকে৷আমার ছাত্রীর বাচ্চা ক্লাসে নিয়ে আসায় আমিও ব্যক্তিগতভাবে তাকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ হাজারো প্রতিকূলতার মধ্যেও সে পড়াশোনা সঠিকভাবে চালিয়ে যাচ্ছে।