ক্যাম্পাস

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও অডিটোরিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনাই হয়নি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) অধিকতর উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের অন্যতম অডিটোরিয়াম ভবন নির্মাণ। কিন্তু পাশ হওয়া প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও আলোর মুখ দেখেনি অডিটোরিয়াম। এমনকি এ ভবনটি নির্মাণের কোনো পরিকল্পনাই দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নে 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প' পাশ হয়। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে ১০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসময়ে  শিক্ষা ও প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়।

পরে ২০১৮ সালে নতুন করে ২৫০ কোটি টাকায় পূর্বের প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী পাশ হয়। এরপর ২০১৯ সালে সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তর এবং প্রকৌশল দপ্তরের নিকট হস্তান্তর করা হয়। এসময় নতুন করে পাশ হয় ভারটিক্যাল এক্সটেনশনসহ ২ হাজার আসন বিশিষ্ট একটি অডিটোরিয়াম ভবন নির্মাণ কাজ। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা দপ্তরের মাধ্যমে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। বর্ধিত সময়ে প্রকল্পের অন্তর্গত ১৪টি অংশের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটির কাজ শুরু করা হয়েছিল। এর মধ্যে, সিনিয়র শিক্ষকদের জন্য পঞ্চম তলা উর্দ্ধমুখী আবাসিক ভবনের সম্প্রসারণ কাজ, ৪০০ আসন বিশিষ্ট ছাত্র হল-৩, ৪০০ আসন বিশিষ্ট ছাত্রী হল-২ উল্লেখযোগ্য।

তবে লোকচক্ষুর আড়ালে পড়ে যায় প্রকল্পের অন্যতম একটি অংশ ২ হাজার আসন বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম ভবন। প্রকল্পের মেয়াদোর্ত্তীণ হলেও অডিটোরিয়াম ভবন নির্মাণ করার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়নি কোনো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এমনকি পরিকল্পনাও করা হয়নি এর কার্যাদেশ নিয়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের সর্বশেষ জরীপে দেখা যায়, মূল প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালে শেষ হয়ে যায়। পরে নতুন করে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। এসময়ের মধ্যে প্রকল্পের ১৪টি অংশের মধ্যে চারটির কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়। বাকি থাকে ১০টির কাজ, যার কোনোটিই শতভাগ সম্পন্ন করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তর এবং প্রকৌশল দপ্তর। এরপর নতুন করে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে আবারও প্রকল্পের সংশোধনী পাশ করা হয়। এসময় পূর্বের প্রথম সংশোধনী থেকে মাত্র ২ কোটি টাকা বৃদ্ধি করে ২৫২ কোটি টাকা করা হয়।

জরীপে আরও দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পে নতুন করে যুক্ত হওয়া ২ হাজার আসন বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম ভবন নির্মাণের জন্য আরডিপিতে বরাদ্ধ করা হয় ৩৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। কিন্তু ওই বছর এর জন্য ধরা হয়নি প্রাক্কলিত মূল্য, কার্যাদেশ জারিসহ করা হয়নি দরপত্র। এমনকি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানও নির্বাচন করা হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পে দেখানো হয়েছে ঠিকাদার নির্বাচন প্রক্রিয়াধীন।

অডিটোরিয়াম ভবন নির্মাণ বাস্তবায়ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের প্রধান তুহিন মাহমুদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি সাড়া দেননি।

তবে দপ্তরের সহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান সুমন বলেন, প্রজেক্টের মেয়াদ ছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ওই সময় আমরা প্রথমে ২ হাজার আসন বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম ভবন নির্মাণ করার পরিকল্পনা করেছি। যেটা দুই বা তিন তলা বিশিষ্ট হতে পারে। এর জন্য আরডিপিতে বরাদ্ধ ছিল ৩৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। কিন্তু আমাদের কনসালটেন্ট হিসেব করে দেখেছিলেন, এ টাকার মধ্যে ২ হাজার আসন বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম ভবন নির্মাণ করা সম্ভব না। এ টাকার মধ্যে ৮০০ আসন বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা সম্ভব। ২ হাজার আসন বিশিষ্ট ভবন তৈরি করতে প্রয়োজন ১০০ কোটি টাকার মত।

প্রকল্পটি আবারও সংশোধন করা হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকল্প সংশোধনের বিষয়টি অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আমরা এ প্রকল্পটি সংশোধন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের নভেম্বরে সংশোধন করে পাশ করে দিয়েছে। তবে এটা একেনেকে সংশোধন করা হলে প্রকল্পের মেয়াদ আরও বেশি বৃদ্ধি পেত। মন্ত্রণালয় থেকে সংশোধন করে ৮০০ আসন বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম ভবন নির্মাণ করার পরিকল্পনা করে দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি হওয়ায় কনসালটেন্টের সঙ্গে আমাদের চুক্তির মেয়াদও শেষ হয়ে গিয়েছিল। ফলে আমরা নতুন করে কনসালটেন্টের নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছি। হয়তো এ মাসের মধ্যে কনসালটেন্ট নিয়োগ হয়ে যাবে। এরপর আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যে আমরা অডিটোরিয়াম ভবনটি দৃশ্যমান করতে পারব।