ক্যাম্পাস

একটি ব্যতিক্রমী ক্যাম্পাস

জেলা বা মফস্বল শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের কথা মাথায় এলেই আমাদের চোখে ভেসে উঠে প্রকৃতির মিলনমেলার মনোরম প্রতিচ্ছবি। চৌত্রের চৌচির রোদে ক্লাস শেষে সবাই মিলে প্রতিষ্ঠানের আঙিনায় বিশাল ফলদ এবং বনজ বৃক্ষের নিচে শরীর এলিয়ে দিয়েছে একঝাঁক শিক্ষার্থী। সবুজ ঘাসের উপর  বসে গালগল্প আর বাদাম খাওয়ার দৃশ্য। কিংবা মাঘের রিক্ত-বিষণ্ণ এবং কুয়াশাছন্ন দিনে ভরদুপুরে মাঠে বসে দলেদলে সোনালি রোদ তাপানোর দৃশ্য।

ঠিক উল্টো শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ। এখানে একেটি বড়বড় কংক্রিটের দালানে আবদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একই ভবনে ভিন্ন ভিন্ন দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চিত্রও এখন অহরহ। একটি মাত্র দালানের সম্বল নিয়ে গড়ে উঠা নগর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিড়ে রাজধানী ঢাকায় এখনো এমন কিছু ছোটবড় আয়তনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেগুলো প্রতিনিয়ত সৌন্দর্য বর্ধন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ করে।

রাজধানীর কেন্দ্রে অবস্থিত ১১ একর আয়তনের সরকারি তিতুমীর কলেজ এমনই একটি 'ক্লিন এবং গ্রীন' প্রতিষ্ঠান। যার সবুজের সমারোহ কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভুলিয়ে দেয় এটি দেশের সবচেয়ে জনবহুল আর কংক্রিটের নগরীর একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

যথেষ্ট পরিকল্পিত নাতিদীর্ঘ আয়তনের সরকারি তিতুমীর কলেজ যে অন্য দশটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যাতিক্রম, সেটা খালি চোখেই উপলব্ধি করতে আপনাকে একটাবার ' ঢু' মারলেই হবে ক্যাম্পাসের মূল ফটকে।

চালতা, জাম্বুরা, চলপাই, আম, ধেউয়া, পেয়ারা, কাঁঠালসহ বিভিন্ন দেশীয় ফলের অসংখ্য গাছ যেমন আছে। তেমনি এখানকার শিক্ষার্থীদের সৌন্দর্য দেখাতে মেলে ধরে বিভিন্ন জাতের অসাধারণ সব ফুল। গ্রামের ঝাড়ে জঙ্গলে বেড়ে উঠা কদমফুল এখানের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। অসংখ্য কৃষ্ণচূড়া গাছ লালে লাল হয়ে থাকে ডিসেম্বরের পরপরই।

বাহিরের যানজটের বিতৃষ্ণা থেকে নিমিষেই মুক্তি মেলে 'শেখ রাসেল পুষ্পকানন, শহীদ বরকত মিলনায়তন ঘিরে রাখা অসংখ্য ছোটবড় উদ্ভিদ। শিক্ষার্থীদের গবেষণা, বিভিন্ন বৃক্ষের সঙ্গে পরিচিত করার লক্ষ্যে এখানে একটি বোটানিক্যাল গার্ডেনও চোখে পড়ে। তবে পর্যাপ্ত খাতির যত্নের অভাবে এটি বেশকিছু বছর ধরে রং হারিয়েছে।

শুনতে সবচেয়ে সুন্দর লাগে এখানকার পাখির ডাক। শুনশান এই প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনায় কান সজাগ রাখলে পাখির ডাক আপনার কানে আসবেই আসবে। 

বিশাল না হলেও এখানে হাটাঁহাঁটি করার মতো যতটুকু জায়গা আছে সেটাই সকালবেলা সতেজ নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। খুব ভোরে এখানে আসলে দেখা মিলে সারাদিন কর্মযজ্ঞে শক্তি পেতে কসরতরত বিভিন্ন শ্রেণির মানুষদের।

শিক্ষার্থীর সংখ্যায় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘সবুজায়ন’কে এতবেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় যে, এখানে রীতিমত একদল মালি রাতদিন এক করে কাজ করে। ঢাকা শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেখানে মাঠই বড় আক্ষেপের নাম, সেখানে আপনি মাঝেমধ্যেই এখানে চার-পাঁচজন নিবেদিত মানুষকে পরম যত্নে নিখুঁতভাবে তৃণাদি ঘাসের যত্ন নিতে দেখবেন।

চলমান শুনশান ক্যাম্পাসে চাইলে আপনিও কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে যেতে পারেন।