ক্যাম্পাস

এবার অনাস্থার অভিযোগ এনে সরে দাঁড়ালেন জবির ১৪ সমন্বয়ক

এবার অনাস্থার অভিযোগ এনে সরে দাঁড়ালেন জবির ১৪ সমন্বয়ক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সমন্বয়ক কমিটির ১৪ জন শিক্ষার্থী অপর সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে অনাস্থার অভিযোগ এনে এ প্ল্যাটফর্ম থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। ২৭ সদস্যের সমন্বয়ক কমিটির মধ্যে বামপন্থীরা এ ঘোষণা দেন।

শনিবার (১৭ আগস্ট) এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে বামপন্থী সমন্বয়করা পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

জবির ইকরামুল হক সাজিদসহ সব শহিদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে এবং এই আত্মত্যাগকে অঙ্কুরে বিনষ্ট হতে না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেন, বিজয় অর্জনের পর এখন পর্যন্ত তালিকাভুক্ত ২৭ জন সমন্বয়কের অধিকাংশের উপস্থিতিতে কোনো প্রকার সভায় বসা সম্ভব হয়নি। যখনই বসার চেষ্টা করা হয়েছে, সেটা নানাভাবে এড়িয়ে গিয়েছেন মাসুদ রানা ও নূর নবী। অথচ কোনো প্রকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ ছাড়াই একের পর এক কর্মসূচি আর দাবি এই ব্যানার থেকে উত্থাপন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নূর নবীর স্বেচ্ছাচারিতা অনেক বেশি লক্ষণীয়। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ‘আমি যা বলব তা-ই হবে’ এমন বচনভঙ্গি অনেককেই মনঃক্ষুণ্ন করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মতবিনিময় সভার নামে ১১ আগস্ট যে ‘মব ট্রায়াল’র আয়োজন করা হয়েছে। আমরা তা সমর্থন করি না। ‘গোপন নথি গায়েব করা হচ্ছে’ বলে যেভাবে শিক্ষার্থীদের উসকে দেওয়া হয় এবং পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ নাসির উদ্দীন আহমদ স্যারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়, আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। এরপর যখন আমরা সবাই একমত হই, তিনজন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে শিক্ষকেরা নথিগুলো যাচাই করবে— তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু বকর, নূর নবীর নির্দেশে উপাচার্য ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। শিক্ষার্থীদের না জানিয়ে এ রকম হঠকারী পদক্ষেপের উদ্দেশ্য কী?

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আওয়ামী ফ্যাসিস্টে পক্ষ নিয়ে যে প্রশাসন আমাদের  বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিল, তার পদত্যাগ ছিল ছাত্রদের দাবি। তার পরিপ্রেক্ষিতে ভিসি, রেজিস্ট্রারসহ সম্পূর্ণ প্রক্টরিয়াল বডি পদত্যাগ করে। কিন্তু সন্দেহের উদ্রেক হয় তখনই, যখন কোষাধ্যক্ষের পদত্যাগের প্রশ্নে ওই সমন্বয়কেরা ভিন্ন সুরে কথা বলেন এবং তারা কোষাধ্যক্ষকে বহাল তবিয়ত রাখার ব্যাপারে সচেষ্ট হন।

বামপন্থী এ সমন্বয়করা বলেন, জবির ‘হল উদ্ধার আন্দোলন’ একটা আত্মঘাতী কর্মসূচি বলেই আমরা মনে করি। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকার স্থানীয় ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সৃষ্টি হতে পারে, যা মোটেই কাম্য নয়। অথচ নূর নবীর পরিচালনায় সমন্বয়কদের একাংশ, আবু বকর, রিয়াজসহ বিতর্কিত উপদেষ্টা পরিষদ মিলে এই অযৌক্তিক কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। পরবর্তীকালে এর পেছনে কিছু শিক্ষকের দুরভিসন্ধিমূলক আচরণ আমাদের সবার সামনে উন্মোচিত হয়। এ ছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে রেজিস্ট্রার নিয়োগের বিষয়েও এসব ব্যক্তি ও কিছু শিক্ষকদের দুরভিসন্ধি কারোরই চোখ এড়ায়নি। এসব ঘটনার পরও এই মানুষগুলোর ওপর আস্থা রাখা যায় কীভাবে?

বামপন্থী এ সমন্বয়করা আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী ফরহাদ ভূঁইয়াকে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে পুরান ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে সাধারণ মানুষের মামলা-মোকদ্দমা, জমি সংক্রান্ত বিষয়ে বিচার-সালিশ করতে দেখা গেছে। আমরা এ ধরনের অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ড সমর্থন করি না। আমরা মনে করি, দেশ গঠন প্রক্রিয়ায় নতুন প্রশাসন‌ই সব দায়িত্ব নেবে। এছাড়া সমন্বয়কদের কোনো প্রকার পরামর্শ ছাড়াই ডিসি অফিসে বসে আবু বকরের মধ্যস্থতায় একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তা কী? এ রকম লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের নজির কোথাও নেই। এই লিয়াজোঁ কমিটির উদ্দেশ্য ও স্বার্থ কী? এ ঘটনাগুলো সবাইকে ভালো করে লক্ষ করার অনুরোধ করছি। ৫ আগস্ট থেকে আজ পর্যন্ত ক্যাম্পাসে কোনো কর্মসূচি কি আদৌ শিক্ষার্থীদের স্বার্থে গ্রহণ করা হয়েছে, না-কি শুধু কতিপয় গোষ্ঠীর স্বার্থে ও প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে করা হয়েছে- সে প্রশ্ন উত্থাপন করতে সবাইকে আহ্বান করছি।