ক্যাম্পাস

ভোজ্য তেলের পুষ্টি নিরাপত্তায় হাবিপ্রবিতে তিসি নিয়ে গবেষণা

উচ্চ ফলনশীল ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন তিসির জাত উদ্ভাবনে গবেষণা করছেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) কৃষি অনুষদের অধ্যাপক  ড. শ্রীপতি সিকদার। এর জন্য তিনি দেশ-বিদেশ থেকে ২০টি জিনোটাইপ সংগৃহ করেছেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং এর অর্থায়নে ২০২২ সাল থেকে উচ্চ ফলনশীল তিসির জাত নিয়ে গবেষণা করছেন অধ্যাপক ড. শ্রীপতি সিকদার ও একদল শিক্ষার্থী।

এক সময় বাংলাদেশের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে এই রবি শস্যটি প্রচুর চাষ হলেও বর্তমানে অনেক কমে গেছে। সাধারণত ফলন তুলনামূলক কম হওয়া এবং রবি মৌসুমের অন্যান্য শস্যের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকায় কৃষকরা তিসি চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

গবেষকরা জানান, তিসি তেল ও আঁশ উৎপাদনকারী একটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। তিসিগাছ লম্বায় প্রায় ৮০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এর বেগুনি নীল ফুল ভোরবেলায় ফোটে এবং বিকেলে ঝরে যায়। এর কাণ্ডের বাকল বা ছাল থেকে আঁশ তৈরি করা হয়। বিদেশে সুন্দর লিনেন জাতীয় বস্ত্র তৈরিতে তিসির আঁশ ব্যবহৃত হয়। ঔষধি গুণসম্পন্ন তিসির বীজ থেকে উৎপন্ন হয় ভেষজ তেল, যাতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধী সব গুণাগুণ।এছাড়াও এই তেল বার্নিশ ও চিত্রকলার তৈলচিত্রের উপাদান হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। ছাপাখানার কলিতেও রয়েছে এর ব্যবহার।

গবেষণা বিষয়ে অধ্যাপক ড. শ্রীপতি সিকদার বলেন, আমাদের দেশে ভোজ্য তেলের সংকট দুর করার জন্য তিসির ওপর গবেষণা করছি। তিসি আবহমানকাল থেকেই আমাদের দেশে চাষ হয়ে আসছে। বর্তমানে নানা কারণে এর চাষ এখন কমে গেছে। কিন্তু এটি আমাদের দেশের পরিবেশের সঙ্গে উপযোগী একটি শস্য। আমরা ভারত ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তিসির প্রায় ২০টি জিনোটাইপ সংগ্রহ করি। সিলেকশন পদ্ধতিতে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে তিন বছর পর্যবেক্ষণ করে উচ্চ ফলনশীল ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন জাত উদ্ভাবন করার চেষ্টা করছি। এতে করে কৃষক তিসি চাষে আগ্রহী হবে এবং এর ঔষধি গুণের জন্য ভোজ্য তেলে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে তিসির উৎপাদন ও উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের গবেষণা কার্যক্রম দেখে মুগ্ধ হয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান কৃষিবিদ ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার ও বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. গোলাম ফারুক।

কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান কৃষিবিদ ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার বলেন, আশা করছি হাবিপ্রবি থেকে আমরা তিসির একটি উচ্চ ফলনশীল জাত পাবো এবং এ শস্য ধরে রাখতে পারবো। এই গবেষণা আমাদের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়ক হবে।

তিসি গবেষণা মাঠ পর্যবেক্ষণ করে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. গোলাম ফারুক বলেন, গবেষণা মাঠের তিসি গাছগুলোর অনেক সুন্দর বৃদ্ধি হয়েছে এবং কোনো রোগ-বালাই নেই। হাবিপ্রবি এ ধরনের গবেষণার মাধ্যমে এসব শস্যকে ধরে রাখছে। এর দীর্ঘমেয়াদী পূর্ণ গবেষণার মধ্যমে দেশবাসী এর উপকারিতা সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাবে এবং এই তৈল জাতীয় শস্যের গ্রহণ যোগ্যতা বাড়বে।

তিসি গবেষণার প্রসংশা করে হাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক  ড. এম. কামরুজ্জামান বলেন, যেহেতু তিসির মেডিসিনাল ভ্যালু অনেক বেশি। এর ওপর গবেষণা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। বর্তমানে আমাদের সেন্ট্রাল ল্যাব ও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। আশা করি, এসব ব্যবহার করে তিসি নিয়ে আরও উচ্চতর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হবে।