ক্যাম্পাস

পরিবহন সেবা নিয়ে অসন্তুষ্ট কুবি শিক্ষার্থীরা

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) প্রায় সাড়ে ৭ হাজার নিয়মিত শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে মাত্র ১৪টি বাস। বেপরোয়া ড্রাইভিং, চালক সংকট, আসনের স্বল্পতা, বৃষ্টির পানিতে ভিজে যাওয়া, মাঝ রাস্তায় বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে যাতায়াতসহ বিভিন্ন কারণে পরিবহন সেবা নিয়ে চরম অসন্তুষ্ট শিক্ষার্থীরা। এসব সমস্যা যেন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। 

পরিবহন পুলের তথ্যমতে, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের কাজে মোট ১৪টি বাসের মধ্যে ছয়টি নীলবাস এবং আটটি লালবাস রয়েছে কুবিতে। আরও দুটি নীল বাসে চালক না থাকায় একই সময়ে সার্ভিস দিতে পারছে না।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নীল বাসের তুলনায় লাল বাসগুলোতে সমস্যা বেশি। ছাদের সমস্যা থাকায় হালকা বৃষ্টি হলেই ভেতরে পানি ঢুকে যায়। এছাড়া পাখা নষ্ট থাকায় গরমের সময় চলাচল করতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। নীল বাসের চালকরা অনেক স্পিডে বাস চালান। আবার মাঝ রাস্তায় লাল বাসের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে বিভিন্ন সময় ক্লাস-পরীক্ষায় সময় মতো আসতেও ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের।

জানা গেছে, ২০১৮ সালে অনুমোদিত ১ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প থেকে মোট পাঁচটি নীল বাস বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেখান থেকে ২০২০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ৩৬ লাখ টাকা করে মোট ১ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনটি নীল বাস কেনা হয়। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্তে আরও দুটি নীল বাস ক্রয় করা হয়। তবুও রয়েছে বাস সংকট। 

পরিবহন সেবা নিয়ে অসন্তুোষ প্রকাশ করে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আকরাম মিয়া বলেন, লাল বাসগুলোতে মাঝে মধ্যে বৃষ্টির সময় পানি ঢুকে। আবার ফ্যানগুলোও ঠিকমতো চলে না। বাসভর্তি শিক্ষার্থীদের জন্য এটা ভোগান্তির। এটা আরও বাড়ে যদি মাঝ রাস্তায় বাস বন্ধ হয়ে যায়। ভাড়া যেহেতু দিচ্ছেই, ভালো মানের বাসই আনুক।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নাজনীন নৈশী বলেন, কয়েকদিন আগে নীল বাসের ধাক্কায় এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। ক্যাম্পাসের বাস দিয়ে আমাদের নিয়মিত যাতায়াত করতে হয়। বাসে সিট না পেয়ে মেয়ে শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে থাকে, এটা অনেক কষ্টদায়ক। ক্যাম্পাসের বাসগুলোতে যথেষ্ট যান্ত্রিক ত্রুটি রয়েছে। এ সব দিকে প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত।

এ সব সমস্যার কারণ জানতে চাইলে পরিবহন পুলের সেকশন অফিসার মো. জাহিদুল আলম বলেন, লাল বাসের যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, তা পুরোপুরি বাসের সাময়িক যান্ত্রিক ত্রুটি। বাসের যান্ত্রিক ত্রুটি হতেই পারে। পরে অবশ্য ২০ মিনিটের মধ্যে তা ঠিকও হয়ে যায়। যদিও এজন্য শিক্ষার্থীদের ভুগতে হয়েছে। এ ভোগান্তি কমাতেই আমরা প্রতিনিয়ত ডিপোর সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছি।

লাল বাসগুলোতেই সমস্যা বেশি কেন- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের নীল বাসের ক্ষেত্রে আমরা প্রতিনিয়ত চেক করেই মেরামতে পাঠিয়ে দেই। কিন্তু ডিপোর বাসগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টা তো তাদের নিজস্ব বিষয়। বাস নষ্ট হলে বা সমস্যা থাকলে তাদের থেকে এক্সট্রা বাস দিয়েই আমাদের সার্ভিস দিতে হবে, এমন কথাও আছে। তারপরও আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি লাল বাসগুলোর মান বাড়ানোর। আমার মনে হয় আগের চেয়ে কিছুটা মান বেড়েছে। আমরা ক্রমান্বয়ে আরও উন্নত করার চেষ্টা করছি।

এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা বিআরটিসির ডিপোর ম্যানেজার আবদুল কাদের জিলানী বলেন, গাড়িগুলো তো ২০১১ সাল থেকে চলছে। সার্ভিসের কোনো কাজ আমি বাকী রাখি না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যখনই বাসের সমস্যার কথা জানিয়েছে, আমরা দ্রুত সমাধান করে দিয়েছি। আমাদের বাজেট অনুযায়ী আমরা গাড়িগুলো মেরামত করে থাকি। যখনই বাসগুলোর সমস্যা হয় আমরা সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করে থাকি। বাসগুলো যেহেতু একদিনেই তিন থেকে চারবার বা তার চেয়েও বেশি রাউন্ড দেয়, এজন্য মাঝেমধ্যে যান্ত্রিক সমস্যায় পড়তে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, শিক্ষার্থীদের তুলনায় আমাদের এখানে বাসের সংখ্যা কম। বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। পাশাপাশি বিআরটিসির সঙ্গে কথা বলে আরও ভালো মানের বাসের ব্যবস্থা করা যায় কিনা, সেই উদ্যোগও নিব।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, নীল বাসে দুজন চালক সংকট রয়েছে। চালকের জন্য দুটি বাস অফ থাকবে, তা হতে পারে না। আমি পরিবহন পুলের সঙ্গে কথা বলব, শিক্ষার্থীদের পরিবহন সেবায় যেন বিঘ্ন না ঘটে।