পর্যাপ্ত আবাসন সুবিধার অভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শিক্ষার্থীদের এক বড় অংশকে পড়তে হচ্ছে নানামুখী সমস্যায়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণ হয়ে পড়েছে চরম বিড়ম্বনাময়।
জানা গেছে, শুরুতেই বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে রাবিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের সম্মুখীন হতে হয় আবাসন সংকটের এমন নির্মম বাস্তবতার। সিট বরাদ্দ পাওয়ার আগ পর্যন্ত অন্তত দুই বছর এসব রুমে অবস্থান করতে হয় তাদের। সেখানে দুটি বেডের মাঝখানে মাত্র এক বা দুই ফুটের দূরত্ব। এভাবে একটি রুমের মধ্যে সাজানো হয়েছে ১৫, ২০, ৩০ কিংবা ৫০টি বেড। বেড হিসেবে এ রুমের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ৫০ জন হলেও প্রতিবেডে দুজন করে থাকছেন মোট ১০০ জন। এভাবে কয়েকটি গণরুমে গাদাগাদি করে থাকেন প্রায় দেড় হাজার ছাত্রী।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাবিতে নিয়মিত শিক্ষার্থী রয়েছেন ২৬ হাজার ৩৭০ জন। এর মধ্যে, ৯ হাজার ২৯৩ জন ছাত্রী। যেখানে ছয়টি হলে ৪ হাজার ২০৪ জন মেয়ে শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন। বাকি ৫ হাজার ৮৯ জন এখনো আবাসিক সুবিধা পাননি।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গণরুমগুলো যেন একেকটি জেলখানা। হলের বৈদ্যুতিক লাইনে প্রায়ই শর্ট সার্কিটের ঘটনা ঘটে। যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। খালেদা জিয়া হলে রিডিং রুম থাকলেও অধিক শিক্ষার্থীর কারণে সেখানে সবার জায়গা সংকুলান হয় না। আর চারটি গণরুমের দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য বাথরুম মাত্র আটটি। বঙ্গমাতা হলে ৮০টি সিটের গণরুমে জানালা রয়েছে মাত্র চারটি। ফলে সবসময় সেখানে প্রচুর গরম। এ অবস্থায় বসবাস করা অনুপযোগী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মন্নুজান হলের চারটি গণরুমে দুই শতাধিক, তাপসী রাবেয়া হলের দুটি গণরুমে ২৮০ জন, খালেদা জিয়া হলের দুটিতে প্রায় ২০০, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের একটিতে ২১০, বেগম রোকেয়া হলে পাঁচটিতে প্রায় ২৫০ ও রহমতুন্নেছা হলের কয়েকটি গণরুমে প্রায় ২৫০ জন ছাত্রী থাকেন।
ছাত্রী হলের প্রাধ্যক্ষরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের দরিদ্র পরিবার থেকে আসা অনেক ছাত্রী ভর্তি হয়। যাদের হলে না থাকলে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে হাজার কষ্ট হলেও তারা গণরুমে থাকতে চায়। একটি গণরুমে ১৫০ শিক্ষার্থীর ধারণক্ষমতা থাকলেও ২৫০ জনের মতো শিক্ষার্থীকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ফলে সমস্যা তৈরি হয়। হলে রুমের সংখ্যা বাড়াতে পারলে কিছুটা কষ্ট কমবে।
খালেদা জিয়া হলের গণরুমে থাকা দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, বাইরে থেকে প্রথমবার কেউ গণরুমগুলোকে আসলে বস্তির সঙ্গে তুলনা করেন। শিক্ষার্থীদের তুলনায় বাথরুমের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। চারটি গণরুমের দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য বাথরুম মাত্র আটটি। তার মধ্যে দুটি বাথরুমের দরজা আটকানো যায় না।
মন্নুজান হলের গণরুমে থাকা তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, গণরুমের পরিবেশ একদমই অস্বাস্থ্যকর। আমাদের পর্যাপ্ত ওয়াশরুম নেই। হলে নেই ওয়াই-ফাই সুবিধা। মাঝেমধ্যেই বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট হয়, ট্রান্সমিটার ব্লাস্ট হয়। সবসময়ই ঝুঁকিতে থাকি। এছাড়া রান্নার কোনো পরিবেশ নেই বললেই চলে।
জানতে চাইলে মন্নুজান হলের প্রাধ্যক্ষ আশিয়ারা খাতুন বলেন, আমরা সার্বিকভাবে মনিটরিং করে ছাত্রীদের সমস্যা খতিয়ে দেখছি। ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবস্থা করছি। উপাচার্য স্যারের সঙ্গেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা ধীরে ধীরে সমস্যাগুলো নিরসনে কাজ শুরু করেছি।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকিব বলেন, আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। সমস্যাগুলো সম্পর্কে প্রশাসন অবগত। হল প্রাধ্যক্ষদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করছি। হলে ওয়াই-ফাই সুবিধা থেকে শুরু করে বাথরুমের সংখ্যা বাড়ানো হবে। ছাত্রীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হল নির্মাণাধীন। সেখানে সিট সংখ্যা ১ হাজার। ফলে কিছুটা সংকট কাটিয়ে নতুন করে জায়গা দেওয়ার সুযোগ হবে।