ক্যাম্পাস

রোল-রেজিষ্ট্রেশন নম্বরহীন খাতায় পরীক্ষার দাবি শিক্ষার্থীদের 

বিভিন্ন সময়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার পরীক্ষায় নম্বর টেম্পরিং এর অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে একটি বিভাগের নম্বর টেম্পরিং এর একটি অভিযোগ গড়িয়েছে উচ্চ আদালত পর্যন্ত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪টি বিভাগের প্রতিটিতেই পরীক্ষা হয় সেমিস্টার পদ্ধতিতে। বর্তমান পদ্ধতিতে পরীক্ষার খাতার ওপরে রোল আর রেজিষ্ট্রেশন নম্বর লিখতে হয় শিক্ষার্থীদের। এতে থেকে যায় স্বজনপ্রীতি ও নম্বর টেম্পরিং এর সব সুযোগ।

২০২২ সালে ফোকলোর বিভাগের (স্নাতকোত্তর ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) চার শিক্ষার্থী নম্বর টেম্পারিং এর অভিযোগ এনেছিল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ সাইফুল ইসলাম ও সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মেহেদী উল্লাহর বিরুদ্ধে। দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তারা উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

এর আগে অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে নম্বর কেলেঙ্কারির অভিযোগ আনে ওই বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ খাতা পুনঃমূল্যায়ন করতে বলা হয়। তাতেও সমাধান না হওয়ায় ঘটনা গড়ায় উচ্চ আদালত পর্যন্ত।

এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে একাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ব্যক্তিগত সম্পর্কের প্রভাবে শিক্ষার্থীদের খাতা মূল্যায়নের। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে এখনো চলছে এই সমস্যা। এর থেকে মুক্তি পেতে রোল ও রেজিষ্ট্রেশন নম্বরবিহীন খাতায় পরীক্ষা দিতে চায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন  বলেন, 'দুই-একটা বিভাগের নম্বর টেম্পারিংয়ের অভিযোগ সামনে এসেছে। কিন্তু আরও অনেক বিভাগের শিক্ষার্থীরাই এর ভুক্তভোগী। বিভিন্ন কারণে এসব বিষয় সামনে আনা যায় না। তাই রোল নম্বরহীন খাতায় পরীক্ষা হওয়া দরকার। তবেই মেধার সঠিক মূল্যায়ন হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বর্তমান সিস্টেমে শিক্ষকদের নিজেদের মধ্যে ঝামেলা বা কোন্দলের প্রভাব শিক্ষার্থীদের উপরে পড়ে। কোনো বিষয়ে দুর্বলতা থাকলে সেগুলো কোনো শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ আমরা পাই না। অন্য শিক্ষক নম্বর কমিয়ে দিবে সেই আশঙ্কা থাকে।  শিক্ষকদের নিজেদের রাজনীতিতে আমাদের ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের একের অধিক গ্রুপ এবং এইসব গ্রুপ মেইনটেইন করতে গিয়ে এবং অহংবোধ থেকে শিক্ষকরা নম্বর টেম্পারিংয়ের মতো কাজে নিজেদের জড়ান। অনেক সময় শিক্ষকদের রাজনীতির কারণে তার ভুক্তভোগী হতে হয় শিক্ষার্থীদের।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৬ এ সেমিস্টার পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলা থাকলেও পরীক্ষার খাতা সম্পর্কে কোনো নির্দিষ্ট বিধান উল্লেখ নেই। আইনের ৪১(১) ধারায় বলা হয়েছে, উপাচার্যের নিয়ন্ত্রণাধীন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পরীক্ষা পরিচালনার যাবতীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করবে।

বিষয়টি সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মোছা. জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমি নতুন দায়িত্বে এসেছি। পরীক্ষা পদ্ধতি আপডেট এবং উন্নত করার বিষয়টি পরিকল্পনায় আছে।

খাতায় কোডিং সিস্টেম চালু করার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, অবকাঠামো ও জনবল এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, আমরা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তর, পরীক্ষা পদ্ধতি, রেজাল্ট প্রদান, সার্টিফিকেট সবকিছু আধুনিক ও ডিজিলাইজেশন করার উদ্যোগ নিয়েছি। এই বিষয়টি নিয়ে কাজ চলমান আছে। খাতার বিষয়টি স্মার্ট করাও আমাদের পরিকল্পনায় থাকবে। আমরা পরীক্ষা পদ্ধতি ত্রুটিমুক্ত করার জন্য সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।