ক্যাম্পাস

রাবি ও কুবিতে মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কর্মসূচি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও খাগড়াছড়িসহ সারাদেশে চলমান মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে তারা এ সব কর্মসূচি পালন করেন।

জানা গেছে, সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশন উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন রাবি শিক্ষার্থীরা।

এ সময় রাবির আইন বিভাগের অধ্যাপক শাহিন জোহরা বলেন, মব জাস্টিস কখনোই কাম্য নয়, সবসময় আমাদের এর বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে মব জাস্টিস হলো জনতার বিচার। আর এটা একটি ভায়োলেন্স। এটি কোনো গণতান্ত্রিক পন্থা নয় এবং সংবিধান বহিভূত। আমরা সবাই আইনের শাসনে সমান।

তিনি বলেন, কারও বিরুদ্ধে কোনো অন্যায়ের অভিযোগ থাকলে আইনের আশ্রয় নিয়ে বিষয়টি সমাধান করতে হবে। কিন্তু মব জাস্টিসের মাধ্যমে কোনো বিষয়ের মিমাংসা করা সর্বদা আইন পরিপন্থী। অনেক নিরপরাধ মানুষ মব জাস্টিসের শাস্তি ভোগ করে। আমরা দেখেছি ঢাবি, জাবি ও খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটিতে অনেক মব জাস্টিসের ঘটনা ঘটেছে। আমরা আর এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না। আমরা এমন একটা দেশ চাই, যেখানে কোনো মব জাস্টিসের স্থান থাকবে না।

মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও খাগড়াছড়িসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মব সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষকে বিচার করা যেন সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। আমরা স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশন পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা জানায়। মব জাস্টিস একটি মানবাধিকার লঙ্ঘন। যদি কেউ অন্যায় করে তাহলে তাকে মব জাস্টিসের মাধ্যমে বিচার করা যাবে না। এর জন্য দেশের আইন আছে, বিচার বিভাগ আছে।

অপরদিকে, পাহাড়ে অস্থিরতা ও মব জাস্টিসের বিরদ্ধে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুপুর দেড়টায় শিক্ষার্থী আরাফ ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন রাস্তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আমাদের একটাই পরিচয়, আমরা বাংলাদেশি', ‘মব জাস্টিস বন্ধ হোক', ‘পাহাড়ে সমতলে সবখানে শান্তি চাই', ‘পাহাড়ি দুর্বৃত্তদের শাস্তি চাই' সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। 

মানববন্ধনে আইন বিভাগের ১৫তম আবর্তনের সুইচিং মারমা বলেন, বর্তমানে পাহাড়ে যে অস্থিতিশীলতা চলছে, তা ব্যক্তিগত ইস্যুকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি। এখন তা সামগ্রিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সামগ্রিক পর্যায় থেকে শুরু হয় বাঙালি বনাম পাহাড়িদের সংঘাত। এ ইস্যুতে সাধারণ ছাত্র ও সরকারের মাধ্যমে সমাধানে যাওয়া দরকার। আমরা যে যার জাতিসত্ত্বা নিয়ে বাংলাদেশে সুশৃঙ্খলভাবে বসবাস করতে চাই। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করে যেতে চাই। পাহাড়িরা বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী, এটা আমরা সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করবো না। আমরা বাংলাদেশের ভূখণ্ডে একসঙ্গে মিলে বসবাস করতে চাই।

সমন্বয়ক মোজ্জাম্মেল হোসাইন আবির বলেন, স্বৈরাচারী দোসররা সারাদেশে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ছাত্র জনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছে। তারা পাহাড়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায়। মব জাস্টিসের নামে যেসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে, তাদের মধ্যে ছাত্রলীগের প্রেতাত্মা রয়েছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও ছাত্রলীগের অনেক প্রেতাত্মারা সুশীলরূপে চলাফেরা করছেন। আপনারা যদি ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন, তাহলে কঠিনভাবে প্রতিহত করা হবে। এ ক্যাম্পাসে স্বৈরাচারের দোসর, ছাত্রলীগের কোনো স্থান নাই।