ক্যাম্পাস

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) চোর সন্দেহে তোফাজ্জল নামে এক যুবককে এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শামীম মোল্লা নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি এ দুই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে সচেতন মহল। রাইজিংবিডির বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে থাকছে বিস্তারিত-

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)

ঢাবি উপাচার্য ড.নিয়াজ আহমদ খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাদা দল সমর্থিত শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল নামে একজনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

শিক্ষকদের এ প্রতিনিধি দলে ছিলেন- সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ লুৎফর রহমান, যুগ্ম আহ্বায় অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান খান ও ড. মোহাম্মদ আব্দুস সালাম, সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মো. মহিউদ্দীন ও কোষাধ্যক্ষ ডক্টর মো. আবুল কালাম সরকার।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)

সারাদেশে সকল বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে প্রথমে মানববন্ধন ও পরবর্তীতে বিক্ষোভ মিছিল হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে থেকে শুরু হয়ে গোল চত্ত্বর হয়ে আবার মূল ফটকে এসে শেষ হয়। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)

জাবিতে গণপিটুনিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম মোল্লার মৃত্যুর ঘটনায় ক্যম্পাসে সকল প্রকার দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজনীতি নিষিদ্ধসহ তিন দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এরপর দুপুর ৩ টায় শহিদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা।

এসময় তাদের ‘ডান বামের রাজনীতি, চাই না কারো উপস্থিতি’; ‘রাজনীতির কালো হাত, এই জাবি তে নিপাত যাক’; ‘সব জাবিয়ান ভাই ভাই, রাজনীতির ঠাঁই নাই’; ‘রাজনীতির অংশীদার, এই মুহূর্তে জাবি ছাড়’; ‘এক দফা এক দাবি,চাই না কোনো রাজনীতি’ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায়। 

এ সময় তারা উপাচার্যের কাছে তিনটি দাবি পেশ করেন এবং আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দাবিগুলো বাস্তবায়নের আল্টিমেটাম দেন। দাবিগুলো হলো- সকল প্রকার দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র-শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারী রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে জাবি ছাত্র সংসদ জাকসু নির্বাচন দিতে হবে। ১৪ থেকে ১৭ জুলাই ক্যাম্পাসে হামলাকারী ও মদদদাতাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় আইনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। 

এদিকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম মোল্লার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিশেষ মহল বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী এবং প্রকাশ্য ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার ষড়যন্ত্র করছে বলে দাবি করেছে জাবির প্রাক্তন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ফোরাম। এছাড়া অতীত ও বর্তমানের সকল বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিও জানিয়েছেন তারা।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে এই দাবি জানান তারা।

এ সময় তারা বিগত ১৫ বছর ধরে দেশে স্বৈরাচারী সরকারের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের যে সংস্কৃতি চালু হয়েছিল তার কঠোর নিন্দা জানিয়ে অনতিবিলম্বে এসব কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানান। 

উল্লেখ্য, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জাল নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লা গণপিটুনির শিকার হন। পরে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।