ক্যাম্পাস

জাবিতে ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মৃতিচারণ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানের দুই মাস পূর্তি উপলক্ষে ‘যারা জীর্ণ জাতির বুকে জাগালো আশা’ শিরোনামে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (৫ অক্টোবর) বিকাল চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠিত হয়। নাকিব আল মাহমুদ অর্ণবের সঞ্চলনায় অনুষ্ঠানে চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানে আহত ও শহিদ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আন্দোলনে শহিদ শুভ শীলের ভাই বলেন, আমার ভাই ২০ জুলাই অফিসে কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার পথে সাভার অন্ধ মার্কেটের সামনে পুলিশ পেটে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে। তিনদিন আইসিইউতে থাকার পর ২৩ জুলাই তার মৃত্যু হয়। বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার নিয়ে তার চিকিৎসার খরচ জোগান দেই, সেসব টাকা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। এ পর্যন্ত অনেকে আশ্বাস দিলেও কেউ একটা টাকাও দিয়ে সাহায্য করেনি। তাই আমি সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, যেসব ভাইয়েরা আন্দোলনে শহিদ ও আহত হয়েছেন, তাদের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে যেন সাহায্য করা হয়। আর আমার ভাইয়ের হত্যায় যারা জড়িত ছিল, তাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়।

সাভারের আহত শিক্ষার্থী হাসান বলেন, সকাল ১১টার সময় আমার পায়ে গুলি লাগে। এরপর গণস্বাস্থ্যে নেওয়া হয়। সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রক্তপাত হয়। আমার ভাইকে পিছন থেকে গুলি করে। তার বুক ছিদ্র হয়ে গুলি বের হয়ে যায়। আমার শহিদ ভাইয়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন।

এক আহতের মা আছিয়া বেগম বলেন, আমি একজন গার্মেন্টস কর্মী। আমার ছেলে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ। আমার ছেলে আমাকে বলতো, মা তোমাকে আর গার্মেন্টেসে চাকরি করতে দিব না। অথচ আজ আমার ছেলে গুলিবিদ্ধ। আমার ছেলের সুস্থতার জন্য সরকারের কাছে সাহায্যের অনুরোধ জানাই।

আন্দোলনে আহত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিল হোসেন বলেন, যারা আহত-নিহত হয়েছেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাদের পাশে দাঁড়ানো। তারা যেন অযত্নে, চিকিৎসার অভাবে মারা না যায়। তাহলে আমাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে। 

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রব বলেন, এখানে আমরা এতক্ষণ সাভার, ধামরাই এলাকার শহিদদের পরিবার ও আহতদের কথা শুনেছি, তাদের ডিটেইলস সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কি করতে পারি, তা নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে চাই। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের মাধ্যমে আমরা আজ দুই মাস পূর্তি উদযাপন করছি এবং সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কথা বলতে পারছি, তা শুধু সম্ভব হয়েছে জুলাই বিপ্লবের শহিদ ও আহতদের রক্তের জন্য। শহিদদের আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করার জন্য বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের বলতে চাই, যারা আহত ও নিহত হয়েছেন তাদের মেডিক্যাল প্রেসক্রিপশনগুলো সংগ্রহ করে যেন ডাটাবেজ তৈরি করা হয় এবং সব পর্যায় থেকে তাদের যেন সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হয়।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, শহিদের রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে। অথচ এখন কিছু গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টায় ব্যস্ত রয়েছে। যারা এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের কাছে আমার অনুরোধ- এ আন্দোলনকে আপনারা বৃথা যেতে দিবেন না। এ আন্দোলন যদি সফল না হয়, তাহলে আহত ও শহিদের পরিবার আমাদের কখনো ক্ষমা করবে না।