ক্যাম্পাস

কুবির বাসে হামলা-ভাঙচুর, ১০ শিক্ষার্থী আহত

পূর্ব ঘটনার জেরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীদের বহনকারী একটি বাসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত কুবির বাসের চালক ও তার সহকারী ছাড়া অন্তত ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।

এদিকে ঘটনাস্থল থেকে হামলাকারীদের একজনকে তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসে শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। বুধবার (২৯ নভেম্বর) রাত ৮টায় বাসটি নগরীর টমছম ব্রিজ এলাকায় আসলে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

শিক্ষার্থীদের হাতে আটক হামলাকরী মো. রাকিব কুমিল্লার দেবিদ্বারের মো.রুহুল আমিনের ছেলে। তিনি বিশ্বরোড ও টমছম ব্রিজ এলাকায় অটো চালান বলে জানা গেছে।

হামলায় আহতরা হলেন- অর্থনীতি বিভাগের ১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী শেখ মাসুম, লোকপ্রশাসন বিভাগের ১২ ব্যাচের শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ, একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ১৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী জুবায়ের মাহমুদ সাকিব, আবদুল বাসেদ, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী আদনান হোসেন সাহেদ, মো. রিফাতুল ইসলাম, আতিক রহমান, রিয়াজন হক সজীব ও মো. রাসেল চৌধুরী। এছাড়া বাস চালক সুমন দাস ও তার সহকারী জহিরুল ইসলামও আহত হন বলে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যায় নগরীর টাউন হল থেকে ক্যাম্পাসমুখী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বহনকারী নীল বাস (কুমিল্লা-স ১১০০-৩২) টমছম ব্রীজ এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ কুমিল্লা টু ব্রাহ্মণবাড়িয়া মধ্যে চলাচলকারী বলাকা নামে একটি বাস সামনে এতে গতিরোধ করে। এসময় বাসটি থেকে ২০-২৫ জন লাঠিসোটা নিয়ে নেমে আসেন এবং তারা শিক্ষার্থীদের বাস ছেড়ে নেমে যেতে বলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা না নামলে তারা হামলা চালিয়ে বাসের লুকিং গ্লাস, জানালার গ্লাস ভেঙে ফেলে। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা বাস থেকে নেমে থামাতে গেলে হামলাকারীরা তাদের উপর চড়াও হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিয়ে তাদের একজনকে আটক করে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসে।

শিক্ষার্থীদের বহনকারী বাস ক্যাম্পাসে আসা মাত্রই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা হাততালি দিয়ে বাসটিকে গোল চত্বরে নিয়ে আসেন। এরপর পুলিশের সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আটক হামলাকারীকে উদ্ধার করে অফিসে নিয়ে যায়।

ঘটনার সময় বাসে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. রাসেল চৌধুরী। তিনি বলেন, আমরা নীল বাস দিয়ে টমছম ব্রিজ দিয়ে যাচ্ছিলাম। ব্রিজ সংলগ্ন অগ্রণী ব্যাংকের সামনে আসলে হঠাৎ বলাকা নামে একটি বাস দেখতে পাই। বাসটি সম্পূর্ণ খালি ছিলো। আমি ভাবছিলাম  হয়তো ব্রেক করেছে। কিন্তু না, মুহূর্তের মধ্যেই ২৫-৩০ জন সন্ত্রাসী বাঁশ, রড, স্টিলের পাইপসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের বাস ঘেরাও করে এবং আমাদের বাস থেকে নামতে বলে। আমরা না নামলে তারা বাস ভাঙ্গা শুরু করে। বাঁশ এবং রড নিয়ে জানালা দিয়ে আমাদেরকে আক্রমণ করার সময় তারা বাসের হেলপার এবং ড্রাইভারকে আঘাত করে।

বাসে থাকা আরেক শিক্ষার্থী লোকপ্রশাসন বিভাগের নাসরিন আক্তার বলেন, 'গত মঙ্গলবার আমাদের বাস ড্রাইভারের সঙ্গে ওখানকার স্থানীয় অটো চালকদের বাকবিতণ্ডা হয়েছিল। সেই রেশ ধরে তারা আমাদের বাসে হামলা করে। জানালার দিয়ে বাঁশ, লাঠি, রড দিয়ে আঘাত করতে থাকে।

পূর্বের ঘটনার সম্পর্কে জানতে চাইলে কুবি বাসের চালকের সহকারী মো. জহির আহমেদ বলেন, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহরের টমছম ব্রিজ থেকে ইউটার্ন নেওয়ার জন্য আমি বাস থেকে নেমে সামনের অটোগুলোকে একটু সরতে বলি। তখন তারা কয়েকজন আমাকে ও ড্রাইভারকে বাজে ভাষায় কথা বলে এবং আমার গায়ে হাত তুলে। তখনই বাসে থাকা কিছু শিক্ষার্থী বাস থেকে নেমে আমাকে উদ্ধার করেন।

তিনি বলেন, আজ (বুধবার) সন্ধ্যায় আমাদের বাসটি একই স্থানে গেলে প্রায় অর্ধশত লোক আমাদের বাসটিকে ঘিরে হামলা চালায়। এসময় আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের একজনকে বাসে উঠিয়ে নেন এবং সঙ্গে সঙ্গে আমরা বাস নিয়ে ক্যাম্পাসমুখী হই।

বাসের চালক সুমন দাশ বলেন, গত মঙ্গলবার আমাদের বাস ইউটার্ন নেওয়ার সময় অটো ড্রাইভারের কাছে সাইড চাওয়া হয়। এরপর এ নিয়ে বাসের হেলপারের সঙ্গে হাতাহাতি হয়। বিষয়টি সেখানে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু আজ রাতে বহিরাগতরা লাঠি ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে আমার মাথায় ও পায়ে আঘাত করে। তারপর বাসের ভেতর থেকে শিক্ষার্থীরা নেমে আসে।

এদিকে শিক্ষার্থীদের হাতে আটক হামলাকারী মো. রাকিব বলেন, এখানে হামলা করার সময় যে কয়জন ছিলো আমি সবাইকে চিনি না। শুধু ছয়জনকে চিনি। তারা হলেন- রুহুল আমিন, সোহান (২৬), সৈকত (২০), শিহাব (২৮), সিয়াম (১৮) ও আশরাফুল। আর যে ২০-২৫ জন ছিলো তাদের মধ্যে একজনের নাম বললে, তারা সবার নাম বের কবে দিতে পারবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে আটককৃত রাকিব ও আহত শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।’

নগরীর কোটবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসএম আরিফুর রহমান বলেন, 'যেসব শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি এবং যেই ব্যক্তিকে শিক্ষার্থীরা তুলে নিয়ে এসেছেন তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি মামলা করে তাহলে আমরা তদন্ত শুরু করবো।'