ক্যাম্পাস

রাবির ২ শিক্ষিকাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণাসহ পাঁচ দাবি শিক্ষার্থীদের

নানা অনিয়ম ও শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে হেনস্তা করার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মনোবিজ্ঞান বিভাগের দুই শিক্ষিকাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়েছে।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মনোবিজ্ঞান বিভাগের সামনে অভিযুক্ত দুই শিক্ষিকার ছবি সম্বলিত ব্যানারে ‘অবাঞ্ছিত ঘোষণা’ লিখে বিভাগের সামনে টানিয়ে দেয় একই বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

অভিযুক্তরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবা কানিজ কেয়া ও অধ্যাপক ড. নাজমা আফরোজ।

জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আক্রমণাত্মক আচরণ, পর্যাপ্ত ক্লাস না নেওয়া এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম-অবিচার করার অভিযোগ এনে অধ্যাপক ড. মাহবুবা কানিজ কেয়াকে অবাঞ্চিত করা হয়। অন্যাদিকে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে হেনস্তা, রুমে ডেকে হুমকি ও মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া এবং মিথ্যা মামলার ভয় দেখানোর অভিযোগ এনে অধ্যাপক ড. নাজমা আফরোজকে বিভাগ থেকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়।

এছাড়াও শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। সেগুলো হলো- কোনো শিক্ষক কর্তৃক কোনো শিক্ষার্থীকে হুমকি দেওয়া যাবে না এবং ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে ফলাফল টেম্পোরিং করা যাবে না; শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলি বা রেষারেষি বন্ধ করতে হবে; ড. নাজমা আফরোজ ও ড. মাহবুবা কানিজ কেয়াকে অব্যাহতি দিতে হবে; দলীয় প্রতিহিংসার শিকার অধ্যাপক ড. এনামুল হকের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, তা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দুই কর্মদিবসের মধ্যে তাকে অ্যাকাডেমিক কাজে ফিরিয়ে আনতে হবে এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মী শ্রী রাম হেলাকেও বিভাগে ফিরিয়ে আনতে হবে; বিভাগের সব শিক্ষক-শিক্ষিকাকে লিখিত দিতে হবে যে, তারা বিভাগের সব কার্যক্রম রুটিন মাফিক করবেন।

মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী নাহিবুল ইসলাম বাবু বলেন, রেজাল্ট টেম্পারিং, শিক্ষার্থীদের রুমে ডেকে নিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও মানসিকভাবে টর্চার করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়া বর্তমান শিক্ষার্থীদের অনেককে রুমে ডেকে নিয়ে অপমানিত করেছেন এবং শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলেছেন। মনোবিজ্ঞান বিভাগের সব অপকর্মের মদদদাতা তিনি। বিভাগের শিক্ষার্থীদের কুলাঙ্গার বলতে তিনি দ্বিধা করেন না। শুধু তিনি নন, তার সঙ্গে অধ্যাপক নাজমা আফরোজ মিলে বিভাগের অনেক ক্ষতি করেছেন। আমরা এ দুজন শিক্ষকের কমপক্ষে পাঁচ বছরের জন্য বিভাগ থেকে অপসারণ চাই।

১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, কেয়া ম্যাডাম বিভাগের সভাপতি থাকাকালে আমাদের চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আমাদের উত্তরে জানতে চেয়েছিলেন, আমরা তাকে দাবি জানানোর কে? শিক্ষার্থীদেরকে প্রায় সময় আক্রমণাত্মক কথা বলতেন। তিনি কখনোই আমাদের শিক্ষার্থী মনে করতেন না। আমরা এ দুজন শিক্ষককে বিভাগ থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, আমরা বিভাগে এ অন্যায়-অবিচারের বিচার চাই। অধ্যাপক ড. নাজমা আফরোজ ও ড. মাহবুবা কানিজ কেয়ার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষক প্রফেসর ড. মাহবুবা কানিজ কেয়ার ফোনে একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।

তবে অভিযুক্ত ড. নাজমা আফরোজ বলেন, আমাকে ছাত্ররা অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। কিন্তু কেন করেছে এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমাকে কেউ এ বিষয়ে অবহিত করেনি।

জানতে চাইলে মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. মো. মজিবুল হক আজাদ খান বলেন, ছাত্ররা তাদের যৌক্তিক দাবিতে বিভাগের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন। শুনেছি তারা বিভাগের দুজন শিক্ষককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। তবে এ বিষয়ে অফিসিয়াল কোন বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।