রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক অধ্যাপক শহীদ মীর আব্দুল কাইয়ূমের স্মরণ সভা করা হয়েছে। শনিবার (২৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে রাবির শহীদ মীর আব্দুল কাইয়ূম ডরমিটরিতে মোমবাতি প্রোজ্জ্বালন এবং স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক পুরষ্কার প্রদান করা হয়।
পরে সিনেট ভবনের সামনে থেকে র্যারি বের হয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে শহীদ মীর আব্দুল কাইয়ূমের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সিনেট ভবনে স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়।
মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়ার সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবির। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ওবায়দুর রহমান প্রামাণিক।
এতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শহীদ জায়া অধ্যাপক মাসতুরা খানম এবং মূখ্য আলোচক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আব্দুল খালেক।
উপ উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবির বলেন, এদেশের দোসরদের সহায়তায় পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। একজন মানুষের মাথা কেটে দিলে যেমন কিছুই থাকে না, তেমন দেশ পঙ্গু করার জন্য বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আরও অনেক পড়াশোনা করা উচিত। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবার এমনিতেই অনেক দুঃখ–কষ্ট বহন করছেন। তাই খেয়াল রাখতে হবে এই শহীদদের পরিবার যেন কোনোভাবে আমরা সম্মানহানী ঘটিয়ে তাদের হৃদয়ে আর ব্যথা না দেই।
শহীদজায়া অধ্যাপক মাসতুরা খানম বলেন, স্মৃতিচারণ কিন্তু অনেক মধুর একটা শব্দ। কিন্তু এই স্মৃতির বেদনা সেটা নিয়ে গত ৫০ বছর ধরে আমি বেঁচে আছি। আমি মনে করি এটা সুখের স্মৃতি। এই স্মৃতি নিয়ে আমি গর্ব করি। আমরা এক সঙ্গে পড়াশোনা করেছি এবং চাকরিও করেছি। তার নিষ্ঠা–নীতি আমি আমার সন্তানদের মধ্যে দেওয়ার চেষ্টা করছি। দেশের জন্য যতজন প্রাণ দিয়েছে তার মধ্যে আমার স্বামীও একজন। এজন্য আমি গর্ব করি৷
শহীদ মীর আব্দুল কাইয়ূমের মেয়ে এবং মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়া বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা বিরোধিতা করছে তাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করব ব্যাক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে। তাদের চিন্তা ভাবনা যারা ধারণ করছে, দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, তাদের প্রতি ঘৃণা। একই সঙ্গে আমার বাবাদের সঙ্গে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রাজশাহীতে নভেম্বরে শুরু হয় বুদ্ধিজীবী হত্যা। এই হত্যাকারীদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সম্মানের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তাদের অনেকেরই ছবি বিভিন্নভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে টাঙানো আছে। তাদের ছবি নামানো হোক এবং তাদের কর্মকাণ্ড উল্লেখ করা হোক। তবেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শহীদ শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কর্মচারীদের প্রতি সত্যিকারের সম্মান জানানো হবে।
এসময় শহীদ বুদ্ধিজীবী মীর আব্দুল কাইয়ূমের জীবনীভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র ‘মরণজয়ী শহীদ মীর কাইয়ূম’ প্রদর্শিত হয়।