ক্যাম্পাস

নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের বৃত্তির টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকচক্র

প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে টাকা হারিয়েছে উচ্চমাধ্যমিকে বৃত্তিপ্রাপ্ত নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) বিভিন্ন বিভাগের অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী। মোবাইল নাম্বারে কল দিয়ে বিভিন্ন  শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা পরিচয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। চক্রটি একেকজন শিক্ষার্থী থেকে ৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নোটিশ দিয়ে বৃত্তিপ্রাপ্তদের তথ্য চান। পরবর্তীতে আমরা প্রয়োজনীয় সব তথ্য বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার অফিসে জমা দিয়েছি। সেখান থেকেই আমাদের তথ্য পাচার হচ্ছে। মোবাইল ফোনে অভিভাবকদেরকে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করার কারণে অনেকের অভিভাবক এটা যে প্রতারণা বুঝতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের তথ্যের নিরাপত্তা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় এর দায় এড়াতে পারে না।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষার্থী কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বোর্ডের অধীনে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন। এক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, তিনি ঢাকা বোর্ড থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিলেও তার অভিভাবককে কল করে কুমিল্লা বোর্ডের কর্মকর্তা পরিচয়ে বৃত্তির সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট পরিবর্তনের বিষয়ে কথা বলেছে প্রতারক চক্র।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সাধারণত উচ্চমাধ্যমিকে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বোর্ড থেকে দুই ক্যাটাগরিতে বৃত্তি দিয়ে থাকে। মেধা বৃত্তিপ্রাপ্তরা চার বছরে ৪৬ হাজার ৫০০ ও সাধারণ বৃত্তি প্রাপ্তরা ২১ হাজার টাকা পেয়ে থাকে বোর্ড থেকে।

শিক্ষার্থীদের থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের পলি মজুমদার, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের বেনজির জাহান জেমিমা ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের রাহাতুল ইসলাম রাফির অভিভাবকের কাছ থেকে যথাক্রমে ৬০ হাজার, ১০ হাজার ও ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। প্রতারক চক্রের কাছে ১০ হাজার টাকা করে হারিয়েছেন বায়োটেকনলোজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী নিশাত মরিয়ম ও ফুড টেকনলোজি অ্যান্ড নিউট্রিশন সাইন্স বিভাগের ২০২২-২৩ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান হিমেল।

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী বেনজির জাহান জেমিমার অভিযোগ, ০১৩২৩৯১১১৫৭ নম্বর থেকে কল দিয়ে নিজেদের বোর্ড সদস্য পরিচয় দেয় প্রতারকচক্র। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীর নাম, বাবা-মায়ের নামসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়ে উচ্চমাধ্যমিকের বৃত্তির টাকা প্রদানের অ্যাকাউন্ট পরিবর্তন করার কথা বলে চক্রটি। পরবর্তীতে অভিভাবকের কার্ডের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে টাকা উত্তোলন করে নেয় প্রতারকরা।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তামজিদা দেওয়ান মৃত্তিকা জানান, একই নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে তার সব তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করে পূর্বের অ্যাকাউন্টে আর বৃত্তির টাকা আসবে না বলে জানানো হয়। পরবর্তীতে এটিএম কার্ডের তথ্য চাইলে অভিভাবক কর্তৃক তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বললে কল কেটে দেয়। পরবর্তীতে আর যোগাযোগ করেনি প্রতারকরা।

অনেক শিক্ষার্থীদের ফোন দিয়ে টাকা নিতে না পেরে গালিগালাজও করেছে প্রতারকরা। এক শিক্ষার্থী প্রতারকের কাছে টাকা ফেরত চাইলে প্রাপ্ত ফোন রেকর্ডে প্রতারককে বলতে শুনা যায়, ‘অনেকের লাখ লাখ টাকা চলে গেছে, আপনার ৫ হাজার টাকা কোনো টাকা হইলো মিয়া?’

তবে ভিন্নমত দিয়েছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) সাইবার সেন্টারের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এআরএম মাহামুদুল হাসান রানা। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের এসব তথ্য বোর্ড থেকেও ছড়াতে পারে। নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মুঠোফোনে শেয়ার করার আগে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের আরও সচেতন হওয়া দরকার। আমাদের কোন তথ্য দরকার হলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অফিসিয়ালি চাওয়া হবে। তারপরও ফোনে কেউ যোগাযোগ করে তথ্য চাইলে তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। আমরা বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এদিকে চক্র শনাক্তকরণে বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে। এই বিষয়ে ভুক্তোভোগী শিক্ষার্থীদের নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন পুলিশ সদর দপ্তরের  মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের পুলিশ সুপার এনামুল হক সাগর। তিনি বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা তাদের নিকটস্থ পুলিশের যেকোনো স্টেশনে যোগাযোগ করে আমাদের নিকট অভিযোগ জমা দিলে আমরা যথাযথ আইনী সহায়তা প্রদান করব।

তবে ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, এই বিষয়ে যোগাযোগ করতে গেলে অভিযোগ করে কোন লাভ হবে না বলে নোয়াখালীর সুধারাম থানা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আমরা জিডি করতে গেলে থানা থেকে বলা হয়, এটি অভিযোগ আকারে দিতে হবে। পরে অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ জানায়, প্রতারক চক্রের সদস্যরা অপরিচিত কারো নাম্বার ব্যবহার করে এসব প্রতারণা করে থাকে। অনেকসময় দেখা যায়, এভাবে যাদের ধরে আনা হয়, ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা থাকে না। এজন্য অভিযোগ করেও প্রকৃত আসামি খুঁজে পাওয়া যায় না।

এই বিষয়ে নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এই বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। ভুক্তোভোগী শিক্ষার্থীরা আমাদের অফিসে যোগাযোগ করলে তাদের যথাযথ আইনী সহায়তা প্রদান করবো। একই সঙ্গে প্রতারক চক্র বের করে আনতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল-আলম বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার দপ্তরে বিষয়টি জানালে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করব। পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা প্রতারকদের বের করার চেষ্টার করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।