ক্যাম্পাস

ঘুরে এলাম বাণিজ্য মেলা

গত শুক্রবার ছিল ছুটির দিন। ক্লাস নেই, বছরের শুরুর দিক হওয়ায় পরীক্ষারও চাপ নেই। ভোর থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। গন্তব্য বাণিজ্য মেলা। প্রথম যাচ্ছি, তাই আনন্দটা একটু বেশিই ছিল। সকালের নাস্তা সেরে চলে গেলাম পরিবহন চত্বরে। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল লাল রঙা ডাবল ড্রেকার বাসটি। তবে কোনো আসন খালি ছিল না। একটু অপেক্ষা করতেই আরো একটি বাস এসে উপস্থিত। বাসে উঠতেই চলা শুরু করলো।

যেহেতু আমি পূর্বাচল যাবো। তাই বাস থেকে টেকনিক্যাল মোড়ে নেমে গেলাম। এরপর নতুন আরেকটি বাসে চড়ে কুড়িল বিশ্বরোড পৌঁছালাম। এদিকে মেলা উপলক্ষে বিশেষ বাসের ব্যবস্থা ছিল। ৩৫ টাকার টিকিটে খুব সহজেই পৌঁছে গেলাম মেলা প্রাঙ্গণে।

মেলার প্রধান প্রবেশদ্বারে দীর্ঘ লাইন। টিকিট নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই নজরে এলো দৃষ্টিনন্দন আলোকোজ্জ্বল পানির ফোয়ারার চারদিকে মানুষের সরব উপস্থিতি। কেউ ছবি তুলতে ব্যস্ত, কেউ আবার মুগ্ধ দৃষ্টিতে মুহুর্তটা উপভোগ করছে।

এবারের বাণিজ্য মেলায় প্রথম ছুটির দিন হওয়ায় দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। বেলা বাড়তেই মেলা প্রাঙ্গণ ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। শুধু ঢাকা শহর নয় আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকেও প্রচুর মানুষ এসেছিল। মেলায় কেউ এসেছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে, কেউ বা এসেছেন বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে। অনেকে আবার একাই এসেছেন। সবমিলিয়ে মেলার স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলো ছিল লোকে লোকারণ্য।

গৃহস্থালি সামগ্রী, বিস্কুট, আচার, আইসক্রিম, মেলামাইন পণ্য, পোশাক, প্রসাধনী, অলঙ্কার, বাচ্চাদের খেলনা, সিরামিক, ফার্নিচার আইটেম, ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র- কি নেই মেলায়? এসব কিনতে  ক্রেতাদের আগ্রহ দেখা গেছে।

বিদেশি তার্কিস স্টল ছিল বেশ দৃষ্টিনন্দন ও নজর কাড়া। তার্কিস স্টলে নারীদের পছন্দের জিনিসপত্র রয়েছে। এ ছাড়া ঘর সাজানোর চমৎকার লাইটিংসহ আসবাবপত্র রয়েছে । এছাড়াও চায়না, ইরানি স্টলেও মানুষের ঢল ছিল।

দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন ফার্নিচার প্যাভিলিয়নে দর্শনার্থীদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। আগ্রহ নিয়ে অনেকেই পছন্দের ফার্নিচার দেখছিলেন। অনেকে কোন কোন ফার্নিচার প্রতিষ্ঠানে কত ছাড় দিচ্ছে, তার খোঁজ-খবর নিচ্ছিলেন।

রোকেয়া জান্নাত নামে এক ক্রেতার সঙ্গে কথা হয়। তিনি একজন গৃহিণী। বলেন, ঘর সাজাতে ফার্নিচার জরুরি। মেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিত্যনতুন ডিজাইনের ফার্নিচার একসঙ্গে পাওয়া যায়। ফলে যাচাইয়ের সুযোগ থাকে। সেই সঙ্গে থাকে বিশেষ ছাড়।

মেলায় উৎপাদনকারীরা নিত্যনতুন ও অধিকতর মানসম্পন্ন পণ্য নিয়ে ভোক্তার সামনে উপস্থিত হন।  এতে করে দেশি-বিদেশি ভোক্তারা বিভিন্ন পণ্য ও সেবার সঙ্গে পরিচিত হবার সুযোগ পান। এতে করে  ক্রেতা-বিক্রেতা ও উৎপাদনকারীদের মধ্যে এক ধরনের প্রত্যক্ষ সংযোগ সাধন হয়।

বাণিজ্য মেলা উৎপাদনকারীদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে। যা পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি, পণ্যে বৈচিত্র্য আনা, মূল্যের ভারসাম্য রক্ষা এবং উৎপাদনকারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে। সেই সঙ্গে উৎপাদনকারীরা নতুন নতুন শিল্প স্থাপনে উৎসাহিত হয় এবং এতে করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

মেলা আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অবকাঠামো ও প্যাভিলিয়ন নির্মাণ, সজ্জিতকরণ, মালামাল বহন, ক্রয়-বিক্রয়সহ নানা কাজে প্রচুর জনবলের প্রয়োজন হয়। মেলার মাধ্যমে দক্ষ-অদক্ষ ও অর্ধ-দক্ষ জনবলের মৌসুমি কর্মসংস্থান হয়।

বিক্রেতারা সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেলা চলাকালে পণ্য কিনলে ক্রেতারা অনেক ছাড় পাবেন। মেলা উপলক্ষে নতুন নতুন ডিজাইনের পণ্য আনা হয়েছে। পণ্যে সব সময় ভেরিয়েশন থাকে। এ কারণে মানুষের আগ্রহ বেশি। এখন পর্যন্ত বিক্রয় তেমন না হলেও অনেক ক্রেতা আসছেন ও দেখছেন। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে এবার মানুষের আনাগোনা বেশি।

ওয়ালটনসহ বড় প্রতিষ্ঠানগুলো হলো এক একটি ব্র্যান্ড। ভোক্তার বা ক্রেতার কাছে মানসম্পন্ন পণ্যের প্রতিশ্রুতি দেয় তারা। ভোক্তারা একটি ব্র্যান্ডের ওপর বিশ্বাস রাখলে অতিরিক্ত খরচ হলেও সেখানেই তারা যেতে প্রস্তুত থাকেন। এজন্য বাণিজ্য মেলায় বড় বড় প্রতিষ্ঠানের পণ্যের দোকানে বেশি ভিড় দর্শনার্থীদের।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান  ইটালিয়ান, ভিশন ইলেকট্রনিক্স, বেস্ট বাই, রিগাল ফার্নিচার, ইফাদ মাল্টি প্রডাক্টস, সনি ইলেকট্রনিক্স, বেঙ্গল, ব্রাদার্স ফার্নিচার, হাতিল ফার্নিচার, ওয়াল্টন, যমুনা , নাবিস্কো, নাভানা, কোকাকোলা ফুডসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠানের স্টলগুলোতে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল অনেকটাই বেশি। পাশাপাশি তাদের পণ্যের বিক্রিও বেশি।

ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্যাভিলিয়ন ও স্টল দৃষ্টিনন্দন করে সাজিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্যাভিলিয়ন ও স্টলে থরে থরে সাজিয়ে রেখেছে নিজেদের পণ্য। দর্শনার্থীরা এসে সেসব পণ্য ঘুরে ঘুরে দেখছেন। সঙ্গে জানতে চাচ্ছেন মেলা উপলক্ষে কী কী অফার রয়েছে। কেউ কেউ পছন্দের পণ্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

জনবহুল ঢাকায় নগরবাসীর জন্য বাণিজ্য মেলা বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্রস্থল। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় কেনাকাটার সঙ্গে বিনোদনেরও সুযোগ রয়েছে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের। এবারও শিশুদের বিনোদনের জন্য স্থাপন করা হয়েছে মিনি শিশু পার্ক। হৈ-হুল্লোড় আর উচ্ছ্বাসে একটু বেশিই প্রাণবন্ত বাণিজ্য মেলার ছোট পরিসরের এ শিশুপার্ক। ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করে হাঁপিয়ে ওঠা যে কেউ মনে প্রশান্তি আনতে ঢু মারছেন সেখানে।

বাণিজ্য মেলা শুধু পণ্য বেচাকেনার জায়গা নয়, লাখো মানুষের মিলনমেলাও বটে। যেখানে প্রাণ, সেখানে তো আনন্দ থাকবেই। বাণিজ্য মেলায় প্রতিদিন হাজারো মানুষের দেখা মেলে। মানুষের সঙ্গে দেখা, মানুষের সঙ্গে কথা। এর চেয়ে আনন্দ আর কোথায় মেলে! আর এই আনন্দের মধ্য দিয়েই সবার জীবনের অভিজ্ঞতা বাড়ছে।

(লেখক: শিক্ষার্থী, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।)