ক্যাম্পাস

জাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি

কোটা আন্দোলন ঘিরে দেশব্যাপী হত্যা, গণগ্রেফতার, হামলা, মামলা ও গুমের প্রতিবাদে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরাও এতে অংশ নেন।

বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদ ভবন সংলগ্ন মহুয়া মঞ্চের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার সংলগ্ন সড়ক, নতুন প্রশাসনিক ভবন প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ করেন তারা।  

এছাড়া সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী লিয়নসহ গ্রেফতারকৃত শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা স্বাক্ষর করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিহা বলেন, যারা আন্দোলনে বাধা সৃষ্টি করছে, জনগণের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বেঁচে খেতে চায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোনো একক দলের চেতনা নয়। দিনের পর দিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নাম করে মানুষের উপর স্বৈরশাসন, দুঃশাসন, গুলি চালালে জনগণ আপনাকে রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্মের নাম করে তারা জনগণের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিল, এখন আপনারা স্বাধীন দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নাম করে জনগণের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন।

তিনি বলেন, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নাকি নিষিদ্ধ করতে চায় সরকার। তাদেরকে নিষিদ্ধ করার দাবি তো আরও অনেক আগেই উঠেছিল। জাহানারা ইমাম যখন রাজাকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন, তখন আপনারা তাদের নিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করলেন, ধরপাকড় করলেন, মানুষকে মারলেন, গাড়ি পোড়ালেন। তখন তো আপনি জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের দাবি তোলেননি। এখন কেন তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে চাচ্ছেন?

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলেন, সরকার একটি মিথ্যার উপর দাঁড়িয়ে আছে। এ দেশে এখন কোনো গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা আছে- এটি মনে করার কোনো কারণ অবশিষ্ট নেই। সরকার আজ পর্যন্ত এত নির্মমতা, হত্যাকান্ড, নির্যাতন, নিপীড়নের পরেও কোনো প্রকার দায়-দায়িত্ব স্বীকার করেনি। অথচ আমরা স্পষ্টভাবে দেখেছি এই সহিংসতা ছড়ানোর পেছনে একজন মন্ত্রীর কী পরিমাণ দায় রয়েছে। তিনি একটি বিশেষ ছাত্রসংগঠনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তার পরেই কিন্ত সংর্ঘষ ছড়িয়েছে।

তিনি বলেন, আপনারা যে ভয়ের সংস্কৃতি দিয়ে সবার মুখ বন্ধ করতে চেয়েছিলেন, সেটাতে আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন। আপনারা সত্য স্বীকার করতে শিখুন, ভূল স্বীকার করতে শিখুন। প্রত্যেকটি হত্যাকান্ডের সুষ্টু তদন্তের মাধ্যমে বিচার করুন।

নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মানস চৌধুরী বলেন, সরকার আশা করছিলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের উত্তর হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট থেকে যখন রায় হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল যখন বন্ধ থাকবে ততক্ষণে সবকিছু শান্ত করে ফেলা যাবে। কিন্তু তার মধ্যে পুরো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে কতগুলো উস্কানি দেওয়ার কারণে। নিরপরাধ মানুষের মৃত্যুতে বাংলাদেশের এমন কেউ নেই, যে হাহাকার করেননি। কান পাতলেই সরকার ও সরকারপন্থী গায়েনরা এ সমস্ত কথা শুনতে পারতো। এখন যে ধরনের ধরপাকড় চলছে, সে মডেলটি খুবই পরিচিত। তবে স্বাধীন বাংলাদেশে এমন ধরপাকড়ের ইতিহাস নাই।

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াজুল ইসলাম রিহানের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শামীম হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সমন্বয়ক আব্দুর রশিদ জিতু ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী অমর্ত্য রায় প্রমুখ।