ক্যাম্পাস

শান্তি মিছিলে অংশ নিয়েও পদে বহাল কুকৃবি উপাচার্য, কঠোর সমালোচনা

জুলাই গণহত্যার সমর্থনে ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ শান্তি মিছিলে সামনের সারিতে থেকে শিক্ষার্থীদের দাবির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. একেএম জাকির হোসেন। তবে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েও এখনো সপদে বহাল থাকা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। ছড়িয়ে পড়েছে শান্তি মিছিলে অংশ নেওয়ার সেই ছবিও।

জানা গেছে, গণহত্যার সমর্থনে গত ৪ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) আয়োজিত ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ নামক শান্তি মিছিলে তিনি নেতৃত্ব দেন। এমন অপকর্ম করার পরও তিনি কিভাবে এখনো উপাচার্য পদে বহাল রয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বাকৃবির শিক্ষার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (কুকৃবি) ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার টেক্সটাইল মিল ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়টির অস্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপন করা হয়েছে। ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল এর প্রথম উপাচার্য হন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. একেএম জাকির হোসেন। এছাড়াও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ও মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিনের (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব পালন করছেন।

আরও জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমে পাঠানো শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিচার প্রক্রিয়া স্থগিতের দাবির প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতিতে স্বাক্ষরও করেন অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক উপকমিটির সদস্য। তিনি গত আগস্টে এক দফার কবর দে, শেখ হাসিনাতেই আস্থাসহ তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের সমর্থনে এবং গণহত্যার সমর্থনে আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। উপাচার্যের এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে শিক্ষার্থীরা  নৈতিকতা বিরুদ্ধ বলে অভিহিত করছেন।

বাকৃবির কৃষি রসায়ন বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মাহামুদুর রহমান তুষার বলেন, শিক্ষকের দায়িত্ব সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো। আমরা দেখেছি, জুলাই মাসে নিহত ও আহত শিক্ষার্থীদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল। সে সময় কিছু আওয়ামীপন্থী শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন এবং দীর্ঘ ১৫ বছরের আওয়ামী দুঃশাসনের সময় তারা সবদিক থেকে সরকারের সমর্থক হিসেবে কাজ করেছেন। শিক্ষক হিসেবে তিনি স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সমর্থনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের রক্তে যখন রাজপথ রঞ্জিত হয়ে যাচ্ছিল, তখনও তিনি শেখ হাসিনার পক্ষে দাঁড়িয়ে ক্যাম্পাসে ‘এক দফার কবর দে’ আন্দোলন করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে চাই না এ ধরনের শিক্ষকরা তাদের পদে বহাল থাকুক। যেহেতু তারা তাদের নৈতিকতা হারিয়ে ফেলেছে, আমি মনে করি না যে তাদের সেই পদে থাকার কোনো যোগ্যতা আছে। যদি এখনো তারা সেই পদে বহাল থাকেন, তবে শিক্ষার্থীদের মনে বারবার ফ্যাসিজমের স্মৃতি ফিরে আসবে। এ ধরনের ফ্যাসিস্টদের দোসর যারা এখনো পদে রয়েছেন, তারা যেন নিজের ইচ্ছায় পদত্যাগ করেন। আমরা আর কোনো ফ্যাসিস্টকে দেখতে চাই না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাকৃবির এক শিক্ষার্থী  বলেন, আমি আসলে মনে করি, এ রকম নীতি-বিবর্জিত ও নৈতিকতা-বিবর্জিত একজন মানুষ যদি উপাচার্যের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল থাকেন, তা নতুন স্বাধীনতার সঙ্গে, শহিদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করার শামিল। আমরা আশা করি, তিনি খুব দ্রুত পদত্যাগ করবেন। শুধু তিনিই নন, এ রকম যারা স্বৈরাচারকে সমর্থন করেছেন, প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদেরও পদত্যাগ করা উচিত। এ সব শিক্ষকরা সবাই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন এবং নৈতিকভাবে আপনারা পরাজিত হয়েছেন।

এ বিষয়ে কুকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. একেএম জাকির হোসেন বলেন, আমার এখানে কোনো শিক্ষক নেই, রেজিস্ট্রারও নেই। আমি তো পদত্যাগ করার জন্য প্রস্তুত। ২৫ তারিখের কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার জন্যে কাজ করছি। ভর্তি পরীক্ষা হয়ে গেলে আর থাকব না। কোনো কারণে ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত থাকুক, এটা আমি চাই না। হুট করে যদি ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে পুরো দায়ভার আমার ঘাড়ে এসে পড়বে। এজন্য কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়া আগে আমি পদত্যাগ করলে দায়িত্ব দেওয়ার মতোও কেউ নেই। এতে ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। 

তিনি বলেন,  শান্তি সমাবেশ ছাত্রদের বিপক্ষে ছিল না। ওটা আমি আয়োজন করিনি, ওটার আয়োজন করেছেন স্থানীয় কৃষিবিদরা। আমি ময়মনসিংহে ছিলাম, তাই তারা আমাকে ডেকেছিলেন। আমি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলাম। সেখানে যে বক্তব্য দিয়েছি, সেখানে ছাত্র হত্যার বিচার চেয়েছি এবং শান্তির আহ্বান করেছি।

তিনি আরও বলেন, আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো কোনো নিয়োগ দেয়নি এবং এখন আর নিয়োগও দিব না। আমি শুধু বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহিদ আবু সাঈদের ভাই ও বোন- এ দুজনকে চাকরি দিয়েছি ।

উপাচার্য বলেন, ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্যে কুড়িগ্রামের সবাই আমাকে পরীক্ষার আগে পদত্যাগ না করার জন্য বলেছেন। তারা বলেছেন আগে ভর্তি পরীক্ষা হয়ে যায়। পরীক্ষাটি যদি স্থগিত হয়ে যায়, তাহলে পরীক্ষা হবে না। পরীক্ষা শেষ হলে আমি তখন পদত্যাগ করব। আমি আর থাকব না। যদি দায়িত্ব দেওয়ার মতো লোক থাকতো, আমি এতদিন থাকতাম না। এখন কাজ করা খুবই কঠিন হয়ে গেছে। মন্ত্রণালয়ে আমি জানিয়ে রেখেছি, আপনারা উপাচার্য দিয়ে দেন। যতদিন আছি, ততদিন ভর্তি পরীক্ষার জন্য কাজ করছি। যদি তার আগেই উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলে আমি তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেব।