ক্যাম্পাস

বাংলাদেশে কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন জরুরি

বাংলাদেশে বর্তমানে কারিগরি শিক্ষার জয়জয়কার। কিন্তু কারিগরি শিক্ষার্থীদের কর্মজীবন ও উচ্চশিক্ষা নিয়ে দুর্দশার শেষ নেই। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বা চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স শেষে তারা স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও তৎপরবর্তী উচ্চতর গবেষণামূলক পড়াশোনা নিয়ে ভোগান্তিতে পড়ে যান।

ডুয়েটসহ দুই-একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কারিগরি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ আছে; তাও সীমিত সংখ্যক আসনে। শেষ পর্যন্ত অনেক কারিগরি শিক্ষার্থীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে তাদের শিক্ষা ও কর্মজীবন আরও ভালভাবে গড়ার আর স্বপ্ন পর্যন্ত দেখেন না।

বাংলাদেশে পাবলিক অ্যাফিলিয়েট বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দেশের আনাচে-কানাচের সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। আর ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে দূরশিক্ষণ পদ্ধতির বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এখনও কারিগরি শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা এমন কোনো পাবলিক অ্যাফিলিয়েট বিশ্ববিদ্যালয় নেই; যেখানে তারা উচ্চশিক্ষা লাভ করতে পারবেন।

অথচ বহির্বিশ্বের ধনী-গরিব বেশিরভাগ দেশে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগের জন্য অনেক পাবলিক টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আপনারা পরিসংখ্যানগত তথ্য খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। জার্মানিতে রয়েছে টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখ, টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব বার্লিন, টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ব্রাউনসউইগ, টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ডর্টমাউনড, টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব কাইজারসলোটার্ন, ডেনমার্কে রয়েছে টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ডেনমার্ক, স্পেনে রয়েছে টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব মাদ্রিদ, টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ভ্যালেন্সিয়া।

তুর্কিয়েতে রয়েছে ইস্তানবুল টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, মিডল ইস্ট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, ইল্ডিজ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, কারাডেনিজ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, গেবজে টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, বুরসা টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, ইসকেনদারুন টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, কোনিয়া টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, গ্রিসে রয়েছে ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব এথেন্স, পোল্যান্ডে রয়েছে পোজনান ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, বেলারুশে রয়েছে বেলারুশিয়ান ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে কলরাডো টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, ঘানায় রয়েছে আক্রা টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, জর্জিয়াতে রয়েছে জর্জিয়ান টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, দক্ষিণ কোরিয়াতে রয়েছে ডেগু টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, কেনিয়াতে রয়েছে টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব কেনিয়া, প্রতিবেশী দেশ ভারতে রয়েছে ড. এপিজে আব্দুল কালাম টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, আইকে গুজরাল পাঞ্জাব টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, হারকোর্ট বার্টলার টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পাবলিক অ্যাফিলিয়েট বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রস্তাবিত এই বাংলাদেশ কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ও দেশব্যাপী স্নাতক পর্যায়ের কলেজ বা ইনস্টিটিউটগুলোতে স্নাতক-স্নাতকোত্তর কোর্স চালাতে পারবে, যদি স্থাপিত করা হয়।

কারিগরি অধিদফতর, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি আকুল আবেদন, আপনারা দেশের এত বিশাল সংখ্যক কারিগরি শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে স্থাপন করার অনুরোধ রইল ‘বাংলাদেশ কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়’। যার নাম ইংরেজিতে হবে ‘বাংলাদেশ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি’। এর মনোগ্রামও হবে ইংরেজি ভাষায়, যাতে বহির্বিশ্বের সবাই পড়তে-চিনতে পারে।

প্রস্তাবিত এই অ্যাফিলিয়েট পাবলিক কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণ অন্যান্য অ্যাফিলিয়েট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গাজীপুর কিংবা ঢাকায় না করে এর বাইরে বড় জায়গা নিয়ে করা উচিৎ। যাতে গবেষণা ও প্রশাসনিক কাজের সুবিধা হয়। কারণ ঢাকায় আর জায়গা বাকি আছে মনে হয় না। যেমনটি ফাযিল-কামিল মাদ্রাসাগুলো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল।

সম্প্রতি বিশেষায়িত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পলিটেকনিক/কারিগরি শিক্ষার্থীদের জন্য এখনো কোনো আলাদা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়নি; যা বিস্মিত হওয়ার মতো ব্যাপার। তাদের সেই সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণ করছি না, তবে কারিগরি শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে আলাদা একটি পাবলিক অ্যাফিলিয়েট বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জোর দাবি রইল।

লেখক: বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা শেডে কর্মরত।