ক্যাম্পাস

উপাচার্য-শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে ভর্তি আবেদনে পিছিয়ে কুবি

গুচ্ছভুক্ত ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়ের ভর্তি আবেদনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) গত বছর (২০২২-২৩) শীর্ষস্থানে থাকলেও এ বছর (২০২৩-২৪) সেটি ধরে রাখতে পারেনি। এ বছর আবেদনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে অবস্থান করছে কুবি।

গত বছরের তুলনায় এ বছর আবেদন কম পড়ার কারণ  হিসেবে উপাচার্য এবং শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্বই অন্যতম কারণ বলে ধারণা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষক ও প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা। টানা তিন মাসের অধিক সময় ধরে চলমান উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতির বিবাদের ফলে বারবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতি অভিভাবক মহল ও ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করছেন তারা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের ডিন এবং ভর্তি পরীক্ষার টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান ড. মো. সাইফুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯টি বিভাগের ১ হাজার ৩০টি আসনের বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছে ১৮ হাজার ৯৮০টি। প্রতি আসনের বিপরীতে প্রায় ১৮টি আবেদন জমা পড়েছে। যেখানে গত বছর ১ হাজার ৪০টি আসনের বিপরীতে প্রায় ২৩ হাজার আবেদন জমা পড়েছিল। আসন প্রতি আবেদন ছিল প্রায় ২১টি।

তিনি বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর আবেদন কম পড়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায়, আলহামদুলিল্লাহ।’

এ ব্যাপারে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, ‘যে ক্যাম্পাসে শিক্ষকরাই নিরাপদ না সেখানে শিক্ষার্থীরা আলাদা অপশন খুঁজবে এটাই স্বাভাবিক। বড় বড় ক্যাম্পাসে উপাচার্যই এ ব্যাপারগুলো দেখেন। কিন্তু, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষকদের উপর যে হামলা হয়েছে, সেটার জন্য কোনো তদন্ত কমিটি এখন পর্যন্ত গঠন করা হয়নি। পরে গত ২৮ এপ্রিল উনি নিজে সন্ত্রাসী ডেকে এনে শিক্ষকদের উপর হামলা করিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়কে আইন, নিয়ম-নীতি বা শিক্ষার পরিবেশের মধ্যে রাখার ব্যাপারে তার মধ্যে কোনো ধরনের আগ্রহ নেই। তার আগ্রহ হচ্ছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বোর্ড, সিন্ডিকেটকে প্রভাবিত করে নিয়োগ বাণিজ্য করা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেজ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেভাবে ডেভেলপ করেছিল, তার (উপাচার্যের) কর্মকাণ্ডে সাময়িকভাবে সেটা কিছুটা কমেছে। তবে আমরা বিশ্বাস করি, অনিয়মের ফলে যেখানে প্রতিরোধ প্রতিষ্ঠিত হয় সেখানেই ভালো কিছুর সম্ভাবনা তৈরি হয়। আশা করছি ইদের পর পজিটিভ কিছু হবে।’

উপাচার্য- শিক্ষকের মধ্যকার দ্বন্দ্বের জন্য এবার আবেদন কম পড়েছে কি না এমন প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আসলে ঠিক এমনটা বলা যাচ্ছে না।’

তবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন বলেন, ‘শিক্ষক সমিতির নেতাদের রেগুলার ক্লাস বন্ধ রাখা ও বিভিন্ন হাঙ্গামার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা খারাপ ইমেজ তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই ঘটুক, যেভাবেই আমাকে কাজ করতে বাধা প্রদান করুক না কেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে লিডিং পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার যে ভিশন আমি নিয়েছি, সেটাতেই অঙ্গীকারবদ্ধ থাকব। তবে শুধু আমাকে অঙ্গিকারবদ্ধ থাকলে হবে না, এ ব্যাপারে প্রশাসনে কর্মরত থাকা ব্যক্তি এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যথাযথ সহায়তা লাগবে।’