ক্যাম্পাস

‘জামাইয়ের সাথে থাকতে থাকতে বালতি হয়ে গেছো’

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে পাঠদানে স্বেচ্ছাচারিতা, নারী শিক্ষার্থীদের বডি শেমিং করাসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত শিক্ষককে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।

অভিযুক্ত শিক্ষক মো. জসিম উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।

গত ২২ সেপ্টেম্বর ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে একই বিভাগের স্নাতকোত্তর ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় প্রধান বরাবর এসব নিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের বিষয়টি শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সাংবাদিকদের অবহিত করেন।

অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা ইনকোর্স সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করা, বিষয়মূলক পাঠদানে অপারগতা ও স্বেচ্ছাচারিতা, ক্লাস সময়মতো না নেওয়া, অধিকাংশ ক্ষেত্রে পূর্ব ঘোষণা ব্যতীত ক্লাস বাতিল করা, প্রিপারেশন লিভের (পিএল) মাঝেও ইনকোর্স নেওয়া, শিক্ষার্থীদের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব পোষণ করা, নারী শিক্ষার্থীদের মৌখিক হেনস্তা, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে শ্রেণিকক্ষে নেতিবাচক আলোচনা, নারী শিক্ষার্থীদের বডি শেমিং করাসহ শিক্ষক জসিমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করেন। অভিযোগপত্রের সঙ্গে তারা প্রমাণস্বরূপ জসিম উদ্দিনের নেওয়া দুইটি কোর্সের রেজাল্ট শিট সংযুক্ত করেন।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এবং রেজাল্ট শিট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দুটি রেজাল্ট শিটের মধ্যে একটি রেজাল্ট শিট চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের 'ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট' কোর্সের। কিন্তু নোটিশ বোর্ডে এ রেজাল্ট শিট টানানো হয়েছিল ‘প্রথম বর্ষ প্রথম সেমিস্টার’ উল্লেখ করে। শিটে দেখা যায়, ১১৯১৭০৩২, ১১৯১৭০৩৯, ১১৯১৭০৫৮ রোল নম্বরধারী শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষে এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে যান। কিন্তু তারা চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারে এসে উপস্থিতিতে যথাক্রমে নম্বর পেয়েছেন ৪, ২ ও ৪ নম্বর। অথচ ৪০ নম্বর ইনকোর্সের মধ্যে দুটি মিডটার্ম পরীক্ষায় পেয়েছেন ০ (শূন্য)। আবার অ্যাসাইনমেন্ট-প্রেজেন্টেশন মিলিয়ে ওই রোল নম্বরধারী শিক্ষার্থীরা পেয়েছেন যথাক্রমে ১০, ৬, ১০ নম্বর।

এছাড়া একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্নাতকোত্তরের প্রথম সেমিস্টারে ক্লাস পান শিক্ষক জসিম উদ্দিন। সেখানে ‘পোর্টফোলিও স্ট্রেজিস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট’ কোর্সে তিনি ১৯ জন শিক্ষার্থীকে উপস্থিতিতে দিয়েছেন ০ (শূন্য)। তবে শিক্ষার্থীদের জানিয়েছেন, তিনি ক্লাস নিয়েছেন মোট নয়টি। কিন্তু দুটি ক্লাসে ডাবল অ্যাটেন্ডেন্স দিয়েছেন। তাই ক্লাস সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১টিতে। আরো দুটি ক্লাসে নিয়েছেন মিড। সেই হিসাব মিলিয়ে ক্লাস সংখ্যা হয় ১৩টি। আরেকটি ক্লাসে নিয়েছেন শ্রেণী উপস্থাপনা। সবমিলিয়ে তিনি মোট ১৪টি ক্লাস নিয়েছেন স্নাতকোত্তরের প্রথম সেমিস্টারে। স্নাতকের চতুর্থ বর্ষ প্রথম সেমিস্টার ও স্নাতকোত্তর প্রথম সেমিস্টারে তার নেওয়া কোর্সে গড় নাম্বারিং করেছেন বলেও অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, তিনি ক্লাসে পড়ানোর চেয়ে বিবাহিত নারী শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েই ক্লাসে নানা আলোচনা করতেই বেশি আগ্রহী। অভিযোগকারী ব্যাচের এক নারী শিক্ষার্থীকে তিনি ক্লাসে বলেছিলেন, ‘জামাইয়ের সাথে থাকতে থাকতে বালতি হয়ে গেছো।’ আবার আরেক নারী শিক্ষার্থী ঢাকায় থাকার কারণে ক্লাসে অনুপস্থিত ছিলেন। তাকে ক্লাসে দাঁড় করিয়ে অনুপস্থিতির কারণ জিজ্ঞেস করলে শিক্ষার্থী ঢাকায় থাকার কারণে ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারেননি বলে জানান। প্রত্যুত্তরে তিনি ক্লাসে সবার সামনে সেই শিক্ষার্থীকে বলেন, ‘তুমি ঢাকা ছিলা, তোমাকে খুললো কে?’

তারা আরও জানান, তিনি ২০২২ সালে ২১ আগস্ট বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থ সেমিস্টারের বিজনেস স্টাটিস্টিক্স কোর্সের মৌখিক পরীক্ষায় এক শিক্ষার্থী পর্দা করায় ‘মৌলবাদী জঙ্গি’ বলে সম্বোধন করেন এবং মৌখিক পরীক্ষায় ‘ম্যানার জানে না’ বলে হেনস্তা করেন।

এ সব অভিযোগের ব্যাপারে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘অভিযোগের কিছু না। শিক্ষার্থীরা এসেছিল। এটা আমরা বিভাগে সমাধান করেছি।’

তবে লিখিত অভিযোগ বিভাগীয় প্রধান বরাবর দেওয়া হয়েছে জানালে তিনি বলেন, ‘এটা আপনার বিভাগীয় প্রধানকে জিজ্ঞেস করেন।’

এ বিষয়ে বিভাগটির বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মো. এমদাদুল হক বলেন, ‘আমি লিখিত অভিযোগটি পেয়েছি। লিখিত অভিযোগে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, অভিযুক্ত শিক্ষককে যেন তাদের কোন অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে না রাখা হয়। এ বিষয়ে বিভাগে একটি মিটিং করেছি। সেখানে তাকে উক্ত ব্যাচের সব কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী জানান, প্রতিবেদকের কাছ থেকেই তিনি বিষয়টি প্রথম শুনেছেন। তার কাছে অভিযোগ আসলে বিষয়টি দেখবেন বলে জানান তিনি।