ক্যাম্পাস

ব্যথা দিচ্ছে ‘ব্যথার দান’

সংকট সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার একমাত্র মেডিক্যাল সেন্টার ‘ব্যথার দান’। কিন্তু সেখানে কোনো সেবাই পান না তারা। সামান্য থেকে গুরুতর যেকোনো অসুস্থতার জন্য শিক্ষার্থীদের যেতে হয় ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অথবা ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ২৪টি বিভাগে আট হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী এবং তিন শতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও তাদের পরিবার রয়েছে। এই সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বিপরীতে চিকিৎসা সেবার জন্য রয়েছে ব্যথার দান মেডিক্যাল সেন্টার। কিন্তু এই বিপুল সংখ্যার চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে বাড়েনি ব্যথার দান মেডিক্যাল সেন্টারের চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্টাফের সংখ্যা। বাড়েনি পর্যাপ্ত বরাদ্দও।

অনুসন্ধানে জানা যায়, স্টাফ সংকটের কারণে একটি নির্দিষ্ট সময়ে খোলা থাকে ব্যথার দান। বাকি সময় বন্ধ থাকে। সপ্তাহের প্রতি শুক্র ও শনিবার সার্বক্ষণিক এবং বাকি দিনগুলোতে রাত আট থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত বন্ধ থাকে মেডিক্যাল সেন্টার। এই বন্ধ সময়ে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজন হলে বিপাকে পড়তে হয় অসুস্থ শিক্ষার্থীদের।

এদিকে দশ হাজারের বিপরীতে রোগীদের সার্বক্ষণিক পরিবহন সেবার জন্য রয়েছে একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স। যা সবসময় না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয়টি শহর থেকে ছাব্বিশ কিলোমিটার দূরে। ফলে একই সময়ে একাধিক শিক্ষার্থী অ্যাম্বুলেন্স কল করলে প্রায়ই বিপাকে পড়েন বলে জানান অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারও।

এছাড়াও প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা ও রোগ নির্ণয়ের জন্য নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে গুরুতর রোগে আক্রান্ত রোগীদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা প্রদানে হিমশিম খেতে হয় সংশ্লিষ্ট স্টাফদের।

আইন অনুষদের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন ব্যথার দান নিয়ে অভিযোগ করে বলেন, আমরা প্রয়োজনের সময় সেবা পাই না। যেকোনো সময় যেকোনো শিক্ষার্থীর অসুস্থ হওয়া খুব স্বাভাবিক। কিন্ত প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবারহে তারা সবসময়েই অবহেলা করেন। আবার রাতের বেলা তো মেডিক্যাল সেন্টার খোলাই থাকে না।

ব্যথার দানের সার্বিক সংকট বিষয়ে ডেপুটি চিফ মেডিক্যাল অফিসার ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন শিক্ষার্থীদের অসন্তুষ্টির কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১০ হাজার মানুষের জন্য এ মেডিক্যাল সেন্টার। কিন্তু এখানে আমাদের ডাক্তার আছেন মাত্র চারজন। নার্স-ক্রাফ, ওয়ার্ড বয়সহ সবমিলিয়ে আমাদের টোটাল স্টাফ মাত্র ১১ জন। এই সামান্য সংখ্যক স্টাফ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। স্টাফ স্বল্পতার কারণে নাইট শিফট চালু কর সম্ভব হচ্ছে না।

আর ঔষধ সঙ্কট নিয়ে তিনি বলেন, আমরা বছরে ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পাই। এই সামন্য বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষার্থীদের সব মেডিসিন সরবরাহ করা সম্ভব না। সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমরা রেজিস্ট্রার দপ্তরে ডাক্তার, নার্সসহ সার্বিক চাহিদার কথা জানিয়ে কাগজ জমা দিয়েছি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টার হলো প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র। এখানে চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ সংকট আছে। এর মধ্যেই আমাদের শিক্ষার্থীদের সন্তুষ্টি করতে হয়। চিকিৎসক, নার্স, অ্যাটেনডেন্সসহ অনেক রকমের জনবল প্রয়োজন। রোগ নির্ণয়, মেডিক্যাল টেস্টের জন্য আধুনিক সরঞ্জামাদিও দরকার। আমরা অব্যাহতভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি এসব সঙ্কট দূর করতে। মেডিসিন ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।