ক্যাম্পাস

উপাচার্য হিসেবে বাইরের অধ্যাপককে চান বুটেক্স শিক্ষার্থীরা

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহ আলিমুজ্জামান বৃহস্পতিবার (০৩ অক্টোবর) পদত্যাগের পর পরবর্তী উপাচার্য কে হবেন, তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা চান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যেন বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককে নিয়োগ দেওয়া হয়।

বুটেক্স সাংবাদিক সমিতির ফেসবুক গ্রুপে একটি ভোটের আয়োজন করা হয়। সেখানে গ্রুপের ১১৬২ জন সদস্য ভোটে অংশ নেন। সদস্যরা উপাচার্য হিসেবে কাকে চান- এ প্রশ্নে ৯০ ভাগ ভোট দেন বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককে উপাচার্য নিয়োগ করার অপশনে। বাকি ১০ ভাগ চান বুটেক্সের অধ্যাপককে যেন উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়।

শিক্ষার্থীদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা উপাচার্য হয়ে কী করতে পারেন শিক্ষার্থীরা সেটা সাবেক চার উপাচার্যের মাধ্যমে দেখেছেন। তারা বুটেক্সকে প্রকৃত বিশ্ববিদ্যালয়রূপে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ। আবার, বুটেক্সের কোনো অধ্যাপক উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ হলে সদ্য পদত্যাগ করা উপাচার্যপন্থী শিক্ষকরা শোষণের শিকার হতে পারেন এবং তার বিরোধীরা অতিরিক্ত সুবিধা ভোগ করতে পারেন বলে আশঙ্কা থাকে। আর বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য নিয়োগের মাধ্যমে নিরপেক্ষ পরিবেশ পাওয়া সম্ভব। 

আবার অনেক শিক্ষার্থী যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, বুটেক্সের অনেক অধ্যাপক উপাচার্য হওয়ার খাতা-কলমে যোগ্যতা থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার যোগ্যতা তাদের নেই। উপাচার্য হওয়ার মতো গ্রহণযোগ্যতাও কারো নেই।

ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ঈমাম রেজা আলী মুজাহিদ বলেন, স্টকহোল্ডার হিসেবে চিন্তা করলে উপাচার্য নিয়োগের ব্যাপারে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মতামত বা চাওয়াকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। নানা অনঅফিশিয়াল জরিপ দেখা যায়, বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এক্সটার্নাল উপাচার্য চান। এর পেছনে অন্যতম কারণ বুটেক্সের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। কেউ যাতে কোনোভাবেই বৈষম্যের শিকার না হয় এবং নতুন কোনো পরিস্থির যাতে সৃষ্টি না হয়। শিক্ষার্থীদের এই এক্সটার্নাল উপাচার্য চাওয়ার যৌক্তিক দাবির সঙ্গে আমিও একমত।

তিনি বলেন, যদিও উপাচার্য নিয়োগের এখতিয়ার মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রণালয়ের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান রেখে আমরা চাইবো শিক্ষার্থীদের মতামতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে দেখা হোক এবং অতি সত্ত্বর এমন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হোক, যিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ করে ক্যাম্পাসে শিক্ষা পরিবেশ ফিরিয়ে আনবেন।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ থেকে জানা যায়, উপাচার্য হতে হলে বস্ত্র বিজ্ঞান, বস্ত্র প্রকৌশল, বস্ত্র প্রযুক্তি বা বস্ত্র ব্যবস্থাপনা শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত অধ্যাপক হতে হবে।

বুটেক্সের শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে আবেদন পেশ করেছেন। তারা নির্দলীয়, নিরপেক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে যোগ্য প্রশাসক এবং শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্যের দাবি করেন। দেশের প্রকৌশল শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে যেহেতু বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট) আদর্শ মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা হয় তাই বুয়েটের কোনো অধ্যাপক যিনি টেক্সটাইল গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত তাকে উপাচার্য হিসেবে চান।

এদিকে, বুটেক্সে এখন গ্রেড-১ এবং গ্রেড-২ অধ্যাপক আছেন ১০ জন। তাদের মধ্য থেকে কেউ উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ হোক, এমনটা চান অধিকাংশ শিক্ষক।

বুটেক্সের অনেক শিক্ষক বলেন, দেশে অনেক প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আছেন, যারা টেক্সটাইল নিয়ে স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনা না করলেও অনেকে টেক্সটাইল নিয়ে গবেষণা করছেন এবং টেক্সটাইলের বিভিন্ন উদ্ভাবনী কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে অবদান রাখছেন। তাদের মধ্যে যোগ্য কাউকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।

তবে অনেকে শিক্ষক দ্বিমত পোষণ করে বলেন, আইনের ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। বুটেক্সের উপাচার্য হতে হলে টেক্সটাইল ব্যাগ্রাউন্ট লাগবে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব অধ্যাপক যাদের স্নাতক পর্যায়ে টেক্সটাইল ছিল না, তারা উপাচার্য হতে পারবে না।