ক্যাম্পাস

রাবি প্রশাসনের নোটিশ যেন ‘বানান ভুলের বাজার’

প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ খ্যাত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। রাবির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়নি— এমন মানুষ হয়ত খুব কমই আছেন। বিশেষ করে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের একটি আবেগের নাম রাবি। কিন্তু সেই রাবির নোটিশেই কি না ‘বানান ভুলের বাজার’ জমেছে।

বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান অনুযায়ী, বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম পুস্তিকার ২.১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সব অতৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি ও মিশ্র শব্দে কেবল ই ও উ এবং এদের কারচিহ্ন ব্যবহৃত হবে। কারণ বাংলায় উচ্চারণগত দীর্ঘস্বর নেই। ই, ঈ এবং উ, ঊ প্রভৃতির উচ্চারণ অভিন্ন। তাই অতৎসম (দেশি, বিদেশি) শব্দে ঈ-কার নিষ্প্রয়োজন।

সম্প্রতি দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪টি নোটিশে এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে ২৭টি শব্দে। প্রতিটি নোটিশে একই নিয়মের বারবার ব্যত্যয় ঘটতে দেখা গেছে।

বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানের পরিশিষ্ট ‘গ’-এ বাংলা তারিখ ও সময় লেখার নিয়ম বর্ণনা করা হয়েছে। বিশেষ দ্রষ্টব্যে বলা হয়েছে: অ্যাক বৈশাখ, অ্যাগারো জ্যৈষ্ঠ, শোলো ডিসেম্বর, পোঁচিশ বৈশাখ প্রভৃতি উচ্চারণ অশুদ্ধ। শুদ্ধ ও মান্য রীতি: পয়লা বৈশাখ, অ্যাগারোই জ্যৈষ্ঠ, শোলোই ডিসেম্বর, পোঁচিশে বৈশাখ প্রভৃতি। উপর্যুক্ত ৪টি নোটিশে সব তারিখের ক্ষেত্রে এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে।

বিসর্গ (ঃ) কোনো যতিচিহ্ন নয়, এটি বাংলা বর্ণমালার একটি স্বাধীন বর্ণ। এর নিজস্ব উচ্চারণ আছে। পদান্তে অবস্থিত বিসর্গ বর্ণের উচ্চারণ: হ্। যতিচিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত কোলন ( : ) বা সংক্ষেপণ চিহ্নের (.) স্থলে বিসর্গ বিধেয় নয়। এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে ২৬ জায়গায়।

'সংক্রান্ত, পূর্বক, এর' এই শব্দগুলো পূর্ববর্তী শব্দের সঙ্গে সেঁটে বসার নিয়ম থাকলেও অগ্রাহ্য করা হয়েছে কয়েক জায়গায়। তাছাড়া 'নেওয়া' অর্থে নেয়া এবং 'দেওয়া' অর্থে দেয়া ব্যবহার করা হয়েছে। যা চরম ভুল ও হাস্যকর অর্থ তৈরি করে। কারণ 'দেয়া ও নেয়া' শব্দদ্বয়ের নিজস্ব অর্থ আছে।

বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান [পরিমার্জিত সংস্করণের তৃতীয় পুনর্মুদ্রণ (এপ্রিল ২০১৮)] বলছে, ‘ডিগ্রি’-র নামের বানানের সংক্ষেপণে ডট (.) থাকবে না। লিখতে হবে ডট (.) ছাড়া এবং নিরেটভাবে। যেমন: এইচএসসি, এসএসসি, এমএ, এমএসসি, এমডি, এমকম, বিএ, বিএল, বিএসসি, বিকম। ব্যতিক্রম: এম বি বি এস। অন্যান্য সংক্ষেপণের ক্ষেত্রেও ‘মুণ্ডমাল শব্দের’ ন্যায় একই রীতি অনুসৃত হবে। যেমন: এসএমএস, ঢাবি, রাবি, চবি, ইউএনও। এই নিয়মের তোয়াক্কা না করে সব জায়গায় রা. বি. লেখা হয়েছে। যা চরম ভুল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি জায়গায় বানানে ভুল হওয়া লজ্জার বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এমন একটি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও বানানে ভুল করা বড়ই দুঃখজনক। একই সঙ্গে লজ্জার ও পরিতাপের বিষয়। তবে কেউ বাংলা একাডেমির বানানরীতি মানে। আর কেউ পুরাতন বানানরীতি মানে। তারপরও মৌলিক শব্দের বানানে প্রচুর ভুল থাকে। দুঃখের বিষয় প্রমোটি অফিসারদের দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভরে গেছে। এখন পিওন, দারোয়ানও ডেপুটি রেজিস্ট্রার হয়ে যাচ্ছে। স্বয়ং রেজিস্ট্রারই তো বানান জানেন না দেখি। ফলে ভুল থেকেই যাচ্ছে।

তিনি বলেন, মূলত অফিসারদের অজ্ঞতার কারণে এমনটা হচ্ছে। সেটাতে ভুল আছে কি না, রেজিস্ট্রারের দেখে দেওয়ার কথা। কিন্তু রেজিস্ট্রারও হয়তো ভাষাটা জানেন না। ভুল করেছেন রেজিস্ট্রার, লজ্জা পাচ্ছি আমরা। প্রশাসনের উচিত এগুলোর শুদ্ধাভিযান করা। জানি না, প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেবেন কি না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো আমারও নজরে এসেছে এবং তাদের ভুল না করার নির্দেশও দিয়েছি। তাদের বলেছি, নোটিশে কেন ভুল বের হলো? বানান না জানলে ডিকশনারি দেখে নাও।