ক্যাম্পাস

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ শুরু

দেশের সব মন্ত্রণালয়ের ফ্যাসিবাদের দোসর সচিব ও কমিশনের প্রধানদের মঙ্গলবারের (১৩ আগস্ট) মধ্যে অপসারণ ও বৈষম্যের শিকার আমলাদের সুযোগের সমতা নিশ্চিতসহ চার দফা দাবি আদায়ে ফের রাজপথে নেমেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এসময় শিক্ষার্থীরা স্লোগানে স্লোগানে শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবি জানান।

মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সপ্তাহব্যাপী ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’র অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হন। সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়া, ভিসি চত্বর থেকে ‘রোড মার্চ’ করে শহিদ মিনারে এসে আন্দোলনে শহিদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন এবং দোয়া প্রার্থনা করেন।

এসময় শিক্ষার্থীদের ‘ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনী হাসিনার ফাঁসি চাই’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, গণহত্যার বিচার চাই’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনী কেন বাহিরে’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেবো রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘শহিদের রক্ত, বৃথা যেতে দেবো না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে শোনা যায়।

এর আগে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চার দফা দাবি ঘোষণা করেন। সেগুলো হলো-

১. ফ্যাসিবাদী কাঠামো ব্যবহার করে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দল ও সরকার‍ যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, সেগুলোর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।

২.  সংখ্যালঘুদের উপর আওয়ামী লীগ এবং তাদের শরিক দলগুলোর পরিকল্পিত হত্যা, ডাকাতি ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থানকে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। সংখ্যালঘুদের ন্যায্য দাবি মেনে নিতে হবে। 

৩. প্রশাসন ও বিচার বিভাগে যারা ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে হামলা, মামলা, এবং হত্যাযজ্ঞকে বৈধতা দিয়েছে এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বারবার কায়েমের চেষ্টা করছে, তাদের দ্রুততম সময়ে অপসারণ ও নতুন সরকারে তাদের নিয়োগ বাতিল করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। 

৪. প্রশাসন ও বিচার বিভাগে যারা এতোদিন বৈষম্যের শিকার হয়েছে, তাদের জন্য দ্রুততম সময়ে সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে হবে।

রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিচারব্যবস্থা নিয়ে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, বিগত ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের বিচার বিভাগ ধ্বংস করে দিয়েছে। নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে নিজেদের সুবিধার্থে দলীয় লোক বসিয়েছে। প্রশাসনকে ব্যবহার করে নিরীহ জনগণ ও সাধারণ ছাত্র জনতার উপর ন্যাক্কারজনক হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে বিচার নিশ্চিত করেনি। নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। তার ভুক্তভোগী হয়েছেন হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষ।

তিনি আরও বলেন, এই ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার ও তার দোসরদের যতদিন না বিচার করা হবে, শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। অবিলম্বে খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের দেশে এনে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ ও ছাত্র জনতার হত্যাকাণ্ডের বিচারে সাজা দিতে হবে।

সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, সব মন্ত্রালয়ের সচিব ও সব কমিশনের প্রধানকে আজকের মধ্যে অপসারণ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, আইন কমিশনসহ সব কমিশনে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো বসে আছে। আজকের মধ্যেই সব ফ্যাসিস্ট আমলাদের পদত্যাগ নিশ্চিত করতে হবে এবং সৎ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিক আমলাদের নিয়োগ দিতে হবে।

ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক এবং গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক আকতার হোসেন বলেন, নিরীহ মানুষ ও ছাত্র জনতার লাশের উপর দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো স্বৈরাচারের হাত থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরা শহিদ ভাইদের রক্তের দামে কেনা স্বাধীন বাংলাদেশকে নস্যাৎ হতে দেব না। প্রয়োজনে নিজের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করবো। ফ্যাসিস্টদের দোসররা এখনো এ দেশেই আছে। তারা আমাদের রক্তের দামে কেনা এই স্বাধীনতাকে ভূলুণ্ঠিত করার জন্য বিভিন্নভাবে পায়তার করছে। অবিলম্বে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।