ক্যাম্পাস

ক্ষমতা কুক্ষিগতের অভিযোগ এনে জাবি সমন্বয়কের পদত্যাগ

প্লাটফর্মের কতিপয় ব্যক্তিবর্গ ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার সমন্বয়ক হাসিব জামান পদত্যাগ করেছেন।

বুধবার (২ অক্টোবর) বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তিনি পদত্যাগের কথা জানান। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮তম আবর্তনের গণমাধ্যম ও ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী।

ওই পোস্টে তিনি লেখেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সমন্বয়ক কমিটিতে শুরু থেকেই ছিলাম। এই প্লাটফর্ম একটা নির্দিষ্ট সময় দেশের আপামর ছাত্র-জনতাকে নেতৃত্ব দিয়ে নতুন বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে। পরবর্তীতে এই প্লাটফর্মের কতিপয় ব্যক্তিবর্গের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখার চেষ্টা কেন্দ্র থেকে শুরু করে ব্যক্তি পর্যায় পর্যন্ত বিশেষভাবে লক্ষণীয়। যেটা ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ না করে নতুন করে বৈষম্যের জন্ম দিয়েছে।

‘এমতাবস্থায়, আমি ব্যক্তি হাসিব এই প্লাটফর্মের সাথে রাজপথে একসাথে হাঁটা যুক্তিযুক্ত মনে করছি না। এই প্লাটফর্ম থেকে পদত্যাগ করছি। ঘোষণাটি শেষ হলো।’- যোগ করেন হাসিব জামান। 

এর আগে, সরকার পতনের কয়েকদিন পর গত ১১ আগস্ট পদত্যাগ করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার সমন্বয়ক মাহফুজুল ইসলাম মেঘ। গত ১১ আগস্ট ফেসবুকে পোস্ট করে পদত্যাগের কথা জানিয়ে তিনি লেখেন, ‘নৈতিক মূল্যবোধের জায়গা থেকে আমার এই সিদ্ধান্ত।’

এছাড়া অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সমন্বয়ক লাবিব আহসান এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সমন্বয়ক পরিচয় ব্যাবহার করে ব্যাক্তিগত প্রভাব খাটানোর দায়ে নাজমুল ইসলাম লিমনকে সহ-সমন্বয়ক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

জানা গেছে, গত ৪ জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেলকে আহ্বায়ক ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহফুজ ইসলাম মেঘকে সদস্য সচিব করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, গত কিছুদিন ধরেই তাদের মধ্যে মতানৈক্য স্পট হচ্ছিল। এরই মধ্যে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাবির সাবেক শিক্ষার্থী শামীম মোল্লা হত্যাকাণ্ডে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে এক সমন্বয়ক জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়, পাশাপাশি হয়েছে মামলাও। এছাড়া ইতিমধ্যে ব্যাক্তিগত প্রভাব খাটানো ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো দায়ও এসেছে লিমন নামে শাখা সহ-সমন্বয়কের বিরুদ্ধে। তবে সম্প্রতি হাসিব জামানের পদত্যগের পর বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে গুঞ্জন উঠেছে আরও সমন্বয়ক পদত্যাগ করতে পারেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সমন্বয়ক জানান, মূলত ছাত্র শক্তির নেতা হওয়ায় জাবি থেকে সমন্বয়ক আরিফ সোহেল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রয়েছেন। তবে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া আর কেউই প্লাটফর্মের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে যেতে পারছেন না। এমনকি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার সময়ও অপর কাউকে সুযোগ দেওয়া হয়নি। ছাত্র শক্তি প্রভাবিত হওয়ায় অন্যান্য সংগঠকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ রয়েছে। ফলে জাবিতে এ কমিটির মধ্যেই বৈষম্য প্রকট।

পদত্যাগ করা সমন্বয়ক হাসিব জামান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সমন্বয়ক কমিটিতে শুরু থেকেই ছিলাম। এ আন্দোলনে ঢাবির যেমন অবদান ছিল, তেমনি জাবিরও ছিল। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও আমরা দেখেছি সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে। তবে এখন আমার কাছে মনে হয়েছে, এ প্লাটফর্মের কতিপয় ব্যক্তিবর্গ ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, আমি যদি জাবি শাখার কথা বলি বা কেন্দ্রের কথাই বলি, সব জায়গাতেই কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ না করে কুক্ষিগত করে রাখছে। কেন্দ্রে যেমন কয়েকজন মানুষ সামনে আসছেন সবসময়, আবার তারাই উপদেষ্টা ও উপদেষ্টার সহকারী হলেন। যাতে নতুন করে বৈষম্যের জন্ম দিয়েছে। কেন্দ্র ও জাবি শাখা বিবেচনায় দুটো মিলিয়েই আমার কাছে মনে হয়েছে, আমার পদত্যাগ করা উচিত। 

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের জাবি শাখার সমন্বয়ক কমিটির আহ্বায়ক আরিফ সোহেল বলেন, পদত্যাগ করতে চাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি যা বলেছেন, তা তিনিই ব্যাখ্যা করতে পারবেন। আমাদের আপাতত মন্তব্য নেই।