ক্যাম্পাস

ছাত্রলীগের হামলায় ২ সাংবাদিক আহত, তদন্ত কমিটি গঠন

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে দুই সাংবাদিককে গুরুতর আহত করেছে ছাত্রলীগের একাংশের নেতারা। সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিবীণা হলের এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিবীণা হলের একটি কক্ষে সিট দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও মারামারিতে জড়ায় সক্রিয় ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপ। এতে আহত হয় একাধিক শিক্ষার্থী। এ নিয়ে  সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী লুবন মোখলেসের নেতৃত্বে লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী তুহীন, রায়হান, চারুকলার ২০১৭-১৮ সেশনের শাহরিয়ার এবং ২০১৯-২০ সেশনের সৌমিক জাহানসহ অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন সাংবাদিকদের উপর হামলা করেন। এসময় তাদের হাতে লাঠিসোটা, রড়সহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়।

এতে গুরুতর আহত হন দৈনিক যায়যায়দিনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আহসান হাবীব এবং আজকের পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ও সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ফাহাদ বিন সাইদ। আহতাবস্থায় তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাথার দান কেন্দ্রীয় মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ময়মনসিংহ মেডিক্যালে স্থানান্তর করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড সৌমিত্র শেখর আহত সাংবাদিকদেরকে মেডিক্যাল সেন্টারে দেখতে এসে বলেন, যারা হামলা করেছে, তারা যে-ই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

এদিকে মারামারির ঘটনায় সোমবার রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ মাসুম হাওলাদারকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- প্রক্টর সঞ্চয় কুমার মুখার্জি এবং ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক মেহেদী উল্লাহ।

বিচার দাবিতে মানববন্ধন 

মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় দ্রুত বিচার ও নিরাপত্তার দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা অংশগ্রহণ করে।

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি রাশেদুজ্জামান রনি, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আসলাম বেগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি নবাব মো. শওকত জাহান, সাধারণ সম্পাদক  জিহাদুজ্জামান জিসান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিফাত শাহরিয়ার প্রিয়ান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

এছাড়া ত্রিশাল প্রেসক্লাব, ত্রিশাল রিপোর্টস ইউনিটি নেতৃবৃন্দ এবং ময়মনসিংহে কর্মরত বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকরা সংহতি জানিয়ে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে।

এসময় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দৈনিক সমকালের ত্রিশাল প্রতিনিধি মতিউর রহমান সেলিম বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা যেভাবে হামলা করা হয়েছে, এটা নজিরবিহীন এবং অমানবিক। প্রশাসন কোনো কার্যকর ব্যাবস্থা না নিয়ে যেভাবে আচরণ করছে, তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

ত্রিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি খুরশিদুর আলম মুজিব বলেন, সাংবাদিকদের উপর হামলা যে কেউ করুক না কেন, তাদেরকে ছাড় দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে সারাদেশে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহণ না করলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করা হবে।

মানববন্ধন শেষে জড়িতদের স্থায়ী বহিষ্কার, গণমাধ্যমে সিসিটিভি ফুটেজ প্রদান, গণমাধ্যমে দেওয়া প্রশাসনের বিতর্কিত বক্তব্য প্রত্যাহার, সন্ত্রাসীদের বর্তমান অবস্থান ব্যাখা এবং আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আল্টিমেটামসহ পাঁচ দফা দাবিতে গণস্বাক্ষরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।