ক্যাম্পাস

দর্শনার্থী মুক্ত অন্য এক জাবি

মুঘল আমলে বাংলার রাজধানীর নামের সঙ্গে মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রাখা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। রাজধানী ঢাকা থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে সবুজে ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ বিশ্ববিদ্যালয়টি ‘সাংস্কৃতিক রাজধানী’ হিসেবে খ্যাত। সবুজ বনভূমির মাঝে লাল ইটের তৈরি ইমারত মনোরম ক্যাম্পাসের রূপ যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

শুক্র-শনিবার, এই দুই সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বহিরাগত দর্শনার্থীদের আগমনে এই ক্যাম্পাস যেন রূপ নেয় ইকোপার্ক বা টুরিস্ট স্পটে। তবে গতকাল শুক্রবার ও আজ শনিবার এই দুই ছুটির দিনে দেখা গিয়েছে তার ভিন্ন চিত্র। অপেক্ষাকৃত কম ছিল দর্শনার্থী ও বহিরাগতদের আগমন। এতে যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ।

সম্প্রতি ধর্ষণকাণ্ডে উত্তাল জাবি ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকাতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গণদাবির মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসে বহিরাগতগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। সিন্ডিকেট সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকগুলোতেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। অনিবন্ধিত রিকশা চলাচল বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি ভাসমান দোকানগুলোও উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কঠোরতায় বহিরাগতদের এই সংখ্যা একেবারেই কমে এসেছে। ফলে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে পাচ্ছে প্রকৃত পড়াশোনার পরিবেশ।

শুক্রবার ও শনিবার এ দুই ছুটির দিনে সরেজমিনে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের দর্শনীয় অন্যতম স্থান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, সেলিম আল দিন মুক্ত মঞ্চ, বটতলা, টিএসসি, মুরাদ চত্বর, মুন্নি স্মরণীসহ বেশকিছু স্থানে তাদের আনাগোনা ছিল হাতে গোনা।

সাভারের নবিনগর থেকে ঘুরতে আসা এক দম্পতি জানান, ক্যাম্পাসে প্রবেশের সময় বাধার সম্মুখিন হয়েছিলেন তারা। নিরাপত্তাকর্মীরা জিজ্ঞাসাবাদ করে করে প্রবেশ করতে দিচ্ছিল। তার ভাতিজা জাবির ছাত্র হওয়ায় প্রবেশ করতে পেরেছেন তারা। বাসা থেকে কাছাকাছি হওয়া সপ্তাহান্তে ছুটির দিনে তিনি ঘুরতে এসেছেন। সঙ্গে তাদের দুটি বাচ্চা আছে। তবে সম্প্রতি আলোচিত ঘটনায় বহিরাগত প্রবেশে প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হোসেন মো. আকবর লাম বলেন, বহিরাগত প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী বান্ধব পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এতে জাবি ক্যাম্পাস  একটি বিনোদন কেন্দ্রের পরিবর্তে একটি আদর্শ  বিদ্যাপিঠ হিসেবে আত্মপ্রকাশ কর‍তে শুরু করেছে। ক্যাম্পাসের এমন পরিবর্তনে ছাত্র শিক্ষক ও কর্মচারীবৃন্দ অনেক আনন্দিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার প্রধান সুদীপ্ত শাহীন রাইজিংবিডিকে বলেন, গতকালের চেয়ে আজ ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি আরও ভালো। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্যাম্পাসে কোনো বহিরাগত এবং অনিবন্ধিত অটোরিকশা চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। পাশাপাশি ভাসমান দোকানসহ যেসব জিনিস বহিরাগতদের আকৃষ্ট করে, সেগুলো উচ্ছেদ করা হচ্ছে। ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়নে আমরা পুরো টিম নিয়ে মাঠে নেমেছি।

তিনি বলেন, আজ সিটি ইউনিভার্সিটির তিনজন শিক্ষার্থীকে গাঁজাসহ আমাদের নিরাপত্তা শাখা আটক করেছিল। পরবর্তীতে তাদের অভিভাবকদের ডেকে এনে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, গতদিনের ধারাবাহিকতায় আজও ভালো কাজ করছি আমরা। পুরো সিকিউরিটি টিম মাঠে আছে, কাজ করছে। পরিস্থিতি মোটামুটি গতকালের মতই আছে। সিটি ইউনিভার্সিটির তিনজন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে গাঁজা খাচ্ছিল। তাদেরকে আটক করে সিকিউরিটি অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছি। 

পাশাপাশি বটতলার ভাসমান গহনা ও কাপড়ের দোকানগুলোর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, এই দোকানগুলো ভাসানী হলের নিয়ন্ত্রণে। এগুলো ভাসানী হল কর্তৃপক্ষের দেখা উচিৎ।

উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, ক্যাম্পাস বহিরাগতদের প্রবেশ ও অস্থায়ী দোকানপাট নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া অছাত্র ও পোষ্যদের আবাসিক হল থেকে বের হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে। তারা বের না হলে বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে জাবির মীর মশাররফ আবাসিক হলের ৩১৭ নং কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে কৌশলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন ছাত্রলীগের মোস্তাফিজুর রহমান ও মামুনুর রশীদ মামুন। এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/০৩) এর ৯(৩) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী নারীর স্বামী। তার প্রেক্ষিতে মূল অভিযুক্তসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।

এ ঘটনার জেরে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।