গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) অধিকতর উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পে প্রধান ফটকের সঙ্গে উপ-ফটক নির্মাণের কথা বলা হয়। দীর্ঘ আলোচনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক নির্মাণ কাজ ৮০ শতাংশ উন্মোচিত হলেও উপ-ফটকের কাজ এখনো শুরুই হয়নি।
জানা গেছে, উপ ফটকটি বর্তমানে ছেলেদের হলের ফটক সংলগ্ন জায়গায় নির্মাণ করার কথা ছিলো। কিন্তু ৮০ শতাংশ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর অর্থ সঙ্কটে এতোদিন প্রধান ফটকের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ঘোষণা অনুযায়ি উপ-ফটক নির্মাণের কথা থাকলেও এখনো তাতে হাত দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তর এবং প্রকৌশল দপ্তর।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তর এবং প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প পাশ হয়। একই বছরের নভেম্বর মাসে প্রকল্পের জন্য প্রজেক্ট ডেভেলপার (পিডি) নিয়োগ করা হয়।
প্রকল্পের প্রথম মেয়াদ ধরা হয় ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এসময় ১০৫ কোটি টাকা বাজেটে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শিক্ষা ও প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রকল্পের কাজের শতভাগ সমাপ্ত করতে পারেনি। ফলে ২০১৮ সালে ২৫৬ কোটি টাকায় প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী পাশ হয় এবং ২০১৪ থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তর এবং প্রকৌশল দপ্তর কর্তৃক প্রকল্পের বাকী অংশের কাজ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়।
এসময় প্রকল্পে ১৪টি টেন্ডার পাশ করা হয়। যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ও উপ ফটক। প্রধান ফটক এবং উপ-ফটক নির্মাণের জন্য আরডিপিতে বরাদ্ধ করা হয় ২ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা। তবে ঠিকদার প্রতিষ্ঠান 'কাজী মাহবুবুর রহমান' ২ কোটি ১৪ লক্ষ ২৯ হাজার টাকায় ফটকের নির্মাণের কাজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়।সে অনুযায়ি ঠিকদারী প্রতিষ্ঠানকে ২০২০ এর ডিসেম্বর থেকে ২০২১এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফটকের কাজের জন্য কার্যাদেশের মেয়াদ প্রদান করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তর জানায়, করোনা মহামারি, তৎকালীন উপাচার্যের পদত্যাগসহ নানা কারণে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত প্রধান ফটকের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ থেকে বৃদ্ধি করে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে উন্নীত করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের সর্বশেষ প্রতিবেদন ২০২৩এর সেপ্টেম্বর থেকে জানা যায়, ফটক নির্মাণে কাজের অগ্রগতির ভৌত অবকাঠামো দেখানো হয়েছে ৮০ শতাংশ এবং এর আর্থিক ব্যয় হয়েছে ৪৮.৫৩ শতাংশ। নির্মাণের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সরবরহ করা হয়েছে ১ কোটি ৪ লক্ষ টাকা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) কাজী ইউনুস আলী রাইজিংবিডিকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক নির্মাণের জন্য ২ কোটি ১৪ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা বাজেটে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দরপত্র করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের উদ্ধগতি, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিত টাকা পরিশোধ করতে না পারা এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের অবহেলার কারণে উক্ত বাজেটের মধ্যে প্রধান ফটক নির্মাণ করা গেলেও উপ-ফটকটি নির্মাণ করা সম্ভব হবে কিনা নিশ্চিত না।
যখন প্রকল্প গৃহীত হয় তখন দ্রব্যমূল্যের উদ্ধগতির বিষয়টি ভাবা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকি। পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তর আমাদেরকে কাজের ধরন দেখায়। আমরা শুধু সেগুলো বাস্তবায়ন করি।
তিনি বলেন, প্রজেক্টের পুনঃআলোচনা এখনো করা হয়নি। পুনঃআলোচনা করার পর বুঝতে পারব আসলে আমাদের হাতে কত টাকা আছে এবং সে টাকা দিয়ে উপ-ফটক নির্মাণ করতে পারব কিনা।
কাজের বিষয়ে জানতে ঠিকাদার নূর আলী মোল্লার সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়৷ কিন্তু তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অসমর্থ জানায়।