ক্যাম্পাস

বাকৃবির ঈশা খাঁ হলে ছাত্রলীগের আড়াই লাখ টাকার সিট বাণিজ্য

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ঈশা খাঁ হলে প্রায় আড়াই লাখ টাকার সিট বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ওই হলের আবাসিক ৩৪ জন শিক্ষার্থী এক লিখিত অভিযোগে এ টাকার পরিমাণ উল্লেখ করেন।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে রয়েছেন আবু রেজওয়ান-আল-রামীম, আরিফুল অনিক, আরিফুল ইসলাম পিয়াস, আদনান সামি, নাহিদ, আকাশ, সাইফ ও হাসিব। এসব নেতারা হলের সিট পাওয়ার জন্য ওই ৩৪ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা আদায় করেছেন।

অভিযোগকারী শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা বরাবরই হলের সিটের জন্য ছাত্রলীগ কর্মীদের অন্যায়ের শিকার হয়েছেন। যে সব শিক্ষার্থীরা ভর্তির পর প্রথম ধাপেই হলে উঠতে পারেন না তারা পরবর্তীতে নিজেদের ন্যায্য সিট পেতেও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কাছে টাকা দিতে বাধ্য হন। একই শিক্ষার্থীকে একাধিকবার টাকা দিতে বাধ্য করা হতো, অথচ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সিট দেওয়া হতো না।

তারা আরও জানান, এই অভিযোগ শুধু নতুন শিক্ষার্থীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাকৃবিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিতে আসা শিক্ষার্থীরাও একইভাবে ছাত্রলীগ কর্মীদের কাছে সিটের বিনিময়ে টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন। ছাত্রলীগের এই নেতারা নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে সিট বাণিজ্যের চক্র চালাচ্ছিলেন। এর পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বিভিন্ন অন্যায়, অত্যাচার ও চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে। যারাই ছাত্রলীগ কর্মীদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন, তাদেরকে নানা রকম হয়রানির শিকার হতে হতো বলেও জানান তারা।

সিট বাণিজ্যের বিষয়ে অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আদনান সামী বলেন, সিট বাণিজ্যের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। হলে যারা উঠেছেন, তাদের থেকে টাকা নিয়েছি এ রকম কেউ বলতে পারবেন বলে আমি মনে করি না। হলে কারা সিট বাণিজ্য করতো, সেটিও আমার জানা নাই। আমি এ বিষয়ের সঙ্গে কোনোভাবে যুক্তও না। হয়ত রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, এ জন্য আমার সঙ্গে শত্রুতা করে নাম দেওয়া হচ্ছে। এগুলো সবই মিথ্যা অভিযোগ।

অভিযুক্ত কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদীয় ছাত্র সমিতির সাধারণ সম্পাদক অনিক বলেন, হলের সিট বাণিজ্যের বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই। হলের রাজনীতির সঙ্গে আমি যুক্তও ছিলাম না। আমি অনুষদীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। হলে সিট দেওয়ার জন্য কারোর কাছে টাকা নিয়েছি বা আমার মাধ্যমে কাউকে হলে তুলেছি, এ রকম কোনো ঘটনা আমার মনে পড়ছে না। রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম এবং প্রথম সারিতে থেকে রাজনীতি করেছি, এটি সকলেই জানেন এবং দেখেছেন। অনেকেই ভাবেন, রাজনীতি করা মানেই হলো সিট বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত থাকা। এ কারণেই হয়ত আমার বিরুদ্ধে এ সব অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে। তবে সিট বাণিজ্যের সঙ্গে আমি কোনোভাবেই যুক্ত নই।

অন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। 

সিট বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির বিষয়ে ঈশা খাঁ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিয়াউল হক বলেন, আমরা কাছে এখনও কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। তবে ঘটনা যদি সত্যি হয়, তাহলে সিট বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত সবাইকে গণতদন্তের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ বিষয়ে হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।