ক্যাম্পাস

রঙ-তুলিতে ব্যস্ত পুরান ঢাকার প্রতিমা শিল্পীরা

শিশির ভেজা ভোর আর শরতের কাশফুল জানান দিচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসবের আগমনী বার্তা। বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়া শুরু হয় ষষ্ঠীর আগে থেকেই। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজার প্রতিমা বানানোর কাজগুলোও শেষের দিকে। শেষ সময়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন পুরাণ ঢাকার প্রতিমা বানানোর কারিগর মৃৎশিল্পীরা।

সরেজমিনে পুরান ঢাকার মণ্ডপগুলো ঘুরে দেখা যায়, কাদা-মাটি, বাঁশ, খড়, সুতলি দিয়ে শৈল্পিক ছোঁয়ায় তিলতিল করে গড়ে তোলা হয়েছে দেবীদুর্গার প্রতিমা। কারিগররা প্রতিমা তৈরিতে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন। নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে দেবীদুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, অসুরসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা।

বাংলাবাজারের নর্থব্রুক হল রোডের জমিদার বাড়িতে দুর্গার বাহকসহ প্রতিমার শাড়ি ও অলংকার পরানোর কাজও ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। আলোকসজ্জা ও রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো হচ্ছে প্রতিটি মণ্ডপ। তাছাড়া প্রতিমাগুলোকে সুন্দর করতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন প্রতিমা শিল্পীরা।

মৃৎশিল্পীদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় প্রতিমাগুলে হয়ে উঠছে অপরূপ। খড় আর কাদা মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরি শেষে এখন চলছে প্রলেপ ও রঙের কাজ।

মৃৎশিল্পীরা জানান, প্রতি বছরই তারা অধীর আগ্রহে দেবীদুর্গার প্রতিমা তৈরির অপেক্ষায় থাকেন। শুধু জীবিকার জন্যই নয়। দেবীদুর্গার প্রতিমা তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তাদের ধর্মীয় অনুভূতি, ভক্তি আর ভালোবাসা। দুর্গা মাকে মায়ের মতোই তৈরি করা হচ্ছে।

জানা গেছে, রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি পূজা উদযাপিত হয় পুরান ঢাকায়। এবার শাঁখারিবাজার, তাঁতীবাজার, লক্ষ্মীবাজার, সূত্রাপুর, শ্যামবাজার, প্যারীদাস রোড, কলতাবাজার, মুরগিটোলা, মদনমোহন দাস লেন, বাংলাবাজার গোয়ারনগর, জমিদারবাড়ী, গেণ্ডারিয়া, ডালপট্টি এলাকার অলিগলিতে পূজার আয়োজন করা হবে। ছোট-বড় বিভিন্ন মণ্ডপে শুরু হয়েছে মঞ্চ, প্যান্ডেল, তোরণ ও প্রতিমা নির্মাণের কাজ।

শাঁখারিবাজারের প্রতিমা শিল্পী সুশীল নন্দীর মৃত্যুর পর কাজ করছেন এবার তার মেয়ে অনামিকা নন্দী। তিনি ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজে অনার্সে পড়াশোনা করছেন।

অনামিকা নন্দী রাইজিংবিডিকে বলেন, বাবার কাছ থেকে এ কাজ দেখে ও শিখে আসছি। বাবার মৃত্যুর পর সেই স্মৃতিকে রক্ষা করতেই প্রতিমা বানানোর কাজ করি। প্রতিমাগুলো প্রাথমিকভাবে খড়, কাঠ, বাঁশ, সুতা, তারকাটার প্রয়োজন হয়। মূর্তি শুকানোর পর রঙ করা হয়।

তিনি বলেন, এবার দুটি বড় প্রতিমা অর্ডার আছে। এগুলো যথাক্রমে ৮০ হাজার ও ৬০ হাজার টাকা করে বিক্রি করা হবে। তবে প্রতিমাগুলোতে লাভ খুব সীমিত হয়ে থাকে। আর সারাবছর চাহিদা অনুযায়ী দোকানে আমাদের প্রতিমা বানানোর কাজ চলে।