ক্যাম্পাস

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবারও শিক্ষকদের কর্মবিরতি

জারিকৃত সর্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রত্যাহারসহ তিন দফা দাবিতে রোববার (৭ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করা হয়েছে। রাইজিংবিডির বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)

শুক্রবার ও শনিবার দুইদিনের সাপ্তাহিক শেষে ফের কর্মবিরতি শুরু করেছেন জাবি শিক্ষকরা। সকাল ৯টা থেকে কর্মবিরতি শুরু হয়। এদিন সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের নিচ তলায় পূর্ব দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষকবৃন্দ।

অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক সুলতানা আক্তার বলেন, ‘শিক্ষকরা কি গাড়ি, বাড়ি কিংবা তেলের টাকা চেয়েছে? আমরা আমাদের সঙ্গে হওয়া বঞ্চনার বিরুদ্ধে কথা বলছি। আমাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা এটাই যে, এই বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপনের কারণে মেধাবীরা এ পেশায় আকর্ষিত হবে না। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় মেধাবী শিক্ষক শূন্য হয়ে যাবে।

কোটা ব্যবস্থার সমালোচনা করে তিনি বলেন, জাতিকে মেধাশূণ্য করার জন্য যে কোটা ব্যবস্থার পুনর্বহাল করা হচ্ছে, আমি তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ হওয়া দরকার। আমি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করি। তাদের সন্তান পর্যন্ত কোটা বহাল রাখা হোক। কিন্তু নাতি—নাতনি পর্যন্ত সেটি হতে পারে না।

জাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্দোলন থেকে সরেও আসলেও আমরা পিছপা হবো না। আমাদের শিক্ষাখাত নিয়ে এক ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। জাতিকে অন্ধকারে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। প্রাথমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রত্যেকটা লেভেলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অবহেলিত। প্রত্যয় স্কিমকে আমরা কখনই পেনশন স্কিম বলতে পারি না।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)

প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন কুবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছাদেক হোসেন মজুমদার বলেন, আমরা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক আজ থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাচ্ছি। এর আগে আমরা অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছি। আশা করেছিলাম সরকার কোনো সিদ্ধান্ত জানাবেন, কিন্তু সেটা হয় নি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মবিরতি চলবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. মহসিন বলেন, আমাদের যে আগের পেনশন নীতি ছিল, আমরা তা ফেরত চাই। এ নতুন পেনশনের স্কিম বাতিল না করা হলে আমরা কর্মবিরতি পালন করতে থাকবো। আজ থেকে আমরা সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাচ্ছি।

এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন ও কর্মচারী পরিষদ ১ জুলাই থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)

পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারসহ তিন দফা দাবিতে পঞ্চম দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছে নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি। পাশাপাশি পেনশন স্কিম নীতিমালা প্রত্যাহার ও ইউজিসির অভিন্ন নীতিমালায় ১২ দফা সংযোজনের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন।

শিক্ষক -কর্মকর্তাদের আন্দোলনের ফলে বন্ধ রয়েছে ক্লাস-পরীক্ষা কার্যক্রম। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একযোগে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু হয়। এর পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে অচলাবস্থা বিরাজ করছে।